বার বার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও পুলিশের কাছে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন পাত্রসায়রের তৃণমূল ছাত্র নেতা গোপে দত্ত।
এমনই অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন পাত্রসায়রের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠার পরেও শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ গোপেকে ধরতে পারেনি। তবে গোপেকে সঙ্গ দেওয়ায় অভিযুক্ত দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপার থানায় নির্দেশ পাঠিয়ে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার কাজল ঘোষ ও তুলসী কর্মকারকে ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক এ দিন বিকেলে জানিয়েছিলেন, “পাত্রসায়র থানার সামনে ওই ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। গোপেকেও ধরার চেষ্টা চলছে। ওই ব্যবসায়ীকে মারধরের সময়ে গোপের সঙ্গে থাকা দুই সিভিক ভলান্টিয়ার কাজল ঘোষ ও তুলসী কর্মকারের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তারপরে রাতেই ওই নির্দেশ আসে। মাস খানেক আগে বালসি এলাকায় তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত বালসি ১ পঞ্চায়েতের ‘ভিলেজ পুলিশ’ অনুপ মহন্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই ভিলেজ পুলিশ কর্মীকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার ওই ভিলেজ পুলিশকে বসিয়ে দেওয়ার জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন ।
গোপের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা ছোট নয়। ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে সালিশি সভা করা ও তার জেরে নির্যাতিতার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো মারাত্মক অভিযোগ আগেই ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে পাত্রসায়রের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় থানার সামনে এক মোবাইল ব্যবসায়ী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধর ও চিকিত্সা করাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর সঙ্গেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ার ছিল বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তিনদিন পরেও পুলিশ কাউকে ধরেনি। যদিও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বুধবার বলেছিলেন, “পাত্রসায়র থানার যে সব সিভিক ভলান্টিয়ারের নামে অভিযোগ হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় যারা গণ্ডগোল করছে তাদের সবাইকে ধরা হবে।” পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যের পরেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে ধরতে না পারায় হতাশ পাত্রসায়রের ব্যবসায়ী মহল। তাঁদের ক্ষোভ, থানার সামনে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েও গোপের মত টিএমসিপির সাধারণ মানের এক নেতা পার পেয়ে যাচ্ছে। সে দিন হামলার পরে আত ঙ্কের পরিবেশ ফিরে এসেছিল বাজারে। অনেকেই দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছিলেন। বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে বলেই ফের সে অশান্তি ছড়াতে সাহস পাচ্ছে। গোপের অবশ্য এ দিন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পাত্রসায়র থানার বেশ কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে শাসকদলের হয়ে মারপিটের অভিযোগ আগেই উঠেছে। বালসি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল নেতা বুদ্ধদেব পালকে মারধর এবং তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বালসি ১ পঞ্চায়েত এলাকার ভিলেজ পুলিশ কর্মী অনুপ মহন্তের বিরুদ্ধে। এরই পাশাপাশি প্রায় চার মাস আগে পাত্রসায়র বাজারে তৃণমূলের একটি কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গিয়ে কমব্যাট ফোর্সের লাঠির ঘায়ে কপাল ফেটেছিল এক সিভিক ভলান্টিয়ারের। ওই হামলার ঘটনায় আহত সিভিক ভলান্টিয়ারের নামেও থানায় অভিযোগ হয়েছিল। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সিভিক ভলান্টিয়ারের তকমা এঁটে স্থানীয় কয়েকজন যুবক গণ্ডগোলে জড়াচ্ছেন। কয়েকজনের নামে পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি একে একে কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। কয়েকজনকে খুব তাড়াতাড়ি কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু গোপের কী হবে? জানতে চান পাত্রসায়ের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy