মারা গেলেন হাতি আক্রান্ত সাঁইথিয়া ভালদা গ্রামের অভয়া মণ্ডল (৫১)। গত বুধবার ভোরবেলা বাড়ির উঠোনে একটি দাঁতাল তাঁকে শুঁড়ে করে তুলে ছুড়ে দেয়। কোমর ও তলপেটে জোর আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সাঁইথিয়া গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিনই বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও হয়। সেখানে চারদিন থাকার পর শনিবার রাত্রি সাড়ে বারোটা নাগাদ মারা যান অভয়াদেবী। পরিবার ও স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিডনিতে জোর আঘাত জনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার ময়নাতদন্তের পরে দেহটি তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে বিকেল পর্যন্ত দেহ এসে পৌঁছায়নি। অভয়াদেবীর স্বামী বিজয় কুমার মণ্ডলের আফশোস, ‘‘একটা ঘেরা দেওয়া বাড়ি ও বাড়ির ভিতর কল থাকলে ওকে এভাবে মরতে হত না!’’
কী হয়েছিল গত বুধবার রাতে?
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ভালদার বাসিন্দা পেশায় ক্ষুদ্র চাষী বিজয় কুমার মণ্ডল ও অভয়াদেবী অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার রাত্রেও সস্ত্রীক বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন। একমাত্র পুত্র অশোক (বাবন) গ্রামের বাইরে রাস্তার ধারের একটি পেট্রলপাম্পে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। তিনি রাত্রের খাবার খেয়ে কাজে চলে যান। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়ে জোৎস্না ও ছোটো কৃষ্ণা মায়ের দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়িতে আছেন। বাড়ি বলতে টিনের ঘেরা ও টালির ছাউনি দেওয়া একচিলতে একটি ঘর।
স্ত্রীকে হারিয়ে বিজয়বাবু বলেন, ‘‘ঘটনার দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ অভয়া ঘুম থেকে ওঠে। বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরে কলে জল আনতে যায়। হাতমুখ ধুয়ে জলের কলসি কাঁখে বাড়ির উঠোনে আসতেই একটি বড় দাঁতাল স্ত্রীকে পিছন থেকে শুঁড়ে করে তুলে ছুড়ে দেয়। আমি অসহায়ের মতো চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ওই দৃশ্য দেখি! কিছুই করতে পারিনি।’’
ডিএফও কল্যান রায় বলেন, ‘‘খুব দুঃখজনক ঘটনা। এ দিন দুঃসংবাদ পাওয়ার পরেই সাঁইথিয়ার রেঞ্জ অফিসার পিনাকী চক্রবর্তী বিজয়বাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন। নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও জানান, ওই গ্রামেরই কার্তিক বসাক নামে আরেক যুবক এখনও বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁরও নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।