ভোট উপলক্ষে পুলিশের ‘এরিয়া ডমিনেশন’ চলছে লোবায়। সেই ছবি গ্রুপে আপলোড করলেন দুবরাজপুরের ওসি। সঙ্গে সঙ্গে চ্যাটে জেলা পুলিশের এক কর্তা লিখলেন, “ইশ! আগে বলবে তো। পরের টহলের আগে আমাকে কিন্তু খবর দিও। আমিও থাকব।”
উপরের এই কথোপকথন চলছে হোয়াটস্অ্যাপের ‘বীরভূম পুলিশ’ গ্রুপে। ভোটের এই মরসুমে সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদানপ্রদানের জন্য জনপ্রিয় মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ‘হোয়াটস্অ্যাপ’কেই বেছে নিয়েছে ওই জেলার পুলিশ। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে মোবাইল চ্যাটিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম এই ‘হোয়াটস্অ্যাপ’। শুধু টেক্সট মেসেজই নয়, ছবি, ভিডিও, অডিও আপলোড করে নিমেষেই তা গ্রুপের সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে চালু হওয়া ওই গ্রুপে রয়েছেন বীরভূমের ১৯টি থানার ওসি-আইসি, ছয় সিআই থেকে ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক এবং অতিরিক্ত পুলিশসুপার। গ্রুপের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর স্বয়ং পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। হ্যাক করে কেউ যাতে ওই গ্রুপে ঢুকতে না পারে, তার জন্যও তিনি প্রথম থেকেই কড়া নজরদারি শুরু করেছেন।
এই নতুন ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়েছে পুলিশ কর্তাদের মধ্যে। এই ক’দিনেই গ্রুপের সদস্যদের অভিজ্ঞতা, হোয়াটস্অ্যাপে যুক্ত থেকে যে কোনও বিষয়ে তথ্য পেতে, ঊধ্বর্র্তন আধিকারিকদের পরামর্শ নিয়ে কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সহজ হয়েছে। গোটা ব্যাপারটির হোতা, অলোক রাজোরিয়া নিজে বলছেন, “প্রযুক্তি যখন রয়েছে, তখন সেটাকে কাজে লাগিয়ে কেন নিজেদের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ব না? অনেক সময়ই তো আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়ে ওঠে না। এখন সেই সমস্যা থাকল না। প্রতি মুহূর্তে প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছি। যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা ও সময় দুটোই কমেছে।” সারা বছরের পাশাপাশি বিশেষ করে ভোটের এই উত্তপ্ত আবহে এলাকার আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হোয়াটস্অ্যাপ-ব্যবস্থা অনেকটাই সুফল আনবে বলে দাবি পুলিশ সুপারের। ঠিক সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ না মেলায় চালু হওয়ার বেশ কয়েক দিন পরে ওই গ্রুপে যোগ দিয়েছেন দু’-তিন জন ওসি। আবার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনও কোনও পুলিশকর্তা প্রথম দিকে খানিকটা নড়বড়েই ছিলেন। তবে এখন সকলেই মোটামুটি ধাতস্থ।
নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য সরকারি ভাবে থানায় থানায় এখনও ‘আরটি মেসেজ’ বা রেডিও ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পুরনো ওই ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন বেশির ভাগ পুলিশ কর্মীই। জেলারই এক থানার ওসি-র যেমন বিশ্লেষণ, “দ্রুত বার্তা আদানপ্রদানে ওই ব্যবস্থা একেবারেই উপযোগী না। মেসেজ যেতে অনেক সময়ে বেলা বয়ে যায়। হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে সমস্ত থানাই এক সঙ্গে কোনও ঘটনার খবর পেয়ে যাচ্ছে। ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হচ্ছে। সময়ও কম লাগছে।” তিনি জানাচ্ছেন, আগে কোথাও কোনও বড় ঘটনা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটত। কী করণীয় বুঝতে না পারলে নীচুতলার পুলিশ ঊধ্বর্র্তন কর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানাতেন। সেই কর্তা তাঁর উপরওয়ালাকে। “সব শেষে বড়কর্তা অর্থাৎ পুলিশ সুপারের কাছে যখন খবর পৌঁছল, তারও পরে প্রয়োজনীয় নির্দেশ আসতে আরও সময় ব্যয় হয়ে গিয়েছে। ততক্ষণে পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় কোথায় কী ঘটছে, সেই তথ্য সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি থানার ওসি, আইসি থেকে পুলিশ সুপারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।” বলছেন ওই ওসি।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমনে বা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নতুন এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই পুলিশ মহলের মত। ঘটনা নিয়ে পরামর্শ যেমন মিলছে, তেমনই ভাল কাজ করলে কর্তাদের কাছ থেকে প্রশংসাও জুটছে। এক ওসির কথায়, “ধরুন কোনও থানা প্রচুর মদ উদ্ধার করল। সেই ছবি দেখে এসপি লিখছেন ‘ওয়েলডান’। সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। এই পিঠচাপড়ানি তো সবাইকে অনুপ্রাণিত করছেই।”
তবে, এমন দাওয়াইয়ে সব সময় পুলিশ সুপারের নজরদারিতে থাকতে হচ্ছে বলে কপালে ভাঁজ জেলার কোনও কোনও পুলিশ কর্তার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy