Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অস্তিত্ব রক্ষায় নেপালই ভরসা কংগ্রেসের

পাঁচ বছরে অঙ্কটা পুরো বদলে গিয়েছে। গত ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীর কানে যিনি মন্ত্রণা দিতেন এ বার তিনিই ভোটের প্রার্থী। আর গতবার যিনি কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন এ বার তিনিই তৃণমূল প্রার্থীর মন্ত্রণাদাতা।

রবিবার পুরুলিয়া শহরে চলছে দেওয়াল লেখা (ইনসেটে নেপাল মাহাতো)।—নিজস্ব চিত্র।

রবিবার পুরুলিয়া শহরে চলছে দেওয়াল লেখা (ইনসেটে নেপাল মাহাতো)।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

পাঁচ বছরে অঙ্কটা পুরো বদলে গিয়েছে। গত ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীর কানে যিনি মন্ত্রণা দিতেন এ বার তিনিই ভোটের প্রার্থী। আর গতবার যিনি কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন এ বার তিনিই তৃণমূল প্রার্থীর মন্ত্রণাদাতা।

অঙ্ক কষে অঙ্কের শিক্ষক নেপাল মাহাতোকে কংগ্রেস পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করার পরে ওই কথাই বলছে পুরুলিয়ার রাজনৈতিক মহল।

২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে তত্‌কালীন এআইসিসি সদস্য শান্তিরাম মাহাতো পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। সে বার ভোট-যুদ্ধে তাঁর পাশে সারথীর ভূমিকায় ছিলেন নেপালবাবু। বিধানসভা ভোটের ঢের আগে শিবির বদলে শান্তিরামবাবু তৃণমূলে যোগ দেন। এখন তিনি দলের জেলা সভাপতি, রাজ্যের মন্ত্রীও বটে। এ বার পুরুলিয়া কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন চিকিত্‌সক মৃগাঙ্ক মাহাতো। স্বাভাবিক ভাবে মৃগাঙ্কবাবুর পরামর্শদাতা হিসেবে দলের জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবুকেই দেখা যাবে।

কী বলছেন শান্তিরামবাবু? তিনি বলেন, “মানুষজন তো এ বার কেন্দ্রের পরিবর্তনের জন্য আমাদের ভোট দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালে নেপালবাবু আমার পাশে ছিলে ঠিকই। দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা হওয়ায় ওদের দলের ভোট-কৌশল অনেকটাই জানা। কংগ্রেসকে হারাতে তা কাজে লাগবে।” নেপালবাবুর পাল্টা মুচকি হাসি। তাঁর দাবি, “বিধায়ক হিসেবে সাহেববাঁধের জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি আনার ক্ষেত্রে হোক কিংবা এলাকার উন্নয়নে কাজে জেলার প্রায় সর্বত্র আমার নজর রয়েছে। আদ্রা-ঝাড়গ্রাম রেলপথ চেয়ে দীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার পথযাত্রাও করেছি। মানুষের কাছে আমার পরিচয় আলাদা ভাবে দেওয়ার কিছু নেই। সেটাই আমার প্লাস পয়েন্ট, তা কি অন্য প্রার্থীদের আছে?”

আদ্যন্ত কংগ্রেস ঘরানার নেপালবাবু ২০০১ সাল থেকে বিধানসভার সদস্য। বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ফরওয়ার্ড ব্লকের সত্যরঞ্জন মাহাতোকে হারিয়ে তিনি বিধানসভায় বিধায়ক হিসেবে প্রথম পা রাখেন। তারপর এলাকার পুনর্বিন্যাস হলেও বাঘমুণ্ডি কেন্দ্র থেকেও তাঁকেই ভোটাররা জিতিয়েছেন। গত বিধানসভায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে পুরুলিয়া জেলায় দু’টি বিধায়ক পেয়েছে কংগ্রেস। সেই বাঘমুণ্ডি ও পাড়া বিধানসভা কেন্দ্র পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে। ওই লোকসভা কেন্দ্রের বাকি পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটি তৃণমূলের ও একটি ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেও নেপালবাবুর বাঘমুণ্ডি বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেসের ভোট কমেনি। ওই বিধানসভা এলাকার অন্তগর্ত ঝালদা ১ ও বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস দখল করে। পাড়াতে কংগ্রেস কিছু ভোটার হারিয়েছে।

তবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়া শহরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে এসে নেপালবাবুরা যে বিরাট জনসভা করেন, তাতে দলের নিচুতলার কর্মীরা উত্‌সাহীত হয়ে পড়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে ওই জনসমাবেশ দেখে উত্‌ফুল্ল দেখায় জেলা কংগ্রেস নেতাদের। কিন্তু রাজ্য তো বটেই, সারা দেশেও এখন কংগ্রেসের পক্ষে সুবিধাজনক পরিস্থিতি নয়। এই অবস্থায় পুরুলিয়া কেন্দ্রে নেপালবাবুই কংগ্রেসের যোগ্য প্রার্থী বলে মত দলের নেত-কর্মীদের। তাতে সায় দিয়েছেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের জেলার নেতারাও।

নেপালবাবুর কথায়, “দলের ভীষণ ভাবে চাইলেন বলেই আমি রাজি হলাম। তা ছাড়া দীর্ঘকাল পুরুলিয়া অন্ধকারে পড়ে রয়েছে। সংসদে কেউ সে ভাবে পুরুলিয়ার জন্য লড়াই করেননি। সাংসদ তহবিলের টাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের জন্য দেওয়ার মধ্যে দিয়েই তো একজন সাংসদের কাজ শেষ হয়ে যায় না। আরও কাজ রয়েছে।” ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, “নেপালবাবুকে আমি দীর্ঘদিন ধরেই চিনি। রাজনৈতিক আঙিনার মানুষ। কিন্তু এটা তো রাজনীতির লড়াই। মাটি ছাড়ব না।” ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নরহরি মাহাতো বলেন, “নেপালবাবু পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু আমাদের মানে বামপন্থীদের লড়াই কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধে। লড়াই তাই হবেই।”

নেপালবাবুর কাছে লড়াইটা আরও বড়। তিনি বলছেন, “আমাদের দলের সংসারও তো ভাঙছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। এই ভাঙন ঠেকানোও দরকার। তাই আমি নির্বাচনে নেমে পড়লাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE