Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিকের দাপট, কোণঠাসা গ্রামীণ শিল্প

ঢেকার মেলা সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে এই আপ্ত বাক্যটি। বছর কয়েক আগেও এলাকার মানুষ টের পেতেন, রাত পোহালেই মেলা। কারণ ওই সময় রাতভোর একে একে মাটির হাঁড়ি-কলসি বোঝাই গাড়ি নিয়ে কুমোরের দল ভিড়ত মেলার মাঠে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৩

‘হোলা আর খোলা, এই নিয়ে ব্রহ্মদৈত্যের মেলা!’

ঢেকার মেলা সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে এই আপ্ত বাক্যটি। বছর কয়েক আগেও এলাকার মানুষ টের পেতেন, রাত পোহালেই মেলা। কারণ ওই সময় রাতভোর একে একে মাটির হাঁড়ি-কলসি বোঝাই গাড়ি নিয়ে কুমোরের দল ভিড়ত মেলার মাঠে। বাঁশের তৈরি ঝুড়ি-কুলো নিয়ে কলরব করতে করতে যেতেন বিত্তাররা। সেই মেলাই এখন জৌলুস হারিয়েছে। বিকল্প প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে কোনঠাঁসা হয়ে পড়েছে ওই সব গ্রামীণ কুটির শিল্প। পর পর কয়েক বছর দুষ্কৃতীদের হামলায় গোলমালের জেরে তাই মেলার পরিচিত সেই পদধ্বনি আজ আর শোনা যায় না!

চেনা মেলা বদলে যাচ্ছে দ্রুত। সে নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই। তবুও এলাকার মানুষের কাছে ওই মেলাটি আজও আক্ষরিক অর্থেই মিলনের স্থল। দীর্ঘদিন ধরেই ঢেকা গ্রাম লাগোয়া মাঠে মাঘের প্রথম দিন এক দিনের ওই মেলা বসে। মেলাটি ঢেকার মেলা হিসাবেও পরিচিত। শুধু ময়ূরেশ্বরই নয়, লাগোয়া লাভপুর এমন কী মুর্শিদাবাদের বিস্তৃণ অঞ্চলের মানুষ ওই মেলায় ভিড় জমান। কিন্তু বছর তিনেক আগে বিশৃঙ্খলার জন্য অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

লাভপুরের ভোগপুরের সুশান্ত মণ্ডল, মুর্শিদাবাদের মাজিয়ারার জীতেন ঘোষরা বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে বাবার হাত ধরে ওই মেলায় গিয়েছি। নানা গৃহস্থালি জিনিস হাত বোঝাই করে বাড়ি ফিরেছি। ক্রমে মেলায় ওই সব জিনিস কেনার প্রয়োজন কমেছে। তবু অনেকের সঙ্গে দেখা, সাক্ষাতের জন্য মেলায় যাই। কিন্তু এখন বদলে যাওয়া মেলায় আর যেতে মন চায় না।”

একই বক্তব্য ছোটতুড়িগ্রামের রমজান আলি, প্রজাপাড়ার সুলেমান সেখদের দাবি, “এক সময় আমরা সপরিবারে গরুর গাড়িতে মেলায় যেতাম। মাটির হাড়িতে রসগোল্লা কিনে গাড়ির নিচে বসে খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু একবার বাইরে থেকে কিছু লোকের এসে ঝামেলা বাধাবার পর, মিস্টির হাঁড়ি ফেলে পালিয়ে আসতে হয়। তার পর থেকে আর পরিবারের লোকেদের নিয়ে যেতে সাহস পাই না।”

কোনও একবার গামলায় রসগোল্লা ভাসতে দেখে একটি ছেলে নাকি তার বাবাকে বলেছিল, ‘বাপ গো পানিতে হাবুডুবু খেলছে অই দুটি খাবু’! মেলায় গিয়ে গাড়ির নীচে বসে মিষ্টি খাওয়ার সে সব দৃশ্য হারিয়ে যেতে বসেছে এখন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লোকপাড়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রভাকর মণ্ডল, রেশন ডিলার উত্তম দে বলেন, “মেলায় এসে ওই গল্প বলেননি, এমন লোক কমই আছেন। মিষ্টি খাওয়ার নানা স্মৃতি এই মেলার।”

নিরাপত্তার কারণেই মেলা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিছেন বিক্রেতারাও। দাসপলসার তেলেভাজা বিক্রেতা মনোহর দাস, রামনগরের মিষ্টির দোকানদার রমেশ রুজরা জানান, মেলায় বিক্রিবাটা ভালই হয়। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণে ওই মেলায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

মেলার নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সেই কারণেই সরব এলাকার মানুষ। ঢেকার স্বাধীন মণ্ডল, দু’কড়ি মণ্ডলরা বলেন, “একসময় মেলার আগে সারা রাত ধরে পসরা নিয়ে বিক্রেতারা মেলায় আসতেন। বড়ো মুখ করে আত্মীয়দের মেলায় আসার নিমন্ত্রণ জানাতাম। মেলার সুনামই ছিল আলাদা। প্রশাসনের উচিত সেই সুনাম ফেরাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।”

কী বলছেন এলাকার প্রশাসন?

ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “মেলার ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ বার।”

pastic cottage industry handicrafts mayureshwar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy