Advertisement
E-Paper

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বহাল শব্দবাজি

কালীপুজো ও দীপাবলিকে ঘিরে চারদিক যেমন আলোকমালায় সেজে ওঠে তেমনই পোড়ানো হয় বাজি, রংমশাল, তুবড়ি, ফুলঝুরি, চরকির মতো আতসবাজি। তার পাশাপাশি কান ঝালাপালা করে দেওয়ার মত চকোলেট, দোদমা, কালী পটকা বা আলুবোমার মতো বাজি ফাটে। বীরভূম জেলাও ব্যতিক্রম নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৪
সিউড়ির বাজারে আতসবাজি।  —নিজস্ব চিত্র

সিউড়ির বাজারে আতসবাজি। —নিজস্ব চিত্র

কালীপুজো ও দীপাবলিকে ঘিরে চারদিক যেমন আলোকমালায় সেজে ওঠে তেমনই পোড়ানো হয় বাজি, রংমশাল, তুবড়ি, ফুলঝুরি, চরকির মতো আতসবাজি। তার পাশাপাশি কান ঝালাপালা করে দেওয়ার মত চকোলেট, দোদমা, কালী পটকা বা আলুবোমার মতো বাজি ফাটে। বীরভূম জেলাও ব্যতিক্রম নয়।

রামপুরহাট, বোলপুর, লাভপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ি এবং দুবরাজপুরের মতো জেলার বিভিন্ন বাজারে আতসবাজির সঙ্গে কোথাও প্রকাশ্যে কোথাও আড়ালে বিকোচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। তবে মূলত দু’টি কারণে কালীপুজোয় শব্দবাজি মাত্রাতিরিক্ত বেচাকেনা হয়নি বলেই দাবি জেলার ব্যবসায়ীদের। কারণ, প্রশাসনের নজরদারির, দুই অন্য জেলায় যেখানে কালীপুজোতেই বাজি বিক্রির পরিমাণ বাড়ে, সেখানে এই জেলায় বাজি বিক্রির পরিমাণ বা বাজার মূলত দুর্গাপুজোকে ঘিরেই মত জেলার ব্যবসায়ীদের।

কালীপুজোর রাতে কেমন ছবি ধরা পড়ল? সিউড়ি, রামপুরহাট, বোলপুর, দুবরাজপুর প্রত্যেকটি জায়গায় রাত ১২টা পর্যন্ত শব্দবাজির প্রকোপ ছিল বলেই জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। তবে ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দমাত্রা বাজি ফাটানো নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ প্রশাসনের কাছে করছেন এমনটাও কিন্তু নয়। জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, “শুধু বাজি নয় কালী পুজোকে ঘিরে মদ ও জুয়ার ঠেক থেকে অশান্তি না ছড়ায় সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসন অতিরিক্ত সচেতন ছিল। অভিযানও চলেছে গত সাত দিন ধরে। ধরপাকড়ও হয়েছে। যার ফলে প্রকাশ্যে শব্দবাজি বিক্রির ঘটনা তেমন নজরে পড়েনি।” প্রশাসন যাই দাবি করুক রামপুরহাটের বাজারে প্রকাশ্যে এবং আড়ালে চকোলেট, কালীপটকার মতো শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে। শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে লাভপুর, বোলপুর, দুবরাজপুরের মতো বিভিন্ন এলাকাতেও। তবে শব্দবাজির চল বর্তমানে শহরাঞ্চল ছেড়ে গ্রামগঞ্জেই বেশি। পুলিশের নজরদারি থেকে বাঁচতে শহরের পাইকারি দোকান থেকে বাজি কিনে নিয়ে সেই বাজি গ্রামে গ্রামে মুদিখনা, পানের দোকান এমনকী রাস্তার কোথাও চৌকি পেতে শব্দবাজি ও আতসবাজি কেনা বেচা করে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি বাক্স চকোলেট বোমা বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ আবার নামী কোম্পানির প্যাকেট থেকে আলাদা করে প্লাস্টিকের প্যাকেটে বিক্রি করছেন।

প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দুবরাজপুরের বাজি বিক্রেতা আলোক রুজ, সিউড়ির প্রবীণ বাজি বিক্রেতা প্রভাতকুমার দাস বলছেন, “শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পর করেক বছর ধরেই তা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। যাঁরা ক্রেতা তাঁরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শব্দবাজি ছেড়ে আতসবাজির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন।” অন্য দিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবরাজপুর, বোলপুর, রামপুরহাটের অনেক বজি বিক্রেতা বলছেন, “সারা বছর বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে বাজি বিক্রি করলেও বাজির মূল সময় বলতে দুর্গাপুজোর পাঁচদিন ও কালীপুজোর দু’দিন। সেই সময় যদি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শব্দবাজির জোগান না দিতে পারি, তা হলে বাজার মার খাবে। বর্তমানে চাহিদা কমলেও এখনও শব্দবাজি না হলে ক্রেতার মন উঠতে চায় না।” রামপুরহাটের এক বিক্রেতার কথায়, “রামপুরহাটের খুব কাছেই মুলুটি (ঝাড়খণ্ড সীমানার মধ্যে)গ্রাম পড়ছে। আমরা বিক্রি না করলে শব্দবাজি সেখান থেকে আসতে কোনও মানা নেই। তা ছাড়া জাজিগ্রাম, উদয়পুরে কালীপুজো নিয়ে যে হিড়িক সেখানে আতসবাজিতে থেমে থাকতে চান না ক্রেতারা।”

নিষিদ্ধ শব্দবাজি নিয়ে দুবরাজপুর ও সিউড়ির বাজি বিক্রেতাদের কেউ কেউ বলছেন, গ্রামাঞ্চলে খড়ের ছাউনি বাড়ি বেশি বলে তুবড়ি, হাউই, চরকির মতো আতসবাজির চেয়ে মাটিতে যে বাজি ফাটে এমন বাজিই পছন্দ করেন। লাভপুরের বিভিন্ন দোকানে প্রাকশ্যে শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রিত বাজি বিক্রি করলেও ওই ব্লকের পূর্ণা ও কুরুম্বা অঞ্চলের এক শ্রেণির বাজি কারিগদের তৈরি বাজির চাহিদা তুঙ্গে। চকোলেট বোমা, আলু বোমা এবং শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রিত মাত্রার থেকে অনেক বেশি শব্দ করে ফাটে— কিন্তু এগুলি নিয়ে ধরপাকড় চলেছে বা বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমন খবর নেই। বিক্রেতাদের প্রশ্ন, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজার থেকে শব্দবাজি তৈরি হয়ে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত পৌঁছলে লোভেপড়ে তা বিক্রি করবেনই বিক্রেতারা। একই বক্তব্য ক্রেতাদেরও। শব্দবাজি তৈরি যদি সম্পূর্ণ বন্ধ না হয় তা হলে উৎসবে শব্দবাজি ফাটাবেই।

firecrackers kali pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy