Advertisement
E-Paper

পুজোর মুখেও রাস্তা সংস্কার হয়নি, ক্ষোভ

রামপুরহাট কামারপট্টি মোড়। রবিবারের সকাল। মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে। তবে খুব একটা জোরে নয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রামপুরহাট সংলগ্ন আশপাশ গ্রাম থেকে পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। মাড়গ্রাম থানার ছোট চৌকি গ্রামের হরেন মাল তাঁর পরিবারকে নিয়ে ছাতা মাথায় কামারপট্টি মোড় পার হতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
বেহাল নিকাশির জন্য জল জমেছে গুরুপল্লি রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র।

বেহাল নিকাশির জন্য জল জমেছে গুরুপল্লি রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট কামারপট্টি মোড়। রবিবারের সকাল। মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে। তবে খুব একটা জোরে নয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রামপুরহাট সংলগ্ন আশপাশ গ্রাম থেকে পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। মাড়গ্রাম থানার ছোট চৌকি গ্রামের হরেন মাল তাঁর পরিবারকে নিয়ে ছাতা মাথায় কামারপট্টি মোড় পার হতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন। ক্ষোভের সুরে বললেন, “একে খানাখন্দে ভরা রাস্তা। তার উপর সামান্য বৃষ্টিতেই দেশবন্ধু রোডের মুখে রাস্তার জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ বৃষ্টির জলে টইটম্বুর।”

রবিবারের সকালেও দেশবন্ধু রোডের মুখ কামারপট্টি মোড় থেকে হাটতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সার সার গাড়ি। যন্ত্রচালিত ভ্যান থেকে সাইকেল, রিকশা, তারাপীঠ থেকে রামপুরহাট স্টেশন অভিমুখে যাওয়া যাত্রী বোঝাই অটো, মালবোঝাই ম্যাটাডর কী গাড়ি নেই! তার উপর বাজার করতে এসে দোকানের সামনে সাইকেল, মোটরবাইক, গাড়ি দাঁড় করানো। বছর পঞ্চাশের হরেনবাবু দোকান থেকে বেরিয়ে কী করে কোন পথ দিয়ে হেঁটে কামারপট্টি মোড় হয়ে বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য রাস্তা ধরবেন ভেবে পাচ্ছেন না। দু’হাতে সদ্য কেনা কাপড়ের দুটো ঝোলা। জল-কাদার রাস্তায় ঝোলা দুটো আড়াল করবেন, না নিজেকে সামাল দেবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না হরেনবাবু। অবশেষে সারবদ্ধ গাড়ির পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতেই আচমকা একটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চাকা গড়তেই গর্তে জমে থাকা জল হরেনবাবুর জমা ভিজিয়ে দিল। জলের ছিটে লাগল নতুন কাপড়ের ব্যাগেও। তা দেখে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে পরিবারের সদস্যদের বলে উঠলেন, “এর থেকে গ্রামের রাস্তা ঢের ভাল।”

শুধু কামারপট্টি মোড় নয়। রামপুরহাট ডাক্তার পাড়ার ভিতর জলট্যাঙ্কি লাগোয়া এলাকা থেকে রামপুরহাট থানা, ঘটপুকুর মোড় থেকে ভাঁড়শালা পাড়া, রামপুরহাট কোর্টের সামনে থেকে থানাপাড়া, রামপুরহাট হাটতলা মোড় থেকে মাদ্রাসা যাওয়ার পথ খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টিতেই ওই সব খানাখন্দ জলে ভর্তি হয়ে আছে। রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য ওই সব রাস্তায় সাইকেল, রিকশা, বাইক নিয়ে স্টেশন বা হাসপাতাল যাওয়া কার্যত ছেড়েই দিয়েছেন বলে দাবি বাসিন্দাদের। আবার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুপল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দা স্বপন মণ্ডলের বাড়ি থেকে সাধন সরকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় এখনই হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল বলেন, “রাস্তা যে কবে সংস্কার হয়েছে মনে পড়ছে না। তার উপর নিকাশি নালা নেই। রাস্তা সংস্কার এবং নিকাশি নালা’র দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার পুরসভায় লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়ে আসছে। কিন্তু পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।” তাঁদের অভিযোগ, বর্যায় রাস্তায় জল জমা না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সামনে উৎসবের মরসুম। তার আগে রাস্তা সংস্কার না করা হলে পুরসভা এলাকাবাসীর জন্য কি পরিষেবা দেবে?

১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবায়ন ধীবর বলেন, “সাত মাসের বেশি হবে। ডাক্তারপাড়া, ঘটপুকুর পাড়ের রাস্তা অর্ধেক তৈরি করে ফেলে রেখে দিয়েছে পুরসভা। এতদিন শুনছিলাম পুরসভা ইউসি জমা দেওয়ার পর কাজের প্রগ্রেস রিপোর্ট সরকারের ঘরে জমা দেয়নি। সেই জন্য বাকি টাকাও পাওয়া যায়নি। এ বার তো টাকা এসেছে। ধুলাডাঙা রোড এক বার সংস্কার করার পর আবার তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করা হল। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে ডাক্তার পাড়া, জলট্যাঙ্কি সংলগ্ন বেহাল রাস্তা কবে সংস্কার করবে পুরসভা?” অন্য দিকে, পুরসভার অধিকাংশ নাগরিকেদের অভিযোগ, “নতুন জল প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহ করার সময় এলাকার প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তো বটেই, ছোট ছোট গলির রাস্তা কেটে একাকার করে দিয়েছে পুরসভা। জলের সংযোগ মিলেছে প্রায় ছ’মাস আগে। অথচ ওই সমস্ত রাস্তার কাটা অংশ ভরাট করা হচ্ছে না।”

স্বাভাবিক ভাবে পুজোর মুখেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে ছোট ছোট রাস্তাও এখনও পর্যন্ত সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে। তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি অবশ্য দাবি করেন, “শহরের যে সমস্ত পিচ রাস্তা আছে, সেই সমস্ত রাস্তাগুলি পুজোর মুখে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। দু’দিন বৃষ্টির জন্য সেই কাজ থমকে আছে। বৃষ্টি থামলে আবার কাজ শুরু হবে। পুজোর আগে শেষ হয়ে যাবে।” অন্য দিকে, ঢালাই রাস্তাগুলি এখনই করা হবে না বলে পুরপ্রধান জানান। রাস্তা কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য যে সমস্ত প্রধান প্রধান রাস্তা কাটা হয়েছে, সেগুলি ভরাট করার কাজও শুরু হয়েছে। ছোটখাটো রাস্তার কাটা অংশ ভরাট করার দায়িত্ব কাউন্সিলরদের।”

road repair apurba chattopadhyay rampurhat grievance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy