অধীর অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার থেকে টানা তিন দিন নির্জলা থাকার পরে বুধবার বিকেলে কিছু সময়ের জন্য জল পেয়েছিলেন ঝালদা পুর-শহরের বাসিন্দারা। পুরসভা বলেছিল, সরবরাহ লাইনের গণ্ডগোল মেরামত হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পানীয় জলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু, এ দিনও নির্জলা রইল ঝালদা!
সকালে জল মিলবে জেনে ভোরবেলা থেকেই পাড়ায় পাড়ায় কলের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন পুরুষ-মহিলারা। অপেক্ষাই সার। এক ফোঁটাও জল আসেনি কলে। বুধবার বিকেলে কিছু সময়ের জন্য জল মেলার পরে আশা জেগেছিল, এ দিন জল মিলবে। কিন্তু তাঁদের হতাশ হতে হয়। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নন্দলাল বাগদি বলেন, ‘‘সেই সোমবার থেকে পানীয় জল নেই। ভেবেছিলাম বৃহস্পতিবার থেকে জল পাব। কিন্তু কোথায় কী! ট্যাঙ্কার দিয়েও জল দেওয়া হচ্ছে না। কবে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে কে জানে। জল না পেলে চলবে কী করে?’’ তিনি জানান, এই ক’দিন রোজ দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল মোড় থেকে জল নিয়ে আসতে হচ্ছে। পুরশহরের আরেক বাসিন্দা হেমন্ত সূত্রধরের কথায়, ‘‘জলের অভাবে কী যে অসুবিধে হচ্ছে, বলে বোঝানো যাবে না। বুধবার অল্প জল পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই জল খাওয়ার মতো ছিল না।’’ বেলাডি গ্রামের বাসিন্দা রামলাল মাহাতো, মহকুদর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ মাহাতো-সহ কয়েক জন, যাঁরা রাস্তার ধারের কল থেকে বিভিন্ন খাবারের দোকানে বা বাড়িতে জল দেওয়ার কাজ করেন, তাঁদেরও নলকূপ বা দূরের কল থেকে জল নিয়ে পৌঁছতে হচ্ছে। রামলাল বলেন, ‘‘নলকূপ থেকে পাম্প করে করে জল তুলতে হচ্ছে। খুব খাটনি হচ্ছে।’’
টানা চার দিন পানীয় জল সরবরাহে ব্যর্থ ঝালদা পুরসভার বিরুদ্ধে পানীয় জলের সমস্যাটিকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান, কংগ্রেসের মধুসূদন কয়াল। তিনি বলেন, ‘‘ঝালদায় এমনিতেই জলের সমস্যা। যান্ত্রিক ত্রুটির দরুণ সরবরাহে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে তার সমাধান তো করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, তিনি যখন পুরপ্রধান ছিলেন, তখন এ রকম সমস্যা হলে মাঝরাত পর্যন্ত জলাধারে যেখানে পাম্পিং ষ্টেশন রয়েছে, সেখানে হাজির থেকে কাজ করিয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এক দিকে টানা জল নেই, অন্য দিকে তখন বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজনে ব্যস্ত শাসক দলের নেতা-কর্মীরা।’’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল ঝালদায়। পানীয় জলের প্রশ্নে তাঁরাও যে অস্বস্তিতে পড়েছেন তা মেনে নিয়ে তৃণমূলের শহর কমিটির নেতা সোমনাথ কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা নিচুতলায় কাজ করি, তাঁদেরই মানুষজনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আমি পুরপ্রধানকে বলেছি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’ ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবাল শুধু জানিয়েছেন, জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা ত্রুটি সারিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করার যাথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে কখন জল মিলবে, তা নিশ্চিত করে তিনি জানাতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy