Advertisement
E-Paper

তিন বছর পরে প্রচারে গিয়ে প্রশ্নের মুখে সিপিএম প্রার্থী

এক সময়ে যা ছিল তাদের ‘দুর্গ’, এখন সেখানে তাদের যেন দূরবীণ দিয়ে খোঁজার দশা। পরের পর পার্টি অফিস বন্ধ। রাজনৈতিক কর্মসূচিও এত দিন ছিল না বললেই চলে। এ হেন পাত্রসায়রে প্রায় প্রায় তিন বছর পরে কড়া পুলিশি পাহারায় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুস্মিতা বাউরির হাত ধরে প্রচারে নামল সিপিএম। আর প্রচারের প্রথম দিনই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সিপিএমের বিদায়ী সাংসদ।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৩

এক সময়ে যা ছিল তাদের ‘দুর্গ’, এখন সেখানে তাদের যেন দূরবীণ দিয়ে খোঁজার দশা। পরের পর পার্টি অফিস বন্ধ। রাজনৈতিক কর্মসূচিও এত দিন ছিল না বললেই চলে।

এ হেন পাত্রসায়রে প্রায় প্রায় তিন বছর পরে কড়া পুলিশি পাহারায় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুস্মিতা বাউরির হাত ধরে প্রচারে নামল সিপিএম। আর প্রচারের প্রথম দিনই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সিপিএমের বিদায়ী সাংসদ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে প্রচার মাঝপথে বন্ধ রেখেই এলাকা ছাড়লেন তিনি। পাত্রসায়র থানার পান্ডুয়া গ্রামে সোমবার সকালের ঘটনা। তৃণমূলের লোকেরাই তাঁকে প্রচারে বাধা দেওয়ার জন্য এই কাণ্ড করেছে বলে অভিযোগ সিপিএম প্রার্থীর। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নকুল মাহাতো, পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী-সহ স্থানীয় কয়েক জন নেতা এবং শ’খানেক কর্মী-সমর্থককে নিয়ে নাড়িচ্যা গ্রামে যান সিপিএম প্রার্থী। পাত্রসায়র থানার ওসি অমিত সিংহ মহাপাত্রের নেতৃত্বে মহিলা কমান্ডো-সহ বড় পুলিশ বাহিনী সিপিএম প্রার্থীর নিরাপত্তায় সর্বদা সঙ্গে ছিল। পুলিশি পাহারায় সুস্মিতাদেবী কয়েকটি বাড়িতে নির্বিঘ্নে প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় একটি পুকুর পাড়ে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। এর পরে সেখান থেকে কিছুটা দূরে পান্ডুয়া বাজারে যান সুস্মিতাদেবী।

গোল বাধে তখনই।

স্থানীয় কিছু দোকানদার এবং গ্রাবাসীর একাংশ সুস্মিতাদেবীর উদ্দেশে নানা মন্তব্য করতে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা অখিল কোটাল, ভোলা মাঝি, নয়ন মাঝি, শেখ আগায় খাঁ, শেখ আরিফ-সহ কয়েক জন এগিয়ে এসে প্রার্থী এখানে কেন এসেছেন, তা-ও জানতে চান। ভিড়ের মধ্যে থেকে কিছু লোক ‘গো-ব্যাক’ ধ্বনিও দেন। তীব্র কটাক্ষে বলতে শোনা যায়, ‘‘পাঁচ বছর পরে ভোট আসতেই মনে পড়ল বুঝি আমাদের?’’ তাঁরা সিপিএম প্রার্থীর উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, “এত দিন কোথায় ছিলেন? শেষ কবে এখানে এসেছেন? কী উন্নতি করেছেন? এখন ভোট চাইতে এসেছেন? কেন এসেছেন? আমরা বেশ ভাল আছি।”

পান্ডুয়া গ্রামে এই ঘটনার পরে অবশ্য সুস্মিতাদেবী আর এলাকায় থাকা সমীচীন মনে না করে প্রচার মাঝপথে বন্ধ রেখেই চলে যান। সুস্মিতাদেবী অবশ্য তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের কথা মানতে চাননি। বরং তাঁর অভিযোগ, “পান্ডুয়া গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছিলাম। ভাল সাড়া পাচ্ছিলাম। হঠাৎই মোটরবাইকে তৃণমূলের কয়েক জন এসে ‘এখানে প্রচার করা চলবে না, কেন এসেছেন’ বলে শাসানি দিতে থাকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে আমি ওঁদের সঙ্গে কোনও রকম বিবাদে না গিয়ে এলাকা থেকে চলে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি।” গোটা ঘটনা জানিয়ে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানাবেন সুস্মিতাদেবী। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য উনি কিছুই করেননি। পাঁচ বছর আগে একবার এসেছিলেন। ভোট পড়তেই আবার এসেছেন। আমাদের দলের কর্মীরা নয়, গ্রামের সাধারণ মানুষই অনেক দুঃখে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”

বিধানসভা ভোটের পর থেকেই পাত্রসায়রে সিপিএমের জোনাল, লোকাল ও শাখা কমিটির ২০টিরও বেশি কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। দলের জামকুড়ি লোকাল কমিটির অফিস কিছুদিন খোলা থাকলেও গত অক্টোবর থেকে পুরোপুরি বন্ধ। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্লকের দু’টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে একটিতে এবং ব্লকের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে মাত্র একটি আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছিল। এরই পাশাপাশি দলের সক্রিয় দুশোর বেশি নেতা-কর্মী এখনও গ্রামছাড়া।

এই পরিস্থিতিতে ভোটের প্রচার কী ভাবে করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। এ দিনের ঘটনা তাঁদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সিপিএমের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “পাত্রসায়রে দলের প্রার্থীর সমর্থনে দু-একটা দেওয়াল লিখন করা গিয়েছে। প্রচার ও সভা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে ওই এলাকায়।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “সিপিএম প্রার্থীর নিরাপত্তার জন্য মহিলা কমান্ডো বাহিনী ছিল। পাত্রসায়র থানার ওসি ছিলেন। উনি নিজেই আর প্রচার না করে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

debabrata das patrasayar susmita bauri cpm loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy