Advertisement
E-Paper

ধান চাষে নতুন দাওয়াই জিরো-টিলেজ

কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও বা অনাবৃষ্টি। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার খামখেয়ালিপনায় মার খাচ্ছে চাষ। জেলার অধিকাংশ জমি বৃষ্টি পাতের উপর নির্ভর করায় কার্যত অনাবাদিও পড়ে থাকছে অনেক কৃষিজমি। তাই সঙ্কট কাটাতে এ বার জেলার চাষিদের বিনা কর্ষণে চাষ বা জিরো-টিলেজ পদ্ধতিতে ধান চাষে উত্‌সাহ দেওয়ার কথা ভাবছে জেলা কৃষি দফতর। দক্ষিণবঙ্গের বীরভূমে বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করেই বেশিরভাগ চাষের কাজ হয়। জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৬১০ হেক্টর। বৃষ্টি না হলে ৫১ হাজার হেক্টর জমি চাষ করা যায়।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:০৯
যন্ত্র দিয়ে একই সঙ্গে চলছে মাটি কাটা ও ধানের বীজ ছড়ানোর কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

যন্ত্র দিয়ে একই সঙ্গে চলছে মাটি কাটা ও ধানের বীজ ছড়ানোর কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও বা অনাবৃষ্টি। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার খামখেয়ালিপনায় মার খাচ্ছে চাষ। জেলার অধিকাংশ জমি বৃষ্টি পাতের উপর নির্ভর করায় কার্যত অনাবাদিও পড়ে থাকছে অনেক কৃষিজমি। তাই সঙ্কট কাটাতে এ বার জেলার চাষিদের বিনা কর্ষণে চাষ বা জিরো-টিলেজ পদ্ধতিতে ধান চাষে উত্‌সাহ দেওয়ার কথা ভাবছে জেলা কৃষি দফতর।

দক্ষিণবঙ্গের বীরভূমে বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করেই বেশিরভাগ চাষের কাজ হয়। জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৬১০ হেক্টর। বৃষ্টি না হলে ৫১ হাজার হেক্টর জমি চাষ করা যায়। বৃষ্টি নিয়মিত না হওয়ায় প্রতিবারই জেলায় কৃষি সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। কৃষি দফতর জেলার চাষিদের জিরো-টিলেজ পদ্ধতিতে উত্‌সাহ দেবার কথা ভাবছে সেই জন্যই। এর আগে, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার বা বর্ধমান জেলায় ওই পদ্ধতি যথেষ্ট সাড়া ফেললেও এই জেলার চাষিদের কাছে তা এক রকম নতুনই। মূলত যন্ত্র ও প্রযুক্তি নির্ভর এই পদ্ধতিতে চাষের পরিকাঠামো এখনও সীমিত। জেলা কৃষি দফতরের হাতে সবে মাত্র পাঁচটি যন্ত্র এসেছে। এগুলি হল তিনটি মহকুমা অভিযোজন কৃষি গবেষণা খামার, সাঁইথিয়ার জগন্নাথপুর মডেল ফার্ম ও হাটজনবাজারের রাষ্ট্রীয় কৃষি খামারে।

জেলার প্রতিটি কৃষি খামারে তো বটেই, জেলাজুড়ে এমন বেশ কয়েকটি প্রদর্শন ক্ষেত্র করে এই পদ্ধতিতে হাতে কলমে চাষ শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি দফতর। যার অধিকাংশ খরচ কৃষি দফতর বহন করবে। কৃষি অধিকারিক তথা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সঠিক ভাবে এই পদ্ধতি রপ্ত করে চাষ করতে পারলে অনেক সুবিধা পাবেন জেলার চাষিরা। কিভাবে সুবিধা পাবেন চাষিরা বা, জিরো-টিলেজ চাষ পদ্ধতি প্রসঙ্গে জেলার এক কৃষি আধিকারিক জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করলে বীজতলা করতে হয় চাষিকে। তার পর জমি প্রস্তুত করে ফের সেই বীজতলা থেকে ধান চারা তুলে নিয়ে জমিতে লাগাতে হয়। এতে জমিতে প্রচুর পরিমানে জলের প্রয়োজন। আর জিরো টিলেজ যন্ত্র ব্যবহার করলে বীজতলাই তৈরির প্রয়োজন হয় না। যে জমিতে ধান লাগানো হবে সেই জমিতেই সরাসরি চাষ করা যায় ওই যন্ত্রের সাহায্যে।

জিরো টিলেজ কী?

• ট্রাক্টরের সঙ্গে লাগানো যায়, এমন একটি যন্ত্র।

• আকার অনুযায়ী ৬-১১টি ফাল যুক্ত থাকে।

• উপরের দিকে দু’টি বাক্সের একটিতে ধানের বীজ, অন্যটিতে থাকে সার।

• বাক্স থেকে পাইপ দু’টি ফালের গা বারাবর যুক্ত থাকে।

• ট্রাক্টর জমিতে চলতে শুরু করলেই ফালগুলি মাটি খুঁড়ে গভীর দাগ দিয়ে যায়।

• পাইপ বেয়ে প্রয়োজনীয় বীজ ও সার জমিতে পড়তে থাকে।

• ট্রাক্টরটি একবার জমিতে ঘুরলেই চাষ শেষ।

সূত্র: জেলা কৃষি দফতর।

জেলা কৃষি দফতর চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে, অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি যেখানে জল জমে থাকে না, বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকলেও মাটি রাসালো নয়, সেই জমি নির্বাচন করতে। যন্ত্র নামনোর সাত দিন আগে প্রথমেই আগাছা নাশক ব্যবহার করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে জমির সব আগাছা ও ঘাস মরে যাবে। জমিতে বীজ ছড়ানোর দুদিনের মাথায় ফের একবার আগাছা নাশক ব্যবহার করতে বলছেন তাঁরা।

কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, ধান চারা বড় হলে ২০-২৫ দিনের মাথায় আরও একবার আগাছা নাশক ব্যবহার করে জমিতে বড়পাতাওয়ালা আগাছা মেরে দিতে হবে। ধানের বীজের সঙ্গে ধঞ্চে বীজ ছড়িয়ে দিলে একই সঙ্গে ধান ও ধঞ্চে চারা বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এই তৃতীয়বার আগাছা নাশক প্রয়োগের ফলে ধঞ্চে গাছগুলি মরে গিয়ে জমির প্রয়োজনীয় সার হিসাবে ব্যবহৃত হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, “মাঝারি মাপের বৃষ্টি হলেও আর সমস্যার থাকার কথা নয়।”

জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাবে আগে যে সব জমি চাষযোগ্য হত না, এখন এই পদ্ধতিতে সেই জমিতে চাষ সম্ভব। দুই, বীজতলা তৈরি করার প্রয়োজন নেই। বিলম্বিত বর্ষাতেও চাষ সম্ভব। এছাড়া ফসল পরিনত হতে একদিকে যেমন সময় কম লাগে, তেমনই খরচও কমে যায়। সবচেয়ে বড় ব্যপার কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন প্রায় হয় না বললেই চলে।”

চাষিরা এই পদ্ধতি কতটা গ্রহণ করবেন? আধিকারিক জানান, খরিফ ফসল চাষে এই প্রথম জিরো টিলেজের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পড়শি বর্ধমান জেলাতেও এই যন্ত্র দিয়ে চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জেলায় প্রদর্শন ক্ষেত্র করে চাষিদেরও এ ব্যাপারে উত্‌সাহ দেওয়া হবে। তাঁর দাবি, যেখানে একবিঘা জমি চাষ করতে কমপক্ষে ১৬জন শ্রমিকের প্রয়োজন, সেখানে একজন ট্রাক্টর চালক ও একজন সহকারি থাকলেই জমি চাষ সম্ভব। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এবার জেলায় বর্ষায় এ পর্যন্ত ভাল বৃষ্টিপাত হওয়ায় অধিকাংশ জমিতে জল রয়েছে। প্রদর্শন ক্ষেত্র করে দেখানোর কাজ এখনও বাকি। কারণ, জল জমে থাকা জমিতে এই যন্ত্র চালানো যাবে না।

paddy farming zero tillage dayal sengupta birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy