সেজেগুজে অনুষ্ঠানে যাবেন, তাই শখ করে দিদি রেশমা পারভিনের কাছ থেকে তিন ভরি গয়না নিয়ে এসেছিলেন জিন্নাত পারভিন। অনুষ্ঠান পর্ব মিটে যাওয়ার পর খয়রাশোলের বড়রা গ্রামের বাসিন্দা জিন্নাত বুধবার বিকেলে বাবা সামসুল আলমের মোটর বাইকে দিদির শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল গয়নার ব্যাগ। দিদির বাড়ি ঢোকার আগে পাওয়ার হাউস মোড়ে ফলের দোকানে দাঁড়ান। টুলবক্স থেকে থলে বের করার সময়ে গয়নার ছোট্ট ব্যাগটিও পড়ে যায়। তা অবশ্য খেয়াল করেননি বাবা-মেয়ে।
ফলের দোকানের মালিক শেখ জামিরের নজরে পড়ে ব্যাগটি। খুলে দেখেন দু’টি সোনার হার ও একটি দুল রয়েছে তাতে। তিনি বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম যাঁরই হোক, নিশ্চই খোঁজ করবে। কিন্তু বুধবার দোকান বন্ধ করতে যাওয়া পর্যন্ত কেউ আসেননি। বৃহস্পতিবার সকালেও কেউ গয়নার খোঁজ করতে না আসায় বিষয়টি দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডেকে বলি।”
এ দিকে গয়না খোয়া যেতে ভেঙে পড়েন দুই বোন। বৃহস্পতিবার সকালে রেশমার স্বামী মহম্মদ রনি দুবরাজপুরের উপপুরপ্রধান মির্জা সৌকত আলিকে ঘটনার কথা বলেন, ততক্ষণে অবশ্য পুরো বিষয়টি পুরপ্রধানের কাছ থেকে শুনে নিয়েছেন উপপুরপ্রধান। এর পরেই গয়না ফেরাতে উদ্যোগী হন তাঁরা। পীযূষবাবুদের সামনেই মহম্মদ রনির হাতে গয়নার ব্যাগ তুলে দেন জমির।
গয়না ফিরে পেয়ে রেশমা, জিন্নাত খুব খুশি। রেশমা বলেন, “খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই।”
এমন ব্যতিক্রমী মানুষটি দুবরাজপুর শহরের পাওয়ার হাউস মোড়ে ১৪ বছর ধরে ফল বিক্রি করছেন। হেতমপুরের বাসিন্দা জামিরের মাসে রোজগার হাজার পাঁচেক টাকা। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সংসার চলে কোনও মতে। এই মানুষটিই পড়ে-পাওয়া চোদ্দ আনা-র লোভ করেননি এতটুকু। সকলের প্রশংসার সামনে সংকুচিত শেখ জমির বলেন, “কী এমন করেছি। যাঁদের জিনিস তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা আমার কর্তব্য ছিল।”