Advertisement
E-Paper

ফের ডাইনি অপবাদে গ্রামছাড়া

সোমবার অভিযোগ জমা পড়ার পরেই মঙ্গলবার পুলিশ ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলক টুডু নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। বিডিও (পাত্রসায়র) অজয়কুমার সাহা-র আশ্বাস, জরুরি ভিত্তিতে ওই পরিবারটির জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য যা যা করার প্রশাসন তা করবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫১
আতঙ্ক: নির্যাতিতার পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্ক: নির্যাতিতার পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বোরো থানার কুলটাঁড় গ্রামের ছায়া এ বার পাত্রসায়রের বাঁশগাড়াতে। গ্রামের এক ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার জন্য এক বধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পড়শিদের একাংশ তাঁর পরিবারকে হেনস্তা করছে বলে অভিযোগ জমা পড়ল পাত্রসায়র থানা এবং বিডিও-র কাছে। নিগৃহীতা বধূর পরিবার গ্রামের মাতব্বরদের চাপে পড়ে জমি, ধান বিক্রি করে ৮৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়ার পরে নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। শেষে ওই বধূ, তিন সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁর স্বামী।

তবে সোমবার অভিযোগ জমা পড়ার পরেই মঙ্গলবার পুলিশ ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলক টুডু নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। বিডিও (পাত্রসায়র) অজয়কুমার সাহা-র আশ্বাস, জরুরি ভিত্তিতে ওই পরিবারটির জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য যা যা করার প্রশাসন তা করবে।

জঙ্গল ঘেরা ৪০টি আদিবাসী পরিবারের বাস কুশদ্বীপ পঞ্চায়েতের বাঁশগাড়া গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে নিগৃহীতা বধূর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই থতমত মুখে বসে রয়েছেন। বধূর শ্বশুর অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, মাসখানেক আগে গ্রামের এক জন অসুস্থ হন। ঘটনাবশত সেই সময় তাঁর বড় পুত্রবধূরও শরীর খারাপ হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কেন জানি না, গ্রামের কিছু মাতব্বর এসে আমার বড় পুত্রবধূকে ডাইনি অপবাদ দেয়। তারা বোকারোর এক জানগুরুর কাছে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে। গ্রামের ৭৫ জনকে সেখানে নিয়ে যাওয়া এবং খাওয়াদাওয়া করানোর জন্য ৮৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ৯ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে ফিরে আসার পরে জোর করে গ্রামের গোলক টুডু, কেনারাম হেমব্রম, সুবল হেমব্রম ওই টাকা দাবি করে। তিনি সম্বল বলতে দেড় বিঘা জমি, দু’টি গাভী, গোলার ধান— সব বিক্রি করে তাঁদের হাতে ৮৫ হাজার টাকা তুলে দেন।

কিন্তু নির্যাতন তাতেই থেমে যায়নি। ওই বৃদ্ধের অভিযোগ, ‘‘অষ্টমীর দিনে ফের মাতব্বরেরা এসে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে। তা দিতে না পারায় ওরা আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে মারধর করে, বড় পুত্রবধূ ও তার সন্তানদের গালিগালাজ করে। আতঙ্কে ছেলে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালায়।’’ পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, গ্রামের লোকেরা তাঁদের এক ঘরে করে দিয়েছেন। কেউ ভাল করে দু’টো কথা বলেন না। উল্টে রাস্তায় দেখলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। বাড়ির মধ্যেও তাঁরা শান্তিতে নেই। কখন কী ঘটে, সেই ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদেরই এক জন গোলক টুডু এ দিন সকালে গ্রামের মোড়ে জটলায় ছিলেন। অভিযোগের কথা শুনেই তিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। অন্যেরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দাবি করেন, সমস্তই মিথ্যা অভিযোগ। কাউকে মারধর করা হয়নি। টাকাও চাওয়া হয়নি।

তবে বাঁশগাড়া গ্রামেরই তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা বৈদ্যনাথ হাঁসদা বলেন, ‘‘এটা ঠিক, জানগুরুর কাছে যাওয়ার জন্য ওই পরিবারের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে হুমকি বা মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়।’’

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বাঁকুড়া জেলার মুখপাত্র প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘এখনও ডাইনি অপবাদ দিয়ে নির্যাতন কিছু এলাকায় চলছে। প্রশাসন জানালে আমরা ওই গ্রামে সচেতনতার প্রচারে যাব।’’ জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি খাতড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। তাঁদের শীঘ্রই নিজেদের বাড়িতে ফেরানো হবে। প্রশাসন ওই পরিবারটির পাশে রয়েছে।’’

বোরো থানার কুলটাঁড় গ্রামেও এক কলেজ পড়ুয়া তরুণীর অসুস্থতার জন্য গ্রামেরই এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেদের নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছিল। মাসখানেক আগের সেই ঘটনার পরে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এক রাতে গ্রামছাড়া হয়ে যান। গ্রামবাসীদের সচেতন করতে বিজ্ঞান মঞ্চ ও আদিবাসী সমাজের অনেকে আসরে নামেন। ওই তরুণীও হাসপাতালে থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। পুজোর মুখে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী গ্রামে ফেরেন।বাঁশগাড়াও কবে সচেতন হয়, অপেক্ষায় নিগৃহীতার পরিবার।

Witch Crime Superstition বাঁশগাড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy