Advertisement
E-Paper

অনটন পেরিয়ে কৃতী ঝালদার নেহা-স্বাগতা

আর্থিক অনটনে পেট চালানোই দায়। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাও টিকতে পারেনি তাদের দু’জনের জেদের সামনে। প্রতি দিন দাঁতে দাঁতে চেপে লড়ে গিয়েছে নির্মম দারিদ্রের সঙ্গে। এক দিকে, পড়াশো অন্য দিকে, সংসারের কাজে মাকে সাহায্য করা। ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, ফের সে কথা প্রমাণ করেছে ঝালদার নেহা দত্ত এবং স্বাগতা দত্ত। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে দু’জনেই এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:০৯
নেহা ও স্বাগতা।

নেহা ও স্বাগতা।

আর্থিক অনটনে পেট চালানোই দায়। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাও টিকতে পারেনি তাদের দু’জনের জেদের সামনে। প্রতি দিন দাঁতে দাঁতে চেপে লড়ে গিয়েছে নির্মম দারিদ্রের সঙ্গে। এক দিকে, পড়াশো অন্য দিকে, সংসারের কাজে মাকে সাহায্য করা। ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, ফের সে কথা প্রমাণ করেছে ঝালদার নেহা দত্ত এবং স্বাগতা দত্ত। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে দু’জনেই এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

ঝালদা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে সেরা নেহার প্রাপ্ত নম্বর ৪২৯। বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৮৩, কম্পিউটারে ৯৭, দর্শনে ৮১ ও ভূগোলে ৮৮। স্কুলের সেরা পড়ুয়া হলে কী হবে, অবাক করার বিষয় হল, সব ক’টা বিষয়ের বইও নেহা কিনতে পারেনি। ঝালদার ডোমপাড়ার নেহার কথায়, “আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভাল নয়। তাই সব বিষয়ের বই কিনতে পারিনি।” বাবা কালিদাস দত্ত পাড়াতেই একটি ছোট দর্জি দোকান চালান। স্থানীয় বাসিন্দা কিরীটি দত্ত জানালেন, আজকাল সেই দোকান তেমন চলে না। চাহিদা কমেছে। এখন কেউ খুব একটা জামাকাপড় সেলাই করাতে চান না। ফলে ওই একমাত্র দোকান থেকে নেহার বাবার রোজগার অতি সামান্যই। মামাবাড়ি ও স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছ থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছে। সেই সাহায্যটুকু না পেলে, তার পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই আর সম্ভব হত না বলে জানিয়েছে নেহা। ভবিষ্যতে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চাই সে। যদিও আর্থিক অনটন কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লড়াইটা যে খুব একটা সহজ হবে না, তা বুঝতে পেরে চিন্তায় ওই মেধাবী ছাত্রী।

এ দিকে, ঝালদা নামোপাড়ার বাসিন্দা স্বাগতার পারিবারিক ছবিটাও প্রায় এক। অভাবের সংসারে প্রতি দিন অনিশ্চয়তার ছবি। বিজ্ঞান বিভাগে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০৪। বাংলায় ৮২, ইংরেজিতে ৮২, গণিতে ৭৮, পদার্থ বিদ্যায় ৯০, রসায়নে ৭২। তার বাবা স্বপন দত্ত দোকানে কাজ করতেন। বর্তমানে অসুস্থ বলে তাতে ছেদ পড়েছে। একমাত্র দাদা, সে-ও বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য স্বাগত স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। বাধ্য হয়ে টিউশনি নিতে হয় তাকে। স্বাগতা বলে, “বাড়ির অবস্থা তো ভাল নয়। তবে মামাবাড়ি থেকে ও স্কুলের শিক্ষিকা, বিশেষত অপর্ণাদি আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন।” নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার দিকে তাকিয়ে স্বপনবাবু বলছেন, “মেয়ের পড়াশোনায় খুবই আগ্রহ। জানি না এই ভাল ফলের পরেও ওকে আর পড়াতে পারব কিনা।” ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা নিয়েই পড়তে চাই স্বাগতা। কিন্তু পারিবারিক অনটনই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝালদা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দু’টি মেয়েই অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছে। খুবই কষ্ট করে এত দূর পড়াশোনা করেছে। আমরাও সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। ভাল লাগছে ওরা ভাল ফল করেছে।”

jhalda neha swagota
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy