Advertisement
১৮ মে ২০২৪

স্টেশনের কাছেই খুন যুবক

রাত দশটা। স্টেশন লাগোয়া বাজার তখনও জমজমাট রেল শহর আদ্রায়। সেই সময় বাজারের অদূরে স্টেশনের সামনে টিকিট কাউন্টারের কাছে খুন হয়ে গেলেন এক যুবক। জনা চারেক দুষ্কৃতী মোটরবাইকে এসে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি করে খুন করল পিন্টু দে (৩৮) নামে ওই যুবককে। পুলিশ জানায়, নিহতের বাড়ি আদ্রার লোয়ার বেনিয়াশোলে। মিনিট খানেকের মধ্যেই দ্রুত ‘অপারেশন’ সেরে মোটরবাইকে চেপেই চম্পট দেয় আততায়ীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৫
Share: Save:

রাত দশটা। স্টেশন লাগোয়া বাজার তখনও জমজমাট রেল শহর আদ্রায়। সেই সময় বাজারের অদূরে স্টেশনের সামনে টিকিট কাউন্টারের কাছে খুন হয়ে গেলেন এক যুবক। জনা চারেক দুষ্কৃতী মোটরবাইকে এসে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি করে খুন করল পিন্টু দে (৩৮) নামে ওই যুবককে।

পুলিশ জানায়, নিহতের বাড়ি আদ্রার লোয়ার বেনিয়াশোলে। মিনিট খানেকের মধ্যেই দ্রুত ‘অপারেশন’ সেরে মোটরবাইকে চেপেই চম্পট দেয় আততায়ীরা। ভরা বাজারে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রেল শহরে। তদন্তে নেমে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে দু’জনকে। তারা আদ্রারই বাসিন্দা। সোমবার ধৃতদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ধৃতেরা অবশ্য দাবি করেছে, তারা ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।

স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা ছিল পিন্টুর। তিনি নিজেও গাড়ি চালাতেন। রবিবার অন্য দিনের মতোই সন্ধ্যায় স্টেশনের সামনের স্ট্যান্ডে গাড়ি লাগিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করেন পিন্টু। তাঁর ভাই সোমেশ বলেন, ‘‘দাদা বলেছিল, রাত পৌনে বারোটা নাগাদ হাওড়া-আদ্রা শিরোমণি প্যাসেঞ্জার থেকে যাত্রী নিয়ে রঘুনাথপুরের খাজুরা গ্রামে যাবে। তাই বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।”

স্টেশনের সামনেই পানের দোকান রয়েছে সোমেশের। রাত দশটা নাগাদ হঠাৎই পরপর গুলির আওয়াজ শুনে এবং লোকমুখে কারও খুন হওয়ার কথা শুনে দোকান ছেড়ে দৌড়ে স্টেশনের কাছে যান সোমেশ। দাদার রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ দেহ পড়ে থাকতে দেখে হতবুদ্ধি হয়ে যান। উপস্থিত লোকজনই পুলিশের সাহায্যে গাড়ি করে পিন্টুকে পাঠান রেল হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছিল ওই যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, খুব কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় রিভলভার থেকে গুলি করা হয়েথে পিন্টুকে। তাঁর শরীরে তিনটি ও মাথায় একটি গুলি লেগেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’টি মোটরবাইকে চার জন আততায়ী এসেছিল। তাদের মুখ রুমালে বাঁধা ছিল। খুনের মিনিট খানেক আগেই আদ্রা থানার একটি টহলদারি গাড়ি স্টেশনের সামনে দিয়ে গিয়েছিল। তার পরেই খুন হন পিন্টু। অন্যান্য দিন স্টেশনের সামনে হাইমাস্ট টাওয়ারের জোরালো আলো জ্বললেও রবিবার রাতে সেই আলো জ্বলেনি। এমনকী বুকিং কাউন্টারের সামনের কয়েকটি আলোও বন্ধ ছিল। ফলে আততায়ীদের মুখ চেনা সম্ভব হয়নি এলাকায় উপস্থিত কারও পক্ষেই। খুনের কিছু পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত। পরে আদ্রায় আসেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সম্ভবত ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে খুন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আরও একবার আদ্রার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক অতীতে আদ্রায় সকালে, দুপুরে, সন্ধ্যায় ভরা বাজারের মধ্যে বা ডিআরএমের কার্যালয়ের সামনে রেলের ঠিকাদারি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে খুনের একাধিক নজির রয়েছে। চুর-ছিনতাইয়ের ঘটনাও অনেকগুলি ঘটেছে। রবিবারের খুনের কারণ নিয়ে বিশদে জানাতে পারেনি পুলিশ।

তবে পুলিশের দাবি, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে আগে চোরাই তামা পাচারের অভিযোগ ছিল। সেই ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছিলেন পিন্টু। যদিও তাঁর দাদা স্বপনের দাবি, ‘‘ভাই ওই ঘটনায় জড়িত ছিল না। ওকে মিথ্যা অভিযোগে ধরেছিল পুলিশ।’’ এসডিপিও বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে ধরা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Adra Pintu Dey hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE