Advertisement
E-Paper

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলাচ্ছে রঘুনাথপুরের তসর, রেশম

ক্লাস্টার প্রোজেক্টের হাত ধরে দিন বদলাচ্ছে রঘুনাথপুরের তাঁত শিল্পীদের। আধুনিক নকশায় উন্নত মানের তসর, রেশমের কাপড় বুনছেন শিল্পীরা। বিক্রি হচ্ছে কলকাতায়। সব মিলিয়ে অন্ধকারে ডুবে থাকা রঘুনাথপুরের তসর শিল্পে লেগেছে পুনরুজ্জীবনের ছোঁয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০১:০৪

ক্লাস্টার প্রোজেক্টের হাত ধরে দিন বদলাচ্ছে রঘুনাথপুরের তাঁত শিল্পীদের। আধুনিক নকশায় উন্নত মানের তসর, রেশমের কাপড় বুনছেন শিল্পীরা। বিক্রি হচ্ছে কলকাতায়। সব মিলিয়ে অন্ধকারে ডুবে থাকা রঘুনাথপুরের তসর শিল্পে লেগেছে পুনরুজ্জীবনের ছোঁয়া।

তবে কিছু অভাব-অভিযোগও রয়েছে। ক্লাস্টার প্রোজক্টের কমন ফেসেলিটি সেন্টারে (সিএফসি) বিদ্যুৎ ও জলের মতো পরিকাঠামোর ব্যবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। ফলে সুদিনের মুখ দেখলেও ক্ষোভ রয়েছে তাঁত শিল্পীদের মধ্যে। তাঁদের কথায়, সিএফসি-র পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের কাজে আরও সুবিধা হত। তবে রঘুনাথপুরের প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ক্লাস্টার উন্নয়ন আধিকারিক সুব্রত বসাক সমস্যগুলির দ্রুত সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

রঘুনাথপুর পুরশহরে শতাধিক বছরের পুরনো তসর শিল্পের পুনরুজ্জীবনের লক্ষে বাম আমলেই রাজ্য সরকারের ‘ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও বস্ত্র উন্নয়ন দফতর’ প্রায় আধ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প ধাপে ধাপে শুরু করে। গড়া হয় রঘুনাথপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩১০। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে তাঁতশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে আধুনিক নকশার কাপড় বোনা ও বিপণনের ব্যবস্থা করাই ওই ক্লাস্টারের উদ্দশ্যে।

রঘুনাথপুর শহরের জি ডি ল্যাং হাইস্কুলের পাশে গড়ে উঠেছে কমন ফেসিলিটি সেন্টার। আধুনিক মানের তাঁত যন্ত্র ডোবি, জ্যাকার্ড, ঝাঁপ দেওয়া হয়েছে এই সেন্টারে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর আগে এই সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ ও জলের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। তাই এখানে কাজ শুরু করতে পারেননি শিল্পীরা। তা হলে কী ভাবে কাজ করছে এই ক্লাস্টার প্রকল্প? ক্লাস্টার পরিচালনার কাজ করে তাঁতশিল্পীদের নিয়ে গঠিত ‘রঘুনাথপুর সিল্ক উইভার্স সমবায় সমিতি’। সমিতির সভাপতি ধীরেশ পাল, কোষাধ্যক্ষ জগবন্ধু গুঁই জানান, ক্লাস্টার ছাড়াও সদস্যদের বাড়িতেও তাঁতযন্ত্র দেওয়া হয়েছে। সমিতি কার্যকরী মূলধন দিয়ে কাঁচামাল কিনে সেই দামেই শিল্পীদের বিক্রি করছে। পরে শিল্পীদের বোনা শাড়ি সমিতি কিনে বিক্রি করছে কলকাতার বাজারে। কলকাতায় তন্তুজ, মঞ্জুষা, পশ্চিমবঙ্গ রেশম শিল্পী সমবায় মহাসঙ্ঘ, বিশ্ব বাংলার মতো সংস্থাকে রঘুনাথপুরের শিল্পীদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে এ ভাবে কাজ করেই সমিতির কার্যকরী মূলধন প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।

সমবায়ের ম্যানেজার সমরেশ পাল, ক্লাস্টারের সভাপতি ধীরেশ পাল বলেন, “ক্লাস্টার প্রকল্পের হাত ধরে আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে রঘুনাথপুরের ধুঁকতে থাকা তাঁতশিল্প। আসলে আধুনিক মানের তাঁতযন্ত্র, নকশা এবং সর্বোপরি বিপণনের অভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ছিলাম। ক্লাস্টার প্রকল্প সেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছে।”

তাঁরা জানান, জাতীয় হ্যান্ডলুম উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে এবং পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার বাজার থেকে উন্নত মানের রেশম, তসরগুটি, মটকা, কেটা, বাপ্তা কিনে বিনা লাভেই স্থানীয় তাঁত শিল্পীদের তা বিক্রি করা হচ্ছে। শিল্পীরা উন্নত যন্ত্র ও প্রশিক্ষণ পেয়ে আধুনিক নকশার কাপড় বুনতে পারছেন। কলকাতার বাজারেও সেই কাপড়ের বাজার তৈরি হয়েছে। সেখানে বিপণনের সুযোগ পেয়ে লাভের পরিমাণও বাড়ছে শিল্পীদের। ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের চিরালা, ঝাড়খণ্ডের রাঁচি,ও বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে রঘুনাথপুরের শিল্পীদের ঘুরিয়ে সেখানকার কাজের পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।

তবে সিএফসি পরিকাঠামো গড়ার কাজ এখনও শেষ করতে না পারায় ক্ষোভ রয়েছে তাঁতশিল্পীদের মধ্যে। ধীরেশবাবু, সমরেশবাবু বলেন, “বাজারে এখানকার কাপড়ের চাহিদা ভাল হলেও তাঁতশিল্পীরা বাড়িতে বসে তা শেষ করতে পারছেন না। সিএফসিতে উন্নত যন্ত্রে আরও দ্রুত সেই কাজ করা যাবে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় সিএফসি-র জন্য কেনা দশটি উন্নত তাঁতযন্ত্র চালানো যাচ্ছে না। ফিলে আরও অনেক শিল্পী কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” শিল্পীদের মধ্যে সুনীল দাস, ভোলানাথ দাস, শান্তনু পাল, সন্দীপ পাল বলেন, “সবাই তো আধুনিক তাঁতযন্ত্র পায়নি। সিএফসি চালু হলে সব তাঁতশিল্পী সেখানে কাজ পাবেন। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে সেখানে বসে কাপড় বুনতে পারলে আর্থিক সুরাহা হত।” ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুব্রত বসাক বলেন, “সিএফসিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ব্লক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে। জলের জন্য রঘুনাথপুর পুরসভায় আবেদন করা হয়েছে।”

রঘুনাথপুরের তসর একদা আফগানিস্তানে যেত। ক্লাস্টার প্রকল্পের মাধ্যমে তসর শিল্পের সেই সোনালি দিন ফেরার আশায় বুক বাঁধছে রঘুনাথপুর।

raghunathpur moslin industry modernization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy