ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে সালিশি করা ও তার জেরে নির্যাতিতার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় নাম জড়িয়েছিল পাত্রসায়রের তৃণমূল ছাত্র নেতা গোপে দত্ত-র বিরুদ্ধে। তখন পুলিশ তাকে ধরেনি। সেই ঘটনার মাসখানেক পরে মঙ্গলবার রাতে ফের গোপের বিরুদ্ধেই পাত্রসায়র বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠল। ওই ব্যবসায়ীকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তবে এ বার গোপের সঙ্গে মারধরে নাম জড়িয়েছে দুই সিভিক ভলান্টিয়ারেরও। থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পুলিশ প্রশাসনও। বুধবার দুপুরে সোনা ওরফে অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নামের ওই ব্যবসায়ী থানায় গোপে ও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার কাজল ঘোষ, তুলসী কর্মকার-সহ কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই দু’জন তৃণমূল কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশ একজনকেও ধরতে পারেনি।
তবে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশকুমার বলেছেন, “ওই ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পাত্রসায়র থানার যে সব সিভিক ভলেন্টিয়ারের নামে অভিযোগ হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় যারা গণ্ডগোল করছে তাঁদের সবাইকে ধরা হবে।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে মার-পাল্টা মারের অভিযোগ পাত্রসায়রে অহরহ উঠছে। গোপের বিরুদ্ধেও এমন মারধরের অভিযোগ কম ওঠেনি। কিন্তু পাত্রসায়র থানায় কর্মরত দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের মতো পুলিশের লোকজনের বিরুদ্ধে শাসকদলের হয়ে মারধরের অভিযোগ আগে ওঠেনি। এমনই উত্তেজনা ছড়ায় যে পরিস্থিতি সামাল দিতে কমব্যাট ফোর্স নামাতে হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও নিমেষের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। থানার সামনে মারধরের ঘটনায় সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের নাম জড়ানোয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মাস তিনেক আগে পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী মণিরুল ইসলামকে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর কার্যালয়ে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল গোপের বিরুদ্ধে। মাস খানেক আগে এলাকার এক বধূকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এলাকার এক যুবকের বিরুদ্ধে। সেই অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে সালিশিসভা করা এবং নির্যাতিতার পরিবারকে চাপ দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে গোপের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পরে বধূটি আত্মহত্যা করেন। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয় ওই টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে। এত অভিযোগের পরেও পুলিশ গোপেকে ধরেনি।
পাত্রসায়র থানার সামনে অয়নের মোবাইলের দোকান রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “মদ্যপ অবস্থায় গোপে, সিভিক ভলান্টিয়ার কাজল ও তুলসী প্রথমে আমার পাশের দোকানে হুজ্জতি শুরু করছিল। আমি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ গোপে আমার দিকে তেড়ে এসে আমার দোকানে কেন মনিরুল ও অন্যেরা আড্ডা মারে তা নিয়ে গালিগালাজ শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করায় লাঠি দিয়ে আমাকে মারতে থাকে। আমি দোকানে ঢোকার চেষ্টা করতেই কাজল, তুলসী-সহ কয়েকজন আমাকে আটকে ফের মারধর করে।” তাঁর দাবি, মার খাওয়ার পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় ওরা। এমনকী থানায় অভিযোগ করলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে ওরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, অয়নকে মনিরুল ইসলাম-সহ কয়েকজন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে গোপে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তখন মনিরুলের নেতৃত্বে কয়েকজন গোপেকে পাল্টা মারধর করেন বলে অভিযোগ। অবস্থা বেগতিক দেখে গোপে ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা পালিয়ে যায়। মনিরুলের দাবি, “সোনার মতো এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে অকারণে মারধর করায় এলাকার মানুষ গোপের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন। ওকে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথে গোপে ফের আমাদের আটকানোর চেষ্টা করতেই সবাই তেড়ে যায়। ওকে মারধর করা হয়নি।”
সব অভিযোগ অস্বীকার করে গোপে দাবি করেন, “আমি বুধবার অনেক রাত পর্যন্ত সোনামুখীতে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমি কাউকে মারধর করিনি। তবে সোনা আমাদের দলের কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করেছিল বলে শুনেছি। তা থেকেই সামান্য গণ্ডগোল হয়েছে।” সিভিক ভলান্টিয়ার কাজলের দাবি, “অয়নকে আমি মারধর করিনি। মারপিট থামাতে গিয়েছিলাম।” অয়নকে তাহলে কারা মারধর করছিল? আর মুখ খোলেননি কাজল। তুলসীর সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy