Advertisement
E-Paper

তথ্য অনুসন্ধান কমিটি হতেই রদবদলে বিতর্ক

বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়ে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গড়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কিছু পদে রদবদল শুরু হওয়ায় বিতর্কের পারদ চড়ছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব বিশ্বভারতীর ছাত্র-অধ্যাপক-কর্মী-অভিভাবকদের ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র দাবি, দুর্নীতি ঢাকতেই এই রদবদল। যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই রদবদল নিছক ‘রুটিন’।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৫

বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়ে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গড়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কিছু পদে রদবদল শুরু হওয়ায় বিতর্কের পারদ চড়ছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব বিশ্বভারতীর ছাত্র-অধ্যাপক-কর্মী-অভিভাবকদের ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র দাবি, দুর্নীতি ঢাকতেই এই রদবদল। যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই রদবদল নিছক ‘রুটিন’।

বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তালিকা নেহাত ছোট নয়। নিয়োগে স্বজনপোষণ-দুর্নীতি, বেআইনি ভাবে পদ সৃষ্টি থেকে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যসবই রয়েছে তাতে। সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ, ‘বিশ্বভারতী অ্যাক্ট ১৯৫১’ অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রোভোস্ট’ বলে পদ নেই। তার পরেও পাঁচ জনকে ওই পদে বসানো হয়েছে। লোকসভায় এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরও দু’জনকে নিয়োগ করা হয়। ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র নেতা তথা অধ্যাপকসভার সাধারণ সম্পাদক রাজেশ কে বেণুগোপালের অভিযোগ, “একই ভাবে বিশ্বভারতীতে একটিই প্রোক্টর (ছাত্র পরিচালক) পদ থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পছন্দের দু’জনকে ওই পদে বসান উপাচার্য।”

সঙ্গীতভবন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে অধ্যাপক নিয়োগ নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। ইউজিসি-র (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) চেয়ারম্যানের কাছে সঙ্গীতভবনের অধ্যাপকের পদে ‘বেআইনি’ নিয়োগের তদন্তের আবেদন করে চিঠি দিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী মনোজ মুরলিও। তাঁর ক্ষোভ, “স্বজনদের ইন্টারভিউ বোর্ড গড়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ স্বজনদেরই বেছেছেন।” পাশাপাশি, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির দাবি, বিধি মেনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি ‘ডেপুটি সিকিওরিটি অফিসার’ পদে নিয়োগের জন্য। অথচ, সে-ই পদে ‘চিফ সিকিওরিটি অফিসারে’র পদে আবেদন করা এক জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি ‘কর্মসমিতি’তে আলোচনা হয়নি।

উপাচার্য সম্পর্কে সরব হয়েছেন রাজ্যের তিন সাংসদওকংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপি-র এস এস অহলুওয়ালিয়া, তৃণমূলের অনুপম হাজরা। বারবার অভিযোগ পেয়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রকও। সেই মনোভাবই ডিসেম্বরে প্রকাশ করেন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে বিশ্বভারতীতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রশ্নের উত্তরে আশ্বাস দেন তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গড়ার। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রক তিন সদস্যের এই তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গড়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে ওই কমিটি।

কমিটি গড়ার পরদিনই মন্ত্রক বিশ্বভারতীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে, অভিযোগের তদন্ত না হওয়া অবধি বিতর্কিত পদগুলির নিয়োগ যেন স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু কমিটির নেতাদের দাবি, তা হয়নি। উল্টে, অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, পাঠভবন এবং শিক্ষাসত্রের আগের অধ্যক্ষদের গত বছর হঠাৎ অন্যত্র বদলি করা হয়। ওই বদলি এবং ফাঁকা পদে নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ঘটনা হল, তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হওয়ার দিনেই পুরনো দুই অধ্যক্ষকে আগের পদে ফিরে আসতে চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী। তা ছাড়া, দুই ‘প্রোক্টর’-এর বদলে ফের এক জনকে ‘প্রোক্টর’ করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্টেরা পদে ফিরতে চেয়ে আবেদন করাতেই এই বদল। যদিও কমিটির নেতাদের অভিযোগ, “রদবদল হচ্ছে বেনিয়ম ঢাকতেই।” শুক্রবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি উপাচার্য। জবাব আসেনি এসএমএসের-ও। নতুন সহ-উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, “অভিযোগগুলির কথা বিশদে জানি না। তবে মনে হয়, যা হয়েছে, বিশ্বভারতীর উন্নয়নের কথা ভেবেই হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডি গুণশেখরণ নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্বভারতীর এক কর্তার দাবি, বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট আইন মানা হয়েছে। তাঁর মন্তব্য, “বিশ্বভারতীতে উচ্চশিক্ষায় কোটা-প্রথার বিরোধিতা করায় অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন উপাচার্য। সে জন্য নানা জনে নানা কথা বলছে।”

তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ বিশ্বভারতীরই শিক্ষক তথা তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরা। তাঁর মন্তব্য, “ইচ্ছেমতো বিশ্বভারতী চালাতে গিয়ে নিয়ম ভেঙেছেন উপাচার্য। এমনকী, নিজের পদে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এ সব নিয়ে প্রশ্ন করলেই মুশকিল।” রাজ্যসভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “আধুনিকীকরণের যুক্তি দিয়ে স্বেচ্ছাচার চলছে।” বিজেপি সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, “এক জন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন? তদন্ত চলা পর্যন্ত উপাচার্যকে প্রশাসনিক ক্ষমতার বাইরে রাখা হোক।” মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সূত্রও জানিয়েছে, বিশ্বভারতীতে সংরক্ষণ-বিতর্ক মিটলেও আন্দোলনকারীরা যে ভাবে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন বা অপসারণের দাবি জানাচ্ছেনসে কথাটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

biswabharati mahendra gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy