খাস আদালত চত্বরেই প্রিজন ভ্যানে ভাঙচুর চালিয়ে থেকে পালানোর মরিয়া চেষ্টা করল ডাকাত সন্দেহে ধৃত সাত দুষ্কৃতী। কিন্তু, তাদের সেই চেষ্টা সফল হল না। প্রিজন ভ্যানে আগুন ধরানোরও চেষ্টা করে তারা। বুধবার বাঁকুড়া জেলা আদালত চত্বরের ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। নামে কমব্যাট ফোর্স। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে বাঁকুড়া সদর থানার দেরুয়া মোড় থেকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার সন্দেহে সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ফরিদ খান, আবুসালিম খান, সেখ সাবির, গুলশন দালাল, সেরাফ দালাল বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙার বাসিন্দা। গ্যাঁড়া ধীবর কেওটপাড়া ও চন্দ্র রতা লোকপুর এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলিও উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগেও এদের বিরুদ্ধে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এ দিন থানা থেকে ধৃতদের প্রিজন ভ্যানে চড়িয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ আদালতের কোর্ট লক-আপের সামনে নিয়ে আসা হয়। ভ্যানে আট জন পুলিশকর্মী ছিলেন। কারও হাতেই বন্দুক ছিল না। আদালত চত্বরে ঢোকার পরেই প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বন্ধ প্রিজন-ভ্যানের ভিতরে চলে হাঙ্গামা। ভ্যানটি কোর্ট চত্বরে দাঁড়ানোর পরেই ভিতরে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় ধৃতদের। ধৃতেরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে চিল চিৎকার করতে থাকে। প্রিজন ভ্যানকে তখন ঘিরে ছিল বেশ কিছু মানুষের জটলা। ধৃতেরা ভ্যানের ভিতরে ভাঙচুর শুরু করে। ভ্যানের ভিতরে পুলিশকর্মী ও বন্দিদের বসার আসনে আগুন লাগানোর চেষ্টা পর্যন্ত করে ওই সাত জন। ভিতরে তখনও রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। ভ্যানের ভিতর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে আগুন লেগেছে ভেবে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ধোঁয়া বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি সামলাতে কোর্ট চত্বরে এসে উপস্থিত হয় কমব্যাট ফোর্স। প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে পুলিশকর্মী এবং ধৃতদের বের করে আনা হয়। ধৃতদের কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়। ভ্যান থেকে বেরিয়েও ধৃতেরা চেঁচিয়ে বলতে থাকে, “আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।” প্রিজন ভ্যানটিকে বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে দমকলের একটি ইঞ্জিন আসে। ধৃতদের ১৪ দিনের জেল ফেহাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
গোটা ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রিজন ভ্যানে আগুন লাগল কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। গ্রেফতার হওয়ার পর ধৃতদের কাছে দেশলাই বা লাইটার থাকার কথাই নয়। তা হলে কী করে তারা ভ্যানের সিটে আগুন লাগালো? পুলিশের সন্দেহ, কোর্ট চত্বরে প্রিজন ভ্যানের বাইরে ধৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা ভিড় করেছিলেন। তাঁদের মধ্যেই কেউ প্রিজন ভ্যানে দেশলাই বা লাইটার ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকার বলেন, “ধৃতদের আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে, তা জেনে আদালতে এসেছিলেন ধৃতদের আত্মীয়েরা। তাঁরাই প্রিজন ভ্যানের জানলা দিয়ে লাইটার বা দেশলাই ধৃতদের হাতে দিয়েছেন। আমরা এই ঘটনার তদন্ত করছি।” পালানোর উদ্দেশ্যেই ধৃতেরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
এদিন আদালতে গিয়ে দেখা গেল পুলিশ আর কমব্যাট ফোর্সে গোটা চত্বর ছয়লাপ। উপস্থিত আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মুখেই এই ঘটনা নিয়ে চর্চা। প্রজিন ভ্যানে ভাঙচুরের চিহ্ন স্পষ্ট। ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কাচের টুকরো। ডিএসপি এসে পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শোনেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী তথা জেলা কংগ্রেস নেতা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভিতরে এত জন পুলিশকর্মী থাকার পরেও ধৃতেরা এই ধরনের ঘটনা ঘটালো কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। এই ঘটনা থেকে পুলিশের শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তা আরও কড়া হওয়া দরকার।”
প্রত্যক্ষদর্শী আর এক আইনজীবী সৌমিত্র দত্ত বলেন, “বাঁকুড়া আদালতে এই ধরনের ঘটনা আগে ঘটেছে বলে শুনিনি। কী ভাবে ধৃতেরা লাইটার বা দেশলাই পেল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি বাইরের কেউ প্রিজন ভ্যানে সে সব চালান করে থাকে, তা হলে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরও কড়া হওয়া দরকার।” পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কারা দোষী, তা তদন্ত করে দেখে পুলিশের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হবে।