Advertisement
E-Paper

দুই পা পঙ্গু, পড়ার ইচ্ছায় পরীক্ষাকেন্দ্রে

চরম দারিদ্রে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি ওঁরা। পরবর্তী জীবনেও দারিদ্র পিছু ছাড়েনি। এর মধ্যে থেকেই প্রতিবন্ধী মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে স্বাবলম্বী করতে চান সোনামুখীর ধুলাইয়ের ওই দম্পতি। তাঁদের ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। আর ওই পরিবারের এই অদম্য মনোবলকে কুনির্র্শ জানাচ্ছেন গ্রামবাসী ও স্কুলের শিক্ষিকারা।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০১:১৩
পরীক্ষায় সোমা। —নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষায় সোমা। —নিজস্ব চিত্র

চরম দারিদ্রে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি ওঁরা। পরবর্তী জীবনেও দারিদ্র পিছু ছাড়েনি। এর মধ্যে থেকেই প্রতিবন্ধী মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে স্বাবলম্বী করতে চান সোনামুখীর ধুলাইয়ের ওই দম্পতি। তাঁদের ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। আর ওই পরিবারের এই অদম্য মনোবলকে কুনির্র্শ জানাচ্ছেন গ্রামবাসী ও স্কুলের শিক্ষিকারা।

ধুলাই গ্রামের ওই পরীক্ষার্থীর নাম সোমা কোনার। তার বাবা মৃণালকান্তি কোনারের পান-বিড়ির গুমটি রয়েছে। মা-বাবা আর দুই বোনকে নিয়ে ওদের অভাবের সংসার। মৃণালবাবুর কথায়, “অভাবের কারণেই অষ্টম শ্রেণির পরে পড়া ছাড়তে হয়েছিল আমাকে। স্ত্রী-ও অভাবের কারণেই বেশি পড়তে পারেনি। ইচ্ছে ছিল মেয়েদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার। সে জন্য সোমাকে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু ভর্তির একবছর পরেই মেয়ের ডানপায়ে অসুবিধা দেখা দেয়। হাঁটতে পারছিল না। পরে বাঁ পাও অকেজো হয়ে যায়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওর রিউম্যাটিক আর্থারাইটিস হয়েছে।”

সেই শুরু। তাঁর আক্ষেপ, বহু জায়গায় চিকিৎসা করাতে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছেন। এমনকী বাসিন্দাদের সাহায্যে ভেলোরেও তিনি মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সুস্থ করতে পারেননি। আস্তে আস্তে সে ৯০ শতাংশ পঙ্গু হয়ে যায়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে সোমার কাছে। ওই অবস্থাতেও সে পড়া ছাড়তে চায়নি। মৃণালবাবু জানান, কখনও তিনি কোলে কিংবা সাইকেলে চাপিয়ে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যান। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়াতেও সে ভাবই মেয়েকে পরীক্ষা কেন্দ্রে তিনি নিয়ে আসছেন।

প্রতিবেশী প্রদীপ লাহা, কাশীনাথ মণ্ডল বলেন, “ওই মেয়ের পরীক্ষার ফল কী হবে তা পরের কথা। কিন্তু এত অসুবিধা সত্ত্বেও মেয়েটি যে পড়া ছেড়ে ঘরে বসে থাকেনি, সেটা অনেকের কাছে শিক্ষণীয়।” সোমার অদম্য উদ্যোমে খুশি তার স্কুল ধুলাই গার্লস হাইস্কুলের টিচার-ইনচার্জ মিঠু পাত্র। তিনি বলেন, “শারীরিক অসুবিধার জন্য সোমা নিয়মিত ক্লাস করতে পারত না। পরীক্ষার সময় কোলে করে তাকে ওর বাবা নিয়ে আসতেন। নিজের মতো করে বাড়িতেই সে পড়াশোনা করেছে। পাশও করেছে। ওর এই প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে।”

বাবা যখন দোকানে থাকেন, তখন বাড়িতে সোমার সঙ্গী তার মা মঞ্জুদেবী। বোন রিয়া স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মঞ্জুদেবী বলেন, “সোমাকে কোলে করেই ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে হয়। পা ঘষেও একটুও এগোতে পারেনি। তাই রোজ স্কুলে পাঠাতে পারি না। এ দিকে বাড়িতে শিক্ষক রেখে পড়ানোরও ক্ষমতা নেই। ও নিজেই সোমা দু’বেলা বই নিয়ে বাড়িতে পড়ে। বোনকেও পড়া দেখিয়ে দেয়। জানি না এই অবস্থায় কেমন ফল করবে।”

বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পলাশডাঙা হাইস্কুলে সোমার পরীক্ষাকেন্দ্র। ওর সুবিধার জন্য মামারবাড়ি থেকে একটি মোটরবাইক দেওয়া হয়েছে। সেই গাড়িতেই মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন মৃণালবাবু। ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পলাশডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে সোমা। ওর সুবিধা-অসুবিধার দিকে শিক্ষকরা নজর দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে উত্তর লেখার জন্য তাকে অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট সময়ও দেওয়া হচ্ছে।”

সোমবার ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এ দিন সে বলে, “কষ্টের সংসার। টিউশন নিতে পারিনি। শারীরিক কারণে নিয়মিত স্কুলে যাওয়াও সম্ভব হয়নি। সবার সহযোগিতায় একা পড়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এগিয়েছি। মাধ্যমিকের পরীক্ষা খুব খারাপ হচ্ছে না। আশা করছি বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।” সেই দিনটাই অপেক্ষায় ওর বাবা-মা। স্কুলের শিক্ষিকা ও পড়শিরাও।

soma konar swapan bandyopadhyay handicapped sonamukhi madhyamik
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy