Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ বছর পরে হুড়ার কলেজে হার টিএমসিপির

এক কলেজে নিরঙ্কুশ জয়। অন্য কলেজে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এ ভাবেই পুরুলিয়ায় নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দিল আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি। সোমবার পুরুলিয়ায় কলেজ ভোটের যা ফল বেরিয়েছে, তা শাসকদল তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। ফল থেকে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট: বাম ছাত্র সংগঠনগুলির বদলে পুরুলিয়ার কলেজ নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মূল প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে এসেছে এবিভিপি! যাদের কি না, গত বছরেও এই জেলায় সংগঠন বলে কার্যত কিছু ছিল না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

এক কলেজে নিরঙ্কুশ জয়। অন্য কলেজে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

এ ভাবেই পুরুলিয়ায় নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দিল আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি। সোমবার পুরুলিয়ায় কলেজ ভোটের যা ফল বেরিয়েছে, তা শাসকদল তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। ফল থেকে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট: বাম ছাত্র সংগঠনগুলির বদলে পুরুলিয়ার কলেজ নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মূল প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে এসেছে এবিভিপি! যাদের কি না, গত বছরেও এই জেলায় সংগঠন বলে কার্যত কিছু ছিল না।

কী বলছে এ দিনের ফল?

টানা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে হুড়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে এবিভিপি। যে কলেজে গত বছরও ২১টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে জিতেছিল টিএমসিপি, সেখানে এ বার তাদের ঝুলিতে স্রেফ ৪টি আসন! প্রায় একই ছবি ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজে। এখানে অল্পের জন্য ছাত্র সংসদের দখল নিতে পারেনি এবিভিপি। ২৩টি আসনের মধ্যে ১০টি পেয়েছে তারা। আর টিএমসিপি-র আসন সেখানে গতবারের ২২ থেকে কমে হয়েছে ৭। ছাত্র পরিষদের ঝুলিতে গেছে পাঁচটি। একটি আসনে জিতেছে এসএফআই। একই সঙ্গে জেলার অন্যতম বড় কলেজ, পুরুলিয়া শহরের জগন্নাথ কিশোর কলেজেও তিনটি আসন পেয়েছে এবিভিপি।

এ দিন পুরুলিয়ার ১০টি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। বাকি রয়েছে রঘুনাথপুর কলেজ ও নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট কলেজ। ভোট হওয়া ১০টি কলেজের মধ্যে পুরুলিয়া শহরের নিস্তারিণী মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ বাদ দিয়ে বাকি ন’টিতেই ক্ষমতায় ছিল টিএমসিপি। কিন্তু, এ বার টিএমসিপি জিতেছে ছ’টিতে। নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রী সংসদ গতবারের মতো এ বার ডিএসও-র দখলে গিয়েছে। ২৩টি আসনের মধ্যে তারা জিতেছে ১৯টিতে। ৪টি পেয়েছে এসএফআই। এ ছাড়া, লালপুর, ঝালদা এবং বাঘমুণ্ডির সুইসা নেতাজী সুভাষ আশ্রম মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা হারিয়েছে টিএমসিপি।

জেলার বাকি কলেজগুলির মধ্যে বলরামপুর কলেজ, মানবাজারের মানভূম কলেজ, বরাবাজারের বিক্রম টুডু মেমোরিয়াল কলেজ এবং পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল টিএমসিপি। তবে, বরাবাজারের কলেজে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে টিএমসিপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং তাদের সদস্য-সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ তুলেছিল এবিভিপি। এবিভিপি-র জেলা সভাপতি সুরজিৎ লায় এ দিন বলেন, “পুরুলিয়ার যে কলেজগুলিতে বিনা লড়াইয়ে জিতেছে টিএমসিপি, সেখানে ওরা সন্ত্রাস করে আমাদের প্রার্থীই দিতে দেয়নি। গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই হলে ওই কলেজগুলির ফল অন্য রকম হত।” একই বক্তব্য বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

হুড়ার কলেজের ফল অবশ্য চমকে দিয়েছে জেলার সবাইকেই। বস্তুত, এই কলেজে এসএফআইয়ের ভোটের বড় অংশ ভেঙে তাদের দিকে যাওয়া এবিভিপি-র সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রকাশ্যে অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্ব। ওই কলেজের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা এবিভিপি নেতা আব্দুল আলিম আনসারির দাবি, “গত পাঁচ বছর ধরে লালপুরে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছিল টিএমসিপি। ছাত্র সংসদ পরিচালনার নামে দুর্নীতি আর সন্ত্রাস করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল ওরা। সেই কারণেই ছাত্রছাত্রীরা সুস্থ ছাত্র সংসদ গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সমর্থন করেছেন।”

সোমবার কলেজ ভোটের জন্য কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। ব্যতিক্রম ছিল না লালপুরও। ফল প্রকাশের প্রথম দিকে খবর আসে, টিএমসিপি কয়েকটি আসনে জিতেছে। তাদের সমর্থকরা পটকা ফাটাতে শুরু করেন। চলে আসেন তৃণমূলের ব্লক স্তরের কিছু নেতা এবং বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। কিন্তু, সময় গড়ানোর সাথে সাথেই স্পষ্ট হয়ে যায়, পাঁচ বছর পরে ছাত্র সংসদের দখল হারাতে চলেছে তৃণমূল। সেই সময়ে উপস্থিত তৃণমূল সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে এবিভিপি-র শিবিরের দিকে এগোলেও আটকে দেয় পুলিশ। বিকেলের পর থেকে এবিভিপি-র সদস্য-সমর্থকেরা বিজয় মিছিল করেন।

চমকে দেওয়া ফল ঝালদার কলেজেও করেছে এবিভিপি। কংগ্রেসের অন্যতম গড় হিসাবে পরিচিত ঝালদায় এবিভিপি-র উত্থান যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। এখানে এবিভিপি-র ভাল ফলের পিছনে অন্যতম কারণ এলাকার টিএমসিপি নেতা মিঠুন মাহাতোর অনুগামীদের নিয়ে এবিভিপি-তে যোগদান। তা ছাড়া, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি বিজেপি-তে মিশে যাওয়ায় আদিবাসী পড়ুয়াদের বড় অংশের ভোটও এবিভিপি পেয়েছে। তবে টিএমসিপির জেলা সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতোর দাবি, “ঝালদার কলেজে এবিভিপি বেশি আসনে জিতলেও সেখানে তারা ছাত্র সংসদ দখল করতে পারবে না। ছাত্র পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে ঝালদায় সংসদ গড়বে টিএমসিপি।” ঝালদায় জোটের কথা বললেও জঙ্গলমহলের আর এক ব্লক বাঘমুণ্ডির সুইসার কলেজের ছাত্র সংসদের দখল কিন্তু এই ছাত্র পরিষদের হাতেই খোওয়াতে হয়েছে টিএমসিপি-কে। ওখানে গতবার ১২টি আসনের সবক’টিই জিতেছিল টিএমসিপি। এ বার ছাত্র পরিষদ পেয়েছে ৮টি এবং টিএমসিপি ৩টি। টাই হয়েছে বাকি একটি আসনে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর যুক্তি, “সংসদীয় রাজনীতিতে কোনও শূন্যস্থান থাকে না। বামফ্রন্ট সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার ফলে সেই জায়গা দখল করতে শুরু করেছে বিজেপি। লালপুরে আমাদের ভোট কমেনি। বরং এসএফআইয়ের ভোট বিজেপি-র দিকে যাওয়ায় জেলার অন্যান্য কলেজের তুলনায় ওখানে কিছুটা অন্য ফল হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE