এই দরজাই আটকানোর চেষ্টা চালানো হয়। —নিজস্ব চিত্র।
মাঝরাতে বারান্দায় গ্রিলের দরজা ভাঙার প্রচণ্ড শব্দে ঘুম চটকে গিয়েছিল গৃহকর্তার। বিছানা থেকে ধড়ফড় করে উঠে পড়েন তিনি। ছেলেকেও ডেকে তোলেন। কী হয়েছে? জানার জন্য বারান্দা যাওয়ার দরজার পাল্লা সামান্য ফাঁক করতেই তিন-চারজন বাইরে থেকে ঠেলে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে বাবা ও ছেলে সর্বশক্তি দিয়ে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা চালান। দরজার নীচের ফাঁক দিয়ে তরোয়াল চালিয়েও দরজা খুলতে পারেনি ডাকাতদল। ফোন পেয়ে সময়মতো পুলিশ সেখানে চলে আসায় রণেভঙ্গ দেয় ডাকাতরা। তবে পিছু ধাওয়া করে পুলিশ ধান খেতের মধ্যে এক দুষ্কৃতী পাকড়াও করে ফেলে।
শুক্রবার গভীর রাতে পুরুলিয়ার মানবাজারে কলেজ রোড এলাকায় এমনই ঘটনা ঘটেছে। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “গৃহকর্তা ও তাঁর ছেলে মিলে দুষ্কৃতীদের ঠেকিয়ে রেখেছিলেন বলে শুনেছি। পুলিশ এক দুষ্কৃতীকে ধরে বাকিদের সন্ধান চালাচ্ছে।”
মানবাজারের শেষ প্রান্তে মানবাজার-বরাবাজার রাস্তার পাশে পুরোহিত বাবলু মুখোপাধ্যায়ের একতলার বাড়ি। শুক্রবার রাতে বাড়ির পিছন দিকের বারান্দা লাগোয়া একটি ঘরে তিনি ছেলে সৌরভকে নিয়ে শুয়েছিলেন। অন্য ঘরে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। বাবলুবাবুর কথায়, রাত প্রায় পৌনে দু’টো নাগাদ হঠাত্ দড়াম শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। বারান্দার গ্রিল খোলার শব্দ কানে আসে। ডাকাত পড়েছে সন্দেহে তিনি ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে দেন। কিন্তু এরপর কিছুক্ষণ আর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তাঁদের সন্দেহ বাড়ে। বাবলুবাবু বলেন, “বারান্দা যাওয়ার দরজাটা একটু ফাঁক করে উঁকি মারতে গিয়ে দেখি তিন-চারজন লোক বাইরে দাঁড়িয়ে। মুর্হূতের মধ্যে তারা ঘরে ঢোকার জন্য তারা দরজা ঠেলে ধরে। আমি ও ছেলে ভিতর থেকে দরজার পাল্লা চেপে ধরি। বুঝেছিলাম, দরজা খুলে গেলে ওরা মেরে ফেলবে।”
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শনিবার সকালেও পড়শিদের ভিড়ের মধ্যে কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন ৫২ বছরের বাবলুবাবু। তাঁর ছেলে বছর তেইশের যুবক সৌরভ বলেন, “ওরা বাগানে পড়ে থাকা সিমেন্টের চাঙড় কুড়িয়ে এনে দরজায় আছাড় মারছিল। দরজার তলা দিয়ে তলোয়ার চালাল। একবার দরজার পাল্লা একটু খুলে গিয়েছিল। ফাঁক দিয়ে কাঠ ঢুকিয়ে আমার হাতে লাঠির ঘা মারল। যন্ত্রণা হলেও দরজা থেকে হাত সরাতে পারিনি।” ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে মানবাজার থানা। বাবলুবাবু চিত্কার করে মেয়েকে থানায় ফোন করতে ও পড়শিদের ডাকতে বলেন। তিনি জানান, প্রায় মিনিট পনেরো ধরে দরজা আটকে রাখার লড়াই চলে। ইতিমধ্যে দুষ্কৃতীদের কয়েকজন বাড়ির সামনের দিকের পাঁচিলের গ্রিলের দরজার তালা ভেঙে সদর দরজার গ্রিল কাটার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুলিশ দু’ভাগে চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ একজনকে পাকড়াও করে। পুলিশের দাবি, সে বার বার নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ রবিবার পুরুলিয়া আদালতে তাকে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy