Advertisement
E-Paper

দুষ্কৃতী হানায় হাতে চোট নিয়েই পরীক্ষায় বসল অভিষেক

পরের দিন ইতিহাসের পরীক্ষা। সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি লাগোয়া লাক্ষাকুঠির একটি ঘরে শেষ মূহুর্তের প্রস্ততি নিচ্ছিল ছেলেটি। আচমকা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে দুই দুষ্কৃতী। এক জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তা কপালে ঠেকিয়ে কিশোরের কাছ থেকে দ্রুতে কেড়ে নেয় তার মোবাইল। এরপর ধ্বস্তাধস্তি, চিৎকার। কিশোরের চিৎকার শুনে অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় দুই দুষ্কৃতী।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩০
ইতিহাস পরীক্ষা দিচ্ছে অভিষেক।—নিজস্ব চিত্র।

ইতিহাস পরীক্ষা দিচ্ছে অভিষেক।—নিজস্ব চিত্র।

পরের দিন ইতিহাসের পরীক্ষা। সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি লাগোয়া লাক্ষাকুঠির একটি ঘরে শেষ মূহুর্তের প্রস্ততি নিচ্ছিল ছেলেটি। আচমকা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে দুই দুষ্কৃতী। এক জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তা কপালে ঠেকিয়ে কিশোরের কাছ থেকে দ্রুতে কেড়ে নেয় তার মোবাইল। এরপর ধ্বস্তাধস্তি, চিৎকার। কিশোরের চিৎকার শুনে অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় দুই দুষ্কৃতী। দেখা যায়, ধ্বস্তাধস্তির সময় কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চোট লেগেছে কিশোরের ডান হাতের বুড়ো আঙুল-সহ তিনটি আঙুলে।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বলরামপুর থানার মাঝিপাড়া এলাকায়। আর শুক্রবার সেই চোট পাওয়া আঙুল নিয়েই ইতিহাসের পরীক্ষা দিয়েছে অভিষেক মাঝি নামে ওই সাহসী কিশোর।

মাঝিপাড়া এলাকাটি বলরামপুর থানার ঢিলছোড়া দূরত্বে। এই গলিতেই অভিষেকদের বাড়ি। বাবা তরণী মাঝি পেশায় লাক্ষা ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার বাড়ির উল্টো দিকের গলিতে নিজেদের লাক্ষাকুঠির একটি নিরিবিলি ঘরে বসে ইতিহাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল অভিষেক। তার কাকা সুবোধ মাঝি বলরামপুরেরই ফুলচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। থাকেন এই লাক্ষাকুঠি লাগোয়া বাড়িতে। সুবোধবাবুর কথায়, “তখন রাত পৌনে ৯টা হবে। একটি অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফিরেছি। আমি দোতলায় উঠেছি। বাড়িতে তখন টিভি চলছে। নীচের ঘর থেকে গোলমাল শুনতে পেলাম। সন্দেহ হওয়ায় নীচে নেমে দেখি ভাইপো প্রচণ্ড নার্ভাস। কিছু বলতে পারছে না। হাতের আঙুল কেটে গিয়েছে। একটু পরে ধাতস্থ হয়ে জানায়, দু’জন আচমকা ওর ঘরে ঢুকে পড়েছিল।”

ওই ঘটনার আতঙ্ক শুক্রবারও কাটেনি অভিষেকের। এ দিন সে জানায়, পড়ার মাঝে আচমকা ঘরে ঢুকে পড়ে দু’জন। তাদের মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা। এক জন ঢুকেই তার মাথার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায়। তার পর মোবাইল কেড়ে নেয়। অভিষেক বলে, “ওরা হিন্দিতে কিছু বলছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না। যে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়েছিল সে হঠাৎ আমাকে মারতে শুরু করল। আমিও সাধ্যমতো ঠেকানোর চেষ্টা করছিলাম। চিৎকার করতেই ওরা দু’জন পিছনের দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। ধ্বস্তাধস্তির মাঝেই আমার আঙুল কেটে যায়।” সুবোধবাবু বলেন, “ওই ঘরে একটা ছোট লাঠি পড়েছিল। সেটা দিয়েই ভাইপোকে মারধর করেছে দুষ্কৃতীরা।” ঘটনার পরের দিনও এই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুবোধবাবু বুঝে উঠতে পারছেন না, এই হামলার পিছনে কারণ কী। কেন তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাইপোকে এ ভাবে মারধর করবে কেউ।

ডান হাতের তিনটি আঙুলে আঘাত। তাই বাড়ির লোকজন চিন্তায় ছিলেন, অভিষেক পরীক্ষায় গিয়ে লিখতে পারবে কিনা। শুক্রবার সকালেই অভিষেক জানায় সে পরীক্ষা দিতে চায়। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই সে এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয়। তার সিট পড়েছে বলরামপুরেরই লালিমতী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জয়া দত্ত বলেন, “ছেলেটির কাছে সব ঘটনা শুনলাম। ওর হাতের তিনটে আঙুল ব্লেড জাতীয় ধারালো কিছুর আঘাতে কেটে গিয়েছে। ওকে দেখে নার্ভাস লাগছিল। পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা জানতে চাওয়ায় ও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। সত্যিই ছেলেটির মনোবলের প্রশংসা করতে হয়।” ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জ পদ্ম মল্লিক বলেন, “ছেলেটির মনের জোরের প্রশংসনীয়। পৃথক ভাবে পরীক্ষা দিতে চায়নি, অন্যদের সঙ্গেই দিয়েছে। একটু ধীরে লিখছিল।” আর অভিষেক বলছে, “পরীক্ষাটা না দিলে একটা বছর নষ্ট হয়ে যেত যে! অসুবিধা হলেও ৮৭ নম্বরের উত্তর দিয়েছি।”

অভিষেকের কাকা জানান, পুলিশকে ঘটনাটির বিষয়ে জানানো হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ওই পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে ঘটনার পরেই পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। প্রথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা ওই ছেলেটিরই সমবয়সী। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

balarampur prasanta paul madhyamik madhyamik exam 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy