Advertisement
E-Paper

হোয়াটস অ্যাপে খবর পেয়ে ছাত্রকে রক্তদান

বছর দু’য়েক আগে ছেলের ‘অ্যাকিউট লিউকোমিয়া’ ধরা পড়ায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল বাবার মাথায়। কারণ ওই রোগের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁর ছিল না। সে যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছেলের স্কুলেরই শিক্ষকমশাইরা। তাঁরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০২:২০
অপেক্ষা: রক্ত দিতে এসেছেন শিক্ষকরা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অপেক্ষা: রক্ত দিতে এসেছেন শিক্ষকরা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

বছর দু’য়েক আগে ছেলের ‘অ্যাকিউট লিউকোমিয়া’ ধরা পড়ায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল বাবার মাথায়। কারণ ওই রোগের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁর ছিল না। সে যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছেলের স্কুলেরই শিক্ষকমশাইরা। তাঁরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্থানীয় একটি দুর্গা পুজো কমিটিও তাঁদের আড়ম্বর ছেঁটে সেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। এ বারে পাশে দাঁড়ালেন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা। রক্ত দিয়ে সুস্থ করলেন আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শুভজিৎ দাসকে।

স্কুল এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে আমোদপুরেই বাসিন্দা শুভজিতের ওই রোগ ধরা পড়ে। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন তাঁর বাবা পেশায় ঘরামি জনার্দ্দন দাস। তখন অন্যান্য ছাত্র এবং প্রাক্তনীদের নিয়ে স্কুলের শিক্ষকরা স্থানীয় বাজার এবং বিভিন্ন স্কুলে চাঁদা তুলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ওই বছরই দুর্গা পুজোর আড়ম্বর ছেঁটে পাশে দাঁড়ান স্থানীয় সুকান্ত ক্লাবের কর্মকর্তারাও। পরবর্তীকালে কালে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সাহায্য মেলে। চিকিৎসায় অনেকেটাই সুস্থ হয়ে স্কুল যাতায়াতও শুরু করেছিল শুভ। কিন্তু শুক্রবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তাঁকে ভর্তি করানো হয় সিউড়ি সদর হাসপাতালে। রাতের দিকে চিকিৎসকরা জানান, রক্ত দিতে হবে শুভকে। তারপরই কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে জনার্দ্দনবাবুর মাথায়। শুভজিতের পরিবারের দাবি, ব্লাড ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জনার্দ্দনবাবু জানতে পারেন সেখানে প্রয়োজনীয় এ পজিটিভ রক্ত নেই! তিনি তখন ফোনে সমস্যার কথা জানান আমোদপুর স্কুলেরই শিক্ষক প্রসেঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়কে। প্রসেঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘জানার পরেই আমাদের শিক্ষকদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ‘নতুন সকাল’ এ সমস্যার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠায়। তাতেই সাড়া মেলে।’’

রাতেই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা পৌঁচ্ছে যান হাসপাতালে। তার মধ্যে রক্ত দেন নলহাটির গোঁসাইপুর হাইস্কুলের শিক্ষক সুশান্ত মণ্ডল। প্রয়োজনে আরও রক্ত দেওয়ার জন্য হাজির রয়েছেন ডাবুক হাইস্কুলের শিক্ষক দেবাশীষ নায়েক, প্রতাপপুর হাইস্কুলের উল্লাস দাস, কাবিলপুর জুনিয়ার হাইস্কুলের সোমনাথ ধাবক, মাজিগ্রাম হাইস্কুলের অমিত পাল-সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা জানান, বিভিন্ন সময় আমাদেরও ওইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমস্যাটা আমরা জানি। তাই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে খবরটা পাওয়ার পরই হাসপাতালে ছুটেছি। ছাত্র মানেই সন্তান তুল্য। জনার্দ্দনবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকমশাইদের ধন্যবাদ জানিয়ে খাটো করতে চাই না। সবাই যদি ওই রকম হতেন অনেক অসহায় বাবা দুশ্চিন্তার থেকে মুক্তি পাবেন।’’

‘নতুন সকাল’এর সভাপতি অম্বিকানন্দন মণ্ডল এবং সম্পাদক মানিক দাস জানান, রক্তদাতা ওইসব শিক্ষকদের জন্য সহকর্মী হিসাবে আমরা গর্বিত। অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।

Leukemia WhatsApp WhatsApp group Leukemia patent Blood Donors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy