Advertisement
E-Paper

খুঁটিতে বেঁধে মার মহিলাদের

মারের চোটে ওঁরা গায়ের গয়না খুলে দিয়ে নিস্তার পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাতেও থামেনি জনতা। চড়, থাপ্পড়, লাথি তো জুটলই। কেড়েও নেওয়া হল কোলের শিশুদেরও! চোর সন্দেহে প্রকাশ্য রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ঘণ্টাখানেক ধরে এ ভাবেই বেদম প্রহার করা হল দুই মহিলাকে। রবিবার সকালে রামপুরহাট শহরের ওই ঘটনায় পুলিশ গণপিটুনিতে জখম ওই দুই মহিলাকে চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু, যারা আইনকে হাতে নিলেন, সেই তাদের বিরুদ্ধেই জেলা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৬
বাসে তাঁর টাকা খোয়া গিয়েছিল। তা চুরির সন্দেহে সহযাত্রী দুই মহিলাকে আটকে রাখলেন এক মহিলা। ফোন করে ডেকে আনলেন  পরিজনদের।

বাসে তাঁর টাকা খোয়া গিয়েছিল। তা চুরির সন্দেহে সহযাত্রী দুই মহিলাকে আটকে রাখলেন এক মহিলা। ফোন করে ডেকে আনলেন পরিজনদের।

মারের চোটে ওঁরা গায়ের গয়না খুলে দিয়ে নিস্তার পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাতেও থামেনি জনতা। চড়, থাপ্পড়, লাথি তো জুটলই। কেড়েও নেওয়া হল কোলের শিশুদেরও!

চোর সন্দেহে প্রকাশ্য রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ঘণ্টাখানেক ধরে এ ভাবেই বেদম প্রহার করা হল দুই মহিলাকে। রবিবার সকালে রামপুরহাট শহরের ওই ঘটনায় পুলিশ গণপিটুনিতে জখম ওই দুই মহিলাকে চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু, যারা আইনকে হাতে নিলেন, সেই তাদের বিরুদ্ধেই জেলা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না। রবিবার এ ভাবেই এক মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী হল রামপুরহাট শহর। রামপুরহাটের ভারপ্রাপ্ত এসডিপিও সমর পাণ্ডে দাবি করেছেন, ওই দুই মহিলার কাছ থেকে চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাই আইন মোতাবেক দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যাঁরা মারল? রামপুরহাট থানার আইসি আবু সেলিমের জবাব, ‘‘আমরা তো মারিনি। জনতা মেরেছে, কাকে গ্রেফতার করব!’’ অন্য দিকে, যারা মার খেয়েছেন, তারা অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এসডিপিও জানিয়েছেন।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

এ দিন সকালে রামপুরহাট থেকে নলহাটিগামী একটি বেসরকারি বাসে চড়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর সঙ্গে তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ও ছিলেন। মহিলার সিটের ধারেই শিশুকোলে নিয়ে ওই দুই মহিলা দাঁড়িয়েছিলেন। বাসটি ভাঁড়শালা পাড়া মোড় স্টপেজ ছাড়ার পরেই ওই মহিলা হঠাৎ-ই আবিষ্কার করেন, তাঁর ম্যানিব্যাগটি চুরি হয়ে গিয়েছে। তাতে ছিল প্রায় ২৭০০ টাকা। মহিলার পরিবারের দাবি, ঠিক তখনই দেখা যায় ওই দুই মহিলা বাস থেকে নেমে যাওয়ার উপক্রম করেছেন। মহিলার বক্তব্য, ‘‘বাসের কিছু যাত্রী আমায় বললেন, ওরা আমার টাকা চুরি করে থাকতে পারেনি। তাই আমরা হাসপাতাল মোড়ে নেমেই ওই দু’জনকে পাকড়াও করি।’’ তখনই দুই মহিলাকে চেপে ধরে একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ চলে। তাঁরা দু’জনেই টাকা চুরির কথা অস্বীকার করেন। এর পরেই মহিলা ফোন করে তাঁর বাড়িতে খবর দেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে মহিলার আরও কিছু পরিজন হাজির হয়ে যান। অভিযোগ, তখনই শুরু হয় চড়, থাপ্পড়। জড়ো হয়ে যায় জনতাও। চুলের মুঠি ধরে দুই মহিলাকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির পাশে নিয়ে আসা হয়। কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয় শিশুদেরও। অন্যদের সঙ্গে মিলে শহরের এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকেও তখন দেখা যায় দড়ি দিয়ে মহিলাদের বিদ্যুতের খুঁটিতে বাঁধার চেষ্টা করছেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে দুই মহিলার উপরে বর্বরোচিত গণপিটুনি চললেও বাধা দিতে কেউ এগিয়ে আসেননি। মারের চোটে মহিলারা এক সময় বলেই ওঠেন, ‘‘দয়া করে আর মারবেন না। চুরি করিনি। আপনারা আমাদের সোনার গয়না নিয়ে নিন। কিন্তু আমাদের ছেড়ে দিন!’’ তাঁদের এই আর্তি শোনেনি উন্মত্ত জনতা। মহিলাদের কাছ থেকে তাঁরা উদ্ধার করতে পারেনি কোনও টাকাও।

পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই মহিলাকে তুলে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সেখানে সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই দুই মহিলা দাবি করেন, তাঁরা সম্পর্কে দুই বোন। বাড়ি বহরমপুরের বানজেটিয়ায়। তাঁরা বলেন, ‘‘কিচ্ছু করিনি। বিনা অপরাধে আমাদের মারল!’’ থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ দাবি করে, দুই মহিলার কাছ থেকে তারা চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার করেছে। চুরির অভিযোগে তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। ধৃতদের প্রকৃত বাড়ি সিউড়িতে বলেও পুলিশের দাবি।

পুলিশকে খবর না দিয়ে এ ভাবে আইন কেন হাতে তুলে নিলেন? ওই মহিলা বাসযাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘চুরির কথা কবুল করাতে গেলে মারতে তো হবেই! ওরা চুরির কথা মানতে চায়ছিল না। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ অন্য দিকে, তিনি কোনও মারধর করেননি বলেই দাবি করেছেন ওই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বরং রাতে তিনি ফোনে দাবি করেন, ‘‘আমিই তো ওদের বাঁচালাম।’’ যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ উল্টো কথাই বলছেন। ফোন ধরেননি রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাব দেননি এসপিও।

Rampurhat Police Nalhati Ornament lamp post theft
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy