Advertisement
E-Paper

অন্য ‘রোলে’ মুনমুন ফিরলেন খাতড়ায়

মুনমুনকে আগেই দেখেছে খাতড়া। এই মুকুটমণিপুরেই ‘অমরকন্টক’ ছবির শু্যটিংয়ের ফাঁকে। সেই মুনমুনকেই বুধবার সন্ধ্যায় খাতড়া দেখল অন্য নামে আর অন্য ভূমিকায়। মুনমুন নয়, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম শ্রীমতী দেব বর্মা। সেই পরিচয়েই তিনি ভোট চাইতে এলেন খাতড়ার মানুষের কাছে। কয়েক দশক আগে খাতড়ার বাসিন্দারা তাঁকে শ্যুটিং পার্টির কর্মীদের ঘেরাটোপের মধ্যে দূর থেকে দেখেছিলেন।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১১
জঙ্গলমহলে। ছবি: উমাকান্ত ধর।

জঙ্গলমহলে। ছবি: উমাকান্ত ধর।

মুনমুনকে আগেই দেখেছে খাতড়া। এই মুকুটমণিপুরেই ‘অমরকন্টক’ ছবির শু্যটিংয়ের ফাঁকে। সেই মুনমুনকেই বুধবার সন্ধ্যায় খাতড়া দেখল অন্য নামে আর অন্য ভূমিকায়।

মুনমুন নয়, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম শ্রীমতী দেব বর্মা। সেই পরিচয়েই তিনি ভোট চাইতে এলেন খাতড়ার মানুষের কাছে। কয়েক দশক আগে খাতড়ার বাসিন্দারা তাঁকে শ্যুটিং পার্টির কর্মীদের ঘেরাটোপের মধ্যে দূর থেকে দেখেছিলেন। তাঁদের অনেকের বয়েস হয়ে গিয়েছে। তবুও সে দিনের সেই নায়িকা আজ তাঁদের এলাকায় সাংসদ হওয়ার জন্য তাঁদেরই ভোট চাইতে এসেছেন। সে দিনের মুনমুনকে দেখা অনেকেই এ দিন তৃণমূলের কর্মিসভায় ভোটপ্রার্থীকে দেখতে এসেছিলেন।

খাতড়ার বাসিন্দা কার্তিক দাস, গোড়াবাড়ির বাসিন্দা মহাদেব সোরেন বলেন, “তখন আমাদের কম বয়েস। সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন শু্যটিং করতে এসেছেন শুনে আমরা মুকুটমণিপুরে দৌড়েছিলাম। তিন দিন ধরে শু্যটিং চলেছে।” খাতড়ার বাসিন্দা দেবব্রত মিত্র জানান, তিনি লুকিয়ে ক্যামেরায় মুনমুনের ছবি তুলতে গিয়ে ধমক খেয়েছিলেন। পরে অবশ্য অনুমতি নিয়ে তাঁর ছবি তুলেছিলেন। সভা শুরুর আগে এমনই নানা স্মৃতিকথা ঘুরে বেড়াচ্ছিল খাতড়ার কর্মিসভায়।

সকাল থেকেই শহরের চায়ের দোকানে, রাস্তার মোড়ে সুচিত্রা তনয়া মুনমুন কখন আসছে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। খাতড়ায় তাঁকে নিয়ে রোড-শোর পরিকল্পনা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব আগে নিয়েছিলেন। একটি হুডখোলা গাড়িও রাখা হয়েছিল। কিন্ত পরে সেই রোড-শো-র পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। রানিবাঁধ থেকে তাঁর গাড়ি যখন খাতড়ায় ঢোকে তখন ঘড়িতে সাড়ে ৬টা। তার আগে থেকেই রাস্তার দু’ধারে অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। জনতার ভিড় সামলাতে রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবকরাও ছিলেন। সভায় ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ, জেলা কো-চেয়ারম্যান তথা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার প্রমুখ। রাস্তার দু’ধারে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে কখনও হাতজোড় করে নমস্কার, আবার কখনও জনতার হাতনাড়ার প্রত্যুত্তরে সমানে হাত নাড়লেন মহানায়িকার মেয়ে। রাস্তার ধারে বাড়ির মহিলারা উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দিয়ে ফুল ছুঁড়ে স্বাগত জানালেন এই তারকা প্রার্থীকে।

সারাদিন চড়া রোদের মধ্যে রাইপুর ও রানিবাঁধে সভা করার পরে খাতড়ার মঞ্চে তাঁকে কিছুটা হলেও ক্লান্ত লাগছিল। কিন্তু সেই ক্লান্তি ঢাকা পড়ে গিয়েছে ঠোঁটের হাসিতে। খাতড়া গার্লস হাইস্কুলের সামনে এদিন বিকেল থেকেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি ভিড় করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ আগে দেখা অমরকন্টকের নায়িকা কতটা বদলেছেন তা দেখতে এসেছিলেন। আবার কেউ একঝলক দেখতে চেয়েছেন সুচিত্রা সেনের মেয়ে তথা রিয়া রাইমার মাকে। খাতড়া কলেজের ছাত্র সৌগত মাহাতোর আক্ষেপ, “মুনমুন সেনকে দেখলাম। কিন্তু তাঁর দুই নায়িকা মেয়ে রিয়া, রাইমাকে দেখা হল না।” তাঁর মেয়েদের দেখতে জনতা যে উৎসুক সেকথা ইতিমধ্যেই দলের নেতাদের মাধ্যমে মুনমুনের কানেও গিয়েছে। খাতড়ার সভায় মুনমুন তাই বললেন, “মেয়েরা আসতে চেয়েছিল। আমিই বলেছি পরে নিয়ে যাব। পরে ওরা আসবে।” বিরোধীরা বহিরাগত তকমা দিয়ে প্রচার শুরু করেছে বুঝতে পেরেই তারকা প্রার্থী মঞ্চের সামনে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, “প্রজাপতির মতো, কাঠপুতুলের মতো এখানে আসিনি। কাজ করতে এসেছি। আমাকে একটা ভোট দিয়ে কাজের সুযোগ দিন। আমি জিতব এবং আপনারা জিতবেন।”

গৃহবধূ তপতী মণ্ডল বললেন, “ভেবেছিলাম মুনমুনের রোড-শো দেখতে পাব। কিন্তু রোড-শো না হওয়ায় মুনমুনকে আর দেখতে পেলাম না।” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার বলেন, “রাত হয়ে গিয়েছিল। রোড-শো করতে হলে আলোর ব্যবস্থা করতে হত। তাই এ দিন আর করা গেল না। তবে পরে একদিন খাতড়ায় মুনমুনকে নিয়ে রোড-শো করা হবে।”

ভিড়ের চাপে সভা শেষ হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পরে মঞ্চ ছেড়ে গাড়িতে উঠতে পারলেন শ্রীমতী ওরফে মুনমুন। তিনি যখন খাতড়া ছাড়েন, রাস্তায় তখনও গিজগিজ করছে অত্যুৎসাহী মানুষের ভিড়।

lok sabha election moonmoon sen debabrata das khatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy