Advertisement
১১ মে ২০২৪
coronavirus

Teaching: সকালে ধান রুয়ে বিকেলে গ্রামের খুদেদের পড়াচ্ছে দিদিরা

পাড়ার মেয়েদের উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরা।

খুদেদের পড়াচ্ছে দিদিরা।

খুদেদের পড়াচ্ছে দিদিরা। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

বই খাতা নিয়ে স্কুলের পথে হেঁটে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। করোনার কোপে এমন দৃশ্য প্রায় ভুলতে বসার জোগাড়। ব্যতিক্রম দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের ঘোগা গ্রাম। সেখানে এই ছবি দেখা যাচ্ছে। তবে সকালে নয়, বিকেলে।

বিকেল চারটে বাজলেই বই-খাতা ভর্তি ব্যাগ ও বসার আসন নিয়ে স্কুলের পথে হেঁটে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। ঘোষা প্রাথমিক স্কুল চত্বরেই প্রতিদিন বিকালে বসছে ‘দিদিদের পাঠশালা’। আট দিদি পড়াশুনা দেখিয়ে দিচ্ছেন ৩০-৩৫ জন খুদে পড়ুয়াকে। অবশ্যই কোভিড বিধি মেনে। মাস্ক থাকছেই। ‘দিদিদের’ মধ্যে সরকারি নার্সিং কলেজ থেকে জিএমএম ট্রেনিং শেষ করা পিউ টুডু বা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া রুমা টুডুরা বলছেন, ‘‘যে সব শিশু গৃহশিক্ষকের সাহায্য পাচ্ছে, তারা ছাড়া সকলেই প্রায় পড়াশোনা ভুলতে বসেছে। বিশেষ করে আমাদের মতো প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের কেউ দেখানোর নেই। তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে এসেছি।’’

এখন ধান রোওয়ার সময় বলে সকালে পরিজনদের চাষের কাজে সাহায্য করতে যান ওই আদিবাসী তরুণীরা। সেখান থেকে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে ছোটদের পড়ান তাঁরা। প্রান্তিক পরিবারের ওই তরুণীরা জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের প্রত্যেকেই মাঠে ধান পুঁততে যাই। তারপর বাড়ি ফিরে বিশ্রাম করে এখানে আসি। ঘণ্টা দুয়েক খুব ভাল করে কেটে যায়।’’

করোনা কালে যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা মানছেন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব মহলই। দীর্ঘদিন ধরে বই খাতার সঙ্গে যোগ না থাকায় প্রান্তিক পরিবারের খুদে পড়ুয়ারা ভুলতে বসেছে পড়াশোনা। এই বিষয়টি উপলব্ধি করে নিজেদের গ্রামের খুদে পড়ুয়াদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন গ্রামের দিদিরা। তাদেরই দু’জন, এ বারের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ রুবি হাঁসদা, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী লতিকা টুডুরা বলছে, ‘‘স্কুল বন্ধের কী যন্ত্রণা আমরা জানি। ওদের যদি পড়াশোনার সঙ্গে জুড়ে রাখতে পারি সেটাই বড় পাওনা হবে।’’

ঘোগা গ্রামের মূলত আদিবাসী পাড়া থেকেই পড়ুয়ারা আসছে। বেশির ভাগই প্রাথমিকের পড়ুয়া। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রয়েছে কয়েকজন। তাদের পড়াশোনা বুঝিয়ে দিচ্ছে দিদিরা। তৃতীয় শ্রেণির বিশ্বজিৎ টুডু, চতুর্থ শ্রেণির লক্ষ্মী মুর্মু ও দ্বিতীয় শ্রেণির সুমন্ত টুডুরা বেশ উৎসাহ নিয়েই ক্লাসে আসছে। যারা পড়াশোনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল, এখন তারাই দিদিদের পাঠশালা আসছে খুশি মনে। পাড়ার মেয়েদের উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাচ্চাগুলো সারাদিনই খেলে বেড়াচ্ছিল। ওদের জন্যই এখন একটু পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE