Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কংগ্রেস ছেড়ে বিষ্ণুপুরে টিকিট পেলেন সৌমিত্র

রাজনীতির রেখচিত্রে চড়চড় করে উঠছেন সৌমিত্র খাঁ। রাজনীতিতে তাঁর কেরিয়ার সম্পর্কে জেলা রাজনৈতিক মহলের মতে, উল্কার গতিতে এগোচ্ছেন সৌমিত্র। লোকসভা নির্বচনের পরে রাজ্যে যখন তৃণমূল প্রধান শক্তি হিসেবে উঠে আসছে, কংগ্রেসের শক্তি আরও ক্ষীণ, সেই সময়েই যুব কংগ্রেসের বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি করা হয় তাঁকে।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত পাল
বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৩১
Share: Save:

রাজনীতির রেখচিত্রে চড়চড় করে উঠছেন সৌমিত্র খাঁ। রাজনীতিতে তাঁর কেরিয়ার সম্পর্কে জেলা রাজনৈতিক মহলের মতে, উল্কার গতিতে এগোচ্ছেন সৌমিত্র।

লোকসভা নির্বচনের পরে রাজ্যে যখন তৃণমূল প্রধান শক্তি হিসেবে উঠে আসছে, কংগ্রেসের শক্তি আরও ক্ষীণ, সেই সময়েই যুব কংগ্রেসের বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি করা হয় তাঁকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের দুই শক্তঘাঁটি তালড্যাংরা ও কোতুলপুর কংগ্রেসকে ছেড়ে দেয় জোটসঙ্গী তৃণমূল। তালড্যাংরায় কংগ্রেস হারলেও কোতুলপুর কেন্দ্র থেকে সৌমিত্র জেতেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তাঁকে সিপিএম নয় পূর্বতন জোট সঙ্গী তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলতে শোনা গিয়েছিল। সেই সৌমিত্রই কয়েক মাস আগে তৃণমূলে যোগ দেন। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তৃণমূলের অন্দরে শোনা যায়, সৌমিত্রকে এ বার বিষ্ণুপুরের প্রার্থী করা হতে পারে। বুধবার তৃণমূল নেত্রীর মুখেও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের জন্য সৌমিত্র-র নাম শুনে অনেকেই তাই অবাক হননি। অনেকে আবার সৌমিত্র-র এই উত্থানে অবাকও হয়েছেন।

সৌমিত্র খাঁ (বাঁ দিকে) ও মৃগাঙ্ক মাহাতো।

পাঁচমুড়া কলেজের ছাত্র সৌমিত্রর বয়েস ৩৩। ২০০৬ সালে যুব কংগ্রেসের গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক সম্পাদক হন তিনি। ২০০৮ সালে যুব কংগ্রেসের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক। তারপর তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণ শুরু হয়। ২০১১ সালে কোতুলপুর বিধানসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন তিনি। তারপরে ২০১৪ সালে বিধায়ক পদ ছেড়ে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সৌমিত্র বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের উন্নয়নে যা করেছেন, তা সারা দেশের কাছে মডেল। তাই তাঁর আদর্শে কাজ করার জন্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। তাঁর ইচ্ছাতেই এ বার সাংসদ হয়ে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের উন্নতি করতে চাই।” তাঁর প্রতিশ্রুতি, এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা, রেলপথের উন্নয়ন, বিষ্ণুপুরে মহিলা কলেজ স্থাপন-- যে কাজগুলি বাম সাংসদরা গত ৩৫ বছরে করতে পারেনি, আমরা তাই করে দেখাতে চাই।”

পুরুলিয়াতেও ক’দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল মাহাতো পদবির কাউকেই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হচে চলেছে। সেই হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে তাঁর নামও ঘুরছিল। বুধবার দুপুরে দেখা গেল, সেই মৃগাঙ্ক মাহাতোকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি এ বার পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই চিকিৎসক আপাদমস্তক ভদ্রলোক ইমেজের। তাঁর পরিবারের সঙ্গে রাজনীতির যোগ ভাল থাকলেও তৃণমূলের প্রথম সারিতে তিনি কখনই ছিলেন না। তাই তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে দ লের অনেক কর্মীও কিছুটা অবাক হয়েছেন। তবে অবামপন্থী রাজনীতিকদের হাঁড়ির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন মৃগাঙ্কবাবু প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সীতারাম মাহাতোর ছেলে। ১৯৭২-’৭৭ সাল পর্যন্ত সীতারামবাবু সিদ্ধার্থ রায় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বাড়ি মানবাজার ২ ব্লকের বারি গ্রামে। তাঁর অন্য পরিচয় হল জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতোর দেওর। এখন অবশ মৃগাঙ্কবাবু পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুর মোড় এলাকার বাসিন্দা। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তিনি চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে প্রথম যোগ দেন মানবাজার ১ ব্লকের কুড়ুকতোপা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

রাজনীতির ঘরানায় মানুষ হলেও নিজে কখনই সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করেননি। দল সূত্রের খবর, পুরুলিয়া কেন্দ্রে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ ছিল মাহাতো পদবির অরাজনৈতিক কোনও ব্যক্তিত্ব। সেই জায়গা থেকেই গত সোমবার জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহতোর কাছ থেকে আচমকা ডাক পান মৃগাঙ্কবাবু। তাঁর কথায়, “আমাকে শান্তিবাবু (তৃণমূল জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো) ডেকে পাঠান কলকাতায়। তখনও জানতাম না যে আমিই প্রার্থী হচ্ছি।. ডাক পেয়ে কলকাতায় পৌঁছই বুধবার। এখানে এসেই জানতে পারি যে আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে।” দলের প্রার্থী সম্পর্কে জেলা কাযর্করী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রার্থী ভদ্র ও সজ্জন মানুষ। তাঁর বাবাও রাজনীতির বিরাট ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি জিতে মানুষেরই কাজ করবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE