Advertisement
E-Paper

দু’দশকেও স্কুল হয়নি, অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ

এক মহিলার দান করা জমিতে স্কুল গড়ে তুলতে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে দু’মাসের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। যে এলাকায় এই স্কুল গড়ে ওঠার কথা, তা পুরুলিয়া শহরের মধ্যেই কেতিকা এলাকায়।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৫

এক মহিলার দান করা জমিতে স্কুল গড়ে তুলতে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে দু’মাসের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। যে এলাকায় এই স্কুল গড়ে ওঠার কথা, তা পুরুলিয়া শহরের মধ্যেই কেতিকা এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের অধীন কেতিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলে এলাকার দুর্গা মন্দিরে। এলাকার প্রাথমিক স্কুলের নিজস্ব ভবন গড়ে উঠুক, এই উদ্দেশ্যে কেতিকা এলাকারই বাসিন্দা কল্পনা চৌধুরী ১৯৯০ সালে পুরুলিয়া পুরসভাকে স্কুল গড়ে তুলতে বেশ কিছুটা পরিমাণ জমি দান করেছিলেন। কল্পনাদেবীর স্বামী ত্রিলোচন চৌধুরী বলেন, “পুরুলিয়ার তত্‌কালীন পুরপ্রধান কৃষ্ণপদ বিশ্বাস কেতিকা এলাকার প্রাথমিক স্কুলের নিজস্ব ভবন নেই দেখে আমাদের বলেছিলেন, আমরা স্কুল গড়ার জন্য জমি দিলে তাঁরা সেই জমিতে স্কুল গড়ে তুলবেন। দুর্গা মন্দিরের বারান্দায় প্রাথমিক স্কুল দীর্ঘদিন ধরে চললেও নিজস্ব ভবন হবে এই ভাবনা থেকে আমরা মূল রাস্তার ধারে (জগন্নাথ কিশোর কলেজের পাশে) আমাদের জমি পুরসভাকে দান করি।”

ঘটনা হল, ১৯৯০ সালে সালের নভেম্বর মাসে ওই জমি দান করার পরে দু’দশকের বেশি সময় পেরিয়েও সেই জমিতে আর প্রাথমিক স্কুল গড়ে ওঠেনি। ত্রিলোচনবাবু বলেন, “আমরা একাধিক বার পুরসভার কাছে কী কারণে ওই জমিতে স্কুল গড়া থমকে আছে, তা জানতে চেয়েছি। কিন্তু পুরসভার কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাইনি।” তাঁর দান করা জমি কী অবস্থায় রয়েছে, বা স্কুল গড়ার প্রক্রিয়া কোথায় আটকে আছেসে সম্পর্কে এত দিন পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন কল্পনাদেবী ও ত্রিলোচনবাবু।

এর পরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন হাইকোর্টে মামলা করার। কল্পনাদেবীর আইনজীবী সৌগত মিশ্র বলেন, “আমার মক্কেল এর মাঝে একাধিকবার পুরসভা বা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরে যোগাযোগ করেছেন। কোনও জায়গা থেকেই তাঁর প্রশ্নের সদুত্তর পাননি। ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে পুরুলিয়ার বর্তমান পুরপ্রধান তাঁকে চিঠি মারফত জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অনুমতি বা সবুজ সঙ্কেত না পেলে তাঁরা কিছু করতে পারবেন না। তখনই আমরা হাইকোর্টে মামলা করি।”

সেই মামলার রায় বেরিয়েছে বুধবার। সৌগতবাবু জানিয়েছেন, হাইকোর্টের বিচারপতি অশোককুমার দাস অধিকারী আদেশ দিয়েছেন, কল্পনাদেবীর দান করা জমিতে স্কুল গড়ে তুলতে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে দু’মাসের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ আগেই জানিয়েছিল যে স্কুল গড়ে তোলার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই। সেই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে ওই নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হেমন্ত রজক বলেন, “রায়ের বিষয়ে শুনেছি। আমাদের যদি স্কুল গড়ে তুলতে হয়, তা হলে আমরা পুরসভাকে চিঠি লিখে ওই জমি আমাদের হস্তান্তর করতে বলব। আমরা জমির দখল পেলে সর্বশিক্ষা মিশনকে অর্থের জন্য লিখব। জমি আর অর্থ পেয়ে গেলে আমাদের পক্ষে ওখানে স্কুল ভবন গড়ে তুলতে অসুবিধা নেই।” পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা অনেক দিনের পুরনো ঘটনা। যিনি জমি দান করেছিলেন, তিনি কী শর্তে জমি দিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরাও চাই ওই জমিতে স্কুল গড়ে উঠুক। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ স্কুল গড়তে চাইলে আমাদের আপত্তি থাকবে কেন? তবে এই বিষয়টি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে, না জেনে মন্তব্য করব না।” কেতিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ তিওয়ারি বলেন, “স্কুলটি দুর্গামন্দিরে চলায় কিছু অসুবিধা তো আছেই। স্কুল বসে মন্দিরের বারান্দায়। ফলে গ্রীষ্মে বা বর্ষায় অসুবিধা হয়। তাছাড়া মিড-ডে মিল রান্না হয় স্কুল থেকে বেশ খানিকটা দূরে অন্যের বাড়িতে। স্কুলের নিজস্ব ভবন থাকলে এ-সব অসুবিধা থাকবে না।”

জমিদাতা কল্পনাদেবী অবশ্য প্রশাসনিক সমস্যা নিয়ে আগ্রহী নন। তাঁর একটাই ইচ্ছে, স্কুল গড়ে উঠুক তাঁর দেওয়া জমিতে। তাই তিনি বলছেন, “আমি জীবদ্দশায় যেন দেখে যেতে পারি, ওই জমিতে স্কুল গড়ে উঠেছে!”

prashanta pal purulia school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy