Advertisement
E-Paper

ত্রিশঙ্কু আদ্রা, পুরসভা ঘোষণার অপেক্ষা

না পঞ্চায়েত, না পুরসভা এই অবস্থানে থেকে আদ্রার বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। দাবি মেনে রঘুনাথপুরের যমজ শহর হিসেবে আদ্রা পুরসভা করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে কাশীপুর থেকে সরিয়ে এনে আদ্রায় পৃথক থানা তৈরির দাবি ছিল। সম্প্রতি সে দাবি পূরণ হয়েছে। এ বার বাসিন্দারা চাইছেন, আদ্রাকে পুরসভার স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আদ্রা বর্তমানে রেলের ‘নোটিফায়েড জোন’ হিসেবে স্বীকৃত। ফলে এই শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের জটিলতার শিকার।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৭
কোথাও জমে রয়েছে আবর্জনা, নর্দমা না থাকায় কোথাও বাড়ির নোংরা জল পড়ছে পাশের জমিতে। পুরসভা হলে এই সব সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী এলাকার বাসিন্দা থেকে সকলেই। ছবি: পৌলমী চক্রবর্তী।

কোথাও জমে রয়েছে আবর্জনা, নর্দমা না থাকায় কোথাও বাড়ির নোংরা জল পড়ছে পাশের জমিতে। পুরসভা হলে এই সব সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী এলাকার বাসিন্দা থেকে সকলেই। ছবি: পৌলমী চক্রবর্তী।

না পঞ্চায়েত, না পুরসভা এই অবস্থানে থেকে আদ্রার বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। দাবি মেনে রঘুনাথপুরের যমজ শহর হিসেবে আদ্রা পুরসভা করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।

দীর্ঘদিন ধরে কাশীপুর থেকে সরিয়ে এনে আদ্রায় পৃথক থানা তৈরির দাবি ছিল। সম্প্রতি সে দাবি পূরণ হয়েছে। এ বার বাসিন্দারা চাইছেন, আদ্রাকে পুরসভার স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আদ্রা বর্তমানে রেলের ‘নোটিফায়েড জোন’ হিসেবে স্বীকৃত। ফলে এই শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের জটিলতার শিকার। কারণ এই এলাকা না পুরসভা, না পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত। ফলে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা এই রেল শহরের বাসিন্দাদের হামেশাই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, এই শংসাপত্র দেয় পঞ্চায়েত বা পুরসভা। কিন্তু আদ্রা এ দুয়ের মধ্যে না পড়ায় ওই শংসাপত্র পেতে হয়রানির শেষ থাকে না। শুধু জন্ম-মৃত্যুর ক্ষেত্রেই নয়, একই সমস্যা ‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’, ‘প্রতিবন্ধী শংসাপত্র’, ‘ট্রেড লাইসেন্স’, ‘কাস্ট সার্টিফিকেট’ পাওয়ার ক্ষেত্রেও হয়। বাসিন্দাদের দাবি, “পঞ্চায়েত বা ব্লক অফিস গেলে আমাদের শুনতে হয় আমরা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা নই, ফলে পঞ্চায়েত থেকে ওই শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়। আবার এই ধরনের শংসাপত্র রেল কর্তৃপক্ষেরও দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে মাঝামাঝি অবস্থায় ঝুলে রয়েছি।”

পাকা নর্দমা, ডাস্টবিন না থাকায় বা জঞ্জাল সাফাইয়ের পরিকাঠামো পঞ্চায়েতেগুলিতে না থাকায় আবর্জনার স্তূপে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাতে হয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বেকোর ডিভিসি কলোনির বাসিন্দা ফিরোজ আলম বলেন, “পরিকল্পনা মাফিক কলোনি গড়ে ওঠেনি। আবার পঞ্চায়েতের তরফে জঞ্জাল সাফাইয়ের কোনও ব্যবস্থাও নেই। তাই এলাকার যত্রতত্র জঞ্জাল পড়ে থাকছে। নিকাশির হালও তথৈবচ।” আবার আড়রা পঞ্চায়েতের বেনিয়াসোল এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা পানীয় জল। কিন্তু জল প্রকল্প না থাকায় সেই সমস্যা দূর হয়নি।

বস্তুত এ রাজ্যের রেলের বিভাগীয় সদরগুলি সংশ্লিষ্ট পুরসভার মধ্যে থাকলেও ব্যতিক্রম আদ্রা। রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে-র আক্ষেপ, “খড়গপুর, আসানসোল এমনকী দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর গার্ডেররিচ পর্যন্ত পুরসভা বা কর্পোরেশনের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আদ্রাকে পুরসভার মধ্যে নিয়ে আসার কোনও উদ্যোগ কখনই নেওয়া হয়নি।” শুধু রেল শহরের বাসিন্দারাই নয়, আদ্রায় পুরসভা হোক তা চাইছেন এই রেল শহর লাগোয়া দুই পঞ্চায়েতের বাসিন্দারাও। তাঁদের মতে, এতে সুষ্ঠু পরিষেবা মিলবে। বস্তুত আদ্রার ভৌগোলিক ক্ষেত্রটা কিছুটা বিচিত্র। মূল রেল শহর রয়েছে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। শহর লাগোয়া উত্তর দিকের কিছু এলাকা রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা পঞ্চায়েতের আওতাভূক্ত আর দক্ষিণ দিকের কিছুটা কাশীপুর ব্লকের বেকো পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। এই দুই পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা বেনিয়াসোল, মিশন পাড়া, পাঁচুডাঙা প্রভৃতি এলাকা গড়ে উঠেছে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীদের নিয়েই। বেকো পঞ্চায়েতের সুভাষনগর, নিউ কলোনি, পলাশকোলা, রাঙ্গুনীর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ফলে এই এলাকাগুলি পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকলেও এগুলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গ্রামাঞ্চল না বলে আধা শহরাঞ্চল বলাই ভালো। আর এই প্রেক্ষিতেই পুরসভার মধ্যে এই এলাকাগুলিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ওই পঞ্চায়েতের প্রধানরাও।

রাজনৈতিক ভাবে বিরোধী মেরুতে অবস্থান করলেও এই একটি ব্যাপারে একমত বেকো পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান কাজল ভট্টাচার্য ও আড়রা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান মধুসূদন দাস। দু’জনেই মনে করছেন, এলাকার উন্নয়ন করতে হলে পুরসভায় অন্তর্ভূক্ত করা ছাড়া গতি নেই। দুই পঞ্চায়েত প্রধানেরই বক্তব্য, “এই এলাকার বাসিন্দারা পরিষেবা হিসেবে দাবি করেন জল প্রকল্প, পথবাতি, হাইড্রেন, ডাস্টবিন, ঢালাই রাস্তার মতো বিষয়গুলি। যা পূরণ করার ক্ষমতা পঞ্চায়েতের নেই বললেই চলে। একমাত্র পুরসভার তহবিল থেকে এই সব ব্যয়বহুল উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব।” একধাপ এগিয়ে কাজলবাবু বলেন, “ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের কাছে আমরা পঞ্চায়েতের আটটি সংসদ এলাকার তালিকা দিয়ে ওই এলাকাগুলিকে পুরসভার সমতূল্য মর্যাদা দিয়ে বিশেষ তহবিল দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” কিন্তু রেল শহর ঘেঁষা বেকো পঞ্চায়েতের এই আটটি সংসদ কতটা পরিমাণে শহরাঞ্চল বিষয়টি স্পষ্ট একশো দিনের জব কার্ড সংক্রান্ত পঞ্চায়েতেরই দেওয়া পরিসংখ্যানেই। পুরো বেকো পঞ্চায়েতে যেখানে জবকার্ড রয়েছে ২৬০০ জনের, সেখানে এই আটটি সংসদে জবকার্ডের সংখ্যা মাত্র ৬০০টি। প্রধানের কথায়, “বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত। তাই জবকার্ডের সংখ্যাও হাতে গোনা।

আর এই প্রেক্ষিতেই আদ্রাকে পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করছেন কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়াও। তাঁর কথায় “আদ্রার রেল শহর-সহ দুই ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতের মোট ২০টি বুথ এলাকাকে নিয়ে পুরসভা গড়ার দাবি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে শুরু করে বিধানসভায় তুলেছি। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী বছরের মধ্যেই আদ্রা পুরসভা হবে।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে আদ্রায় পুরসভা গঠনের বিষয়ে ইতিমধ্যেই দু’টি বৈঠক হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) এবং কাশীপুর ও রঘুনাথপুর ১ ব্লক প্রশাসনের পদস্থ কর্তা ও আদ্রার রেলের এক পদস্থ আধিকারিক। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন “আদ্রাকে পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলার আগে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জনসংখ্যা, এলাকা সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন। সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ। দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” রেলের আদ্রা ডিভিশনের সিনিয়র কর্মাশিয়াল ম্যানেজার বিজয়কুমার মাঝি জানান, রেলের তরফে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আদ্রায় পুরসভা করার ক্ষেত্রে রেলের নীতিগত কোনও আপত্তি নেই।”

এখন শুধু প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বাসিন্দারা।

amar shohor subhraprakash mondal adra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy