Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতার উপরে হামলা, অভিযুক্ত বিজেপি

তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষকে ঘিরে দিনভর উত্তেজনার পরে রাতেই দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতি। শনিবার বোলপুরের সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েত এলাকার ওই ঘটনায় কসবা পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধানের স্বামী নিমাই দাস-সহ দলের ১১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করলেও রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে নিমাইবাবুর কোনও খোঁজ মিলছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র

বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষকে ঘিরে দিনভর উত্তেজনার পরে রাতেই দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতি। শনিবার বোলপুরের সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েত এলাকার ওই ঘটনায় কসবা পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধানের স্বামী নিমাই দাস-সহ দলের ১১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করলেও রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে নিমাইবাবুর কোনও খোঁজ মিলছে না। তাঁর স্ত্রী শঙ্করীদেবীর (একদা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) অভিযোগ, “সন্ধ্যায় আমার স্বামী বাড়ির দাওয়াই বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন। তখনই কয়েক জন লোক এসে এসডিপিও জাকছেন বলে ওঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে গেল। তার পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বোলপুর থানায় গেলে, ওরা কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।” তাঁর দাবি, পাড়ুইকাণ্ডে হৃদয় ঘোষদের পাশে দাঁড়ানোয় তৃণমূলের লোকজন তাঁর স্বামীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, নিমাইবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ দিকে, তৃণমূল নেতার উপরে হামলার জেরে শনিবার গভীর রাতেই চড়াও হয়ে এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর ও মহিলাদের শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ঘটনায় অবশ্য রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে। রবিবার বারবার যোগাযোগ করা হলেও বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব ফোন ধরেননি। এমনকী, এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। তবে, পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, খুনের চেষ্টার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের পর থেকেই সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির সংগঠন বাড়ছে। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দিন দু’য়েক আগে স্থানীয় ধর্মরাজতলা বাসস্ট্যান্ডে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বচসা থেকে ঝামেলার সূত্রপাত। শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় ওই এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজি চলে। খবর পেয়ে বোলপুর থানার আইসি দেবকুমার রায় এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বোমাবাজিতে জড়িত থাকার সন্দেহে এক বাসিন্দাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করে। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বোমাবাজির ঘটনায় দু’দলই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুললেও কেউ-ই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। ওই ঘটনাকে ঘুরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই থমথমে আবহের মধ্যেই ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে।

তৃণমূলের অভিযোগ, দলীয় কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফেরার পথে শনিবার রাতে স্থানীয় কুলমনি মোড়ের কাছে তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চলের সভাপতি শিবপদ ঘোষের উপরে লাঠি, রড, টাঙ্গি নিয়ে হামলা চালানো হয়। শিবপদবাবুর দাবি, “বন্দুকের বাঁট এবং ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় মারা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ি। বিজেপির ওই দুষ্কৃতীরা আমাকে মৃত ভেবে ধান খেতের ধারে ফেলে পালায়।” পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় গুরুতর জখম ওই নেতাকে রাতেই বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে শিবপদবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।

শনিবার গভীর রাত ১১টা নাগাদ বোলপুর থানায় খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। ওই এফআইআর-এ বিজেপির স্থানীয় অঞ্চল কমিটির সদস্য নিমাই দাস-সহ ১১ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের নাম রয়েছে। ওই ঘটনার জেরে গভীর রাতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই পঞ্চায়েতের দর্পশিলার বাসিন্দা দুই বিজেপি কর্মী অশোক দাস এবং প্রদীপ দাসের স্ত্রী বন্দনা দাস, মিতা দাসরা বলেন, “পুলিশের নাম করে তৃণমূলের জনা কুড়ি লোক মাঝরাতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর, লুঠপাট চালায়।” তাঁদের সুরেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাটের পাশাপাশি শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগও করছেন আশপাশের সর্পলেহনা, শীতলপুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ির মেয়েরাও। সর্পলেহনার মাধাই দাস, পরেশ বাগদী, শীতলপুরের অমর দাসের বাড়িতে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। রাতের হামলার পরে এ দিন তিনটি গ্রামই কার্যত পুরুষশূন্য ছিল। সকালে পুলিশ গিয়েও অভিযুক্তদের কাউকে পায়নি।

নিখোঁজ হওয়ার আগে শিবপদবাবুর উপরে হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত নিমাইবাবু এ দিন দুপুরেই ফোনে দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরেই শিবপদবাবুর উপরে তাঁর দলের লোকজনই হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, “এলাকায় আমাদের দলের প্রভাব বাড়ছে। তাই এখন ঘটনার অভিমুখ ঘোরাতে পরিকল্পিত ভাবে আমাদেরই ফাঁসানো হচ্ছে।” তাঁরও অভিযোগ, পুলিশের নাম করে ঘরে ঢুকে দলের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নেতৃত্ব তৃণমূলের ওই অঞ্চলের পর্যবেক্ষক মহাদেব রায়। উল্টে রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার তৃণমূল বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, “শুধু সর্পলেহনা-আলবাঁধাতেই নয়, বিজেপি গোটা জেলাতেই পরিকল্পিত ভাবে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। ওরা যে আদতে একটা সমাজবিরোধীদের দল, তা বারবার প্রমাণ করছে!” তবে, শনিবারের ঘটনায় দল কোনও ভাবেই যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “চারিদিকে নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বেই তো ওদের কত নেতা খুন হয়ে যাচ্ছেন। শনিবারের ঘটনা সে রকম কিছু কি না, পুলিশ বরং তা আগে ভাল করে তদন্ত করে দেখুক। আমাদের দলের কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত নন। আসলে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। তাই এখন মিথ্যা অভিযোগ করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছে।”

bolpur bjp tmc bjp tmc clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy