Advertisement
E-Paper

নজর নেই, উপেক্ষিতই নীল নির্জন

শান্ত, নীল বিস্তৃর্ণ জলাশয়। বছর পনেরো আগে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তৈরি হওয়া এই জলাশয় ‘নীলনির্জন’কে ঘিরেই একটা অন্যরকম ভ্রমণ স্থানের কথা ভাবা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বটে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বাইরে থেকে পর্যটক যেমন এখানে তেমন আসে না, তেমনই নির্জন ওই জায়গার পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য থাকলেও এখনও পর্যন্ত গড়েই ওঠেনি পর্যটনকেন্দ্র।  —নিজস্ব চিত্র।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য থাকলেও এখনও পর্যন্ত গড়েই ওঠেনি পর্যটনকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

শান্ত, নীল বিস্তৃর্ণ জলাশয়। বছর পনেরো আগে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তৈরি হওয়া এই জলাশয় ‘নীলনির্জন’কে ঘিরেই একটা অন্যরকম ভ্রমণ স্থানের কথা ভাবা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বটে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বাইরে থেকে পর্যটক যেমন এখানে তেমন আসে না, তেমনই নির্জন ওই জায়গার পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই কারণে অন্ত্যন্ত ভাললাগার জায়গা হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় বাসিন্দারাও খুব একটা নীলনির্জনে যেতে চান না।

বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই জলাশয়টি তৈরি হয়েছিল। এখন যে জায়গায় জলাশয় রয়েছে, তার মধ্যভাগে ছিল গোপালপুর নামে একটি আস্ত গ্রাম। ওই গ্রাম ছাড়াও মধুপা, ভোঁড়া, রাধামাধবপুর, মণিরামপুর, মতিজাপুর মেটেলা, গুণ্ডোবা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের জমি অধিগ্রহণ করে গড়ে উঠেছে ২৬৬৭ একর বিশিষ্ট জলাশয়টি। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ কলকাতার একটি সংস্থাকে দিয়ে জলাশয়টিকে আরও সাজিয়ে গুছিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। তখন জলাশয়ের এক প্রান্তে ছোটছোট কয়েকটি কটেজ তৈরি করা, গাছ লাগানো, বোটিং-এর ব্যবস্থা ছিল পর্যটকদের জন্য। কিন্তু বছর কয়কের মধ্যেই সেই সংস্থা সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।

কিন্তু কেন? যেটুকু জানা গিয়েছে, এর অন্যতম কারণ, জলাশয়ের পাশে বনদফতরের জায়গা রয়েছে। ওই জায়গার উপরে আর কোনও নতুন কিছু করায় বনদফতরের আপত্তি। এর পরবর্তী সময়ে মুর্শিদাবাদের এক ভদ্রলোক মাছ চাষের জন্য জলাশয় লিজ নেন। বেশ কয়েক বছর মাছ চাষ করার পর তিনিও বিদায় নেন। কিন্তু সেই সময় থেকেই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ওই জলাশয়কে গড়ে তোলার ভাবনায় চিড় ধরতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছে যেটুকু সাজানো গোছানো হয়েছে তাও। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বার এই জলাশয়ে মাছ ছাড়া হয়েছে এলাকার মৎস্যজীবীদের কথা ভেবে। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কোনও উদ্যোগ নেই। এলাকাবাসী বলছেন, কৃত্রিম জলাশয় হলেও নীল সবুজ রঙে মোড়া শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ, পরিযায়ী পাখিদের উপস্থিতি ওই জলাশয় শীতের জেলার অন্যতম সেরা পিকনিক স্পট হতেই পারে। এমনকী পরিচিত বক্রেশ্বর উষ্ণপ্রস্রবণ ও দুবরাজপুর পাহাড়েশ্বরের মামা-ভাগ্নে পাহাড় দেখতে আসার পাশাপাশি পর্যটকেরা এই জলাশয়ে আসতেন। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। উল্টে উপযুক্ত দেখভালের অভাবে এখানে অসামাজিক কাজকর্ম এবং সমাজ বিরোধীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। এমনকী বাঁধের উপর দিয়ে যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তাও বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজন। প্রয়োজন দুবরাজপুর শহর থেকে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কী বলছে তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ? বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মহীতোষ মাজি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “যেহেতু জলাশয়ের পাশেই বনদফতরের জায়গা। তাই ওই জায়গা ব্যবহারের অধিকার আমাদের নেই। নেই জলাশয়ে বোট চালানো বা মাছ চাষ করার অধিকারও। তাই পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কোনও উদ্যোগ আমারা অন্তত নিচ্ছি না। রাজ্য বা জেলা প্রাশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটা অন্য কথা।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “ওই জলাশয়টি অত্যন্ত মনোরম। সেটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে পর্যটকদের পিকনিক স্পট যাতে করা যায় সেটা দেখছি। ইতিমধ্যেই জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে ওই জায়গার কতটা কী ব্যবহার করা যায় তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”

কেউ কেউ বলছেন, বন দফতরের উদ্যেগে এই জলাশয় পক্ষীরালয় হিসেবেও গড়ে তোলা যেতে পারে। কারণ, শীতের সময় বড়ি হাঁস, ব্রাহ্মণী হাঁস, রাঙা মুড়ি হাঁসের মতো নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তো আসেই। সঙ্গে থাকে সরাল, বালিহাঁস, নানা জাতের পানকৌড়ির মতো প্রচুর পাখি। জেলা বনাধিকারিক সন্তোষা জি আর বলছেন, “বক্রেশ্বরের ওই জলাধারকে ঘিরে আমাদের তেমনই ভাবনা রয়েছে। যেমন এ বার শান্তিনিকেতনের একটি জলাশয়কে পরিযায়ী পাখিদের আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তেমন উদ্যোগে ওখানে নেওয়া যেতেই পারে। তবে তার আগে অনেকগুলি বিষয় অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।”

nil nirjan dubrajpur dayal sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy