Advertisement
E-Paper

স্কুলের হেঁসেলেও গ্যাসের ভাবনা

পড়ুয়াদের চোখে জল। শিক্ষক বকেননি। বেশ পড়া চলছিল, হঠাৎ মিড-ডে মিল রান্নার ঘর থেকে কাঠের উনুনের ধোঁয়া ক্লাসঘরে ঢুকে সবাইকে কাঁদিয়ে ছাড়ল। পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে এই ছবিটা বেশ চেনা। সম্প্রতি প্রশাসন এবং স্কুল শিক্ষা দফতর উদ্যোগী হয়েছে তার বদল ঘটাতে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩১

পড়ুয়াদের চোখে জল। শিক্ষক বকেননি। বেশ পড়া চলছিল, হঠাৎ মিড-ডে মিল রান্নার ঘর থেকে কাঠের উনুনের ধোঁয়া ক্লাসঘরে ঢুকে সবাইকে কাঁদিয়ে ছাড়ল। পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে এই ছবিটা বেশ চেনা। সম্প্রতি প্রশাসন এবং স্কুল শিক্ষা দফতর উদ্যোগী হয়েছে তার বদল ঘটাতে। হেঁসেলে আসতে চলেছে এলপিজি-র সিলিন্ডার।

পুরুলিয়ার মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্কুল শিক্ষা দফতর ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রকল্প শুরু করার মতো টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে। প্রতিদিনই অনেক স্কুল গ্যাসের জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে। নভেম্বরের গোড়াতেই এরকম দেড় হাজার আবেদন জমা পড়ে গিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েলের দফতরে। পুরুলিয়া জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটু একটু করে সমস্ত স্কুলেই এলপিজি ব্যবহার চালু করা হবে।’’

মিড-ডে মিলের জন্য রান্নার গ্যাস ব্যবহার করার প্রস্তাব আগেই দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। রাজ্যের কয়েকটি এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে ছিল পুরুলিয়া। এই ব্যাপারে প্রশাসনের অন্দরেই উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছিল। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, মূলত রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের প্রস্তাব পাওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে ন়ড়াচড়া শুরু হয়। রঘুনাথপুর মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান, বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ খবর করার সময়ে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য পর্যাপ্ত কাঠের অভাবের বিষয়টি সামনে উঠে আসে। তার পরেই এলপিজি ব্যবহার নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনা করে সেটি জেলায় পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসন অন্য বিভিন্ন ব্লকেও এই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়। অক্টোবরে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা হয়। স্থির হয়েছে, যে স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা পঞ্চাশের কম, সেখানে আপাতত কাঠ দিয়েই রান্না চলবে। পঞ্চাশের বেশি পড়ুয়া থাকলে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করা হবে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এর জন্য ইচ্ছুক স্কুলগুলিকে নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করে শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে ওই ফর্ম পাঠানো হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে থেকে উদ্যোগী হওয়ায় ইতিমধ্যেই রঘুনাথপুর মহকুমার প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক, এমএসকে, এসএসকে মিলিয়ে কমবেশি ছ’শো স্কুল গ্যাসের সংযোগ চেয়ে ফর্ম জমা করেছে। ওই স্কুলগুলিতে আইওসি নিকটবর্তী ডিলারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করবে। সিলিন্ডার ও আভেনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু টাকা আইওসিকে দিতে হবে। তবে তার জন্য স্কুলের কোনও খরচ হওয়ার কথা নয়। নীলাঞ্জনবাবু জানান, রান্নার গ্যাসের সংযোগ এবং পরিকাঠামো তৈরির খরচ বাবদ স্কুল পিছু দশ হাজার টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বস্তুত, রান্নায় গ্যাসের ব্যাবহার শুরু হলে মিড-ডে মিলের খরচ কমবে বলে দাবি প্রশাসনের। কাশীপুরের দু’টি প্রাথমিক স্কুল— তালাজুড়ি ও ইন্দ্রবিল, নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গত কয়েক বছর ধরে বানিজ্যিক এলপিজি-তে মিড-ডে মিল রান্না করে আসছে। দু’টি স্কুলের কর্তৃপক্ষই দাবি করেছে, এর ফলে কাঠের তুলনায় অনেক কম খরচ হচ্ছে। তালাজুড়ি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা দে জানান, স্কুলের ১৬৬ জন ছাত্রের জন্য রান্না মাসে দু’টি সিলিন্ডারেই হয়ে যায়। বানিজ্যিক দামে এলপিজি কেনায় দু’টি সিলিন্ডারের জন্য মাসে তাঁদের খরচ হয় ২,২০০ টাকা। অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘আগে প্রতি মাসে কাঠ কিনতেই খরচ হয়ে যেত সাড়ে তিন হাজার টাকা। খরচ কমায় ওই টাকা দিয়ে মিড-ডে মিলে একটু ভাল সব্জি বা ডিম দেওয়ার চেষ্টা করি।’’

ইন্দ্রবিল প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ রজক জানান, আগে রোজ বিপুল পরিমাণ কাঠের জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হতো। এমনও হয়েছে, বেশি টাকা দিয়েও কাঠ মেলেনি। হেঁসেলে এলপিজি এনে সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে। পরিবেশও স্বাস্থ্যকর হয়েছে। এই উদাহরণ সামনে রেখেই আপাতত পুরো জেলার জন্য ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলিও এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করছেন। তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষা সেলের আদ্রার সভাপতি তথা গগনবাইদ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সিদ্ধার্থ পাল, এসটিইএর সহ-সভাপতি তথা লালপুর যোগদা সৎসঙ্গ ক্ষীরোদাময়ী হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘কাঠে মিড-ডে মিল রান্নায় অনেক সমস্যা হয়। রান্নার গ্যাস ব্যবহার করা হলে মুশকিল অনেকটাই কমবে।’’

cooking gas school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy