Advertisement
E-Paper

পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতি রুখতে এ বার নতুন দাওয়াই স্মার্টফোন

পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা আনতে এ বারে স্মার্টফোন দেওয়া হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের। শুধু তাই নয়, একটি বিশেষ সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামের নানা উন্নয়নমূলক কাজের সামগ্রিক চিত্রও তুলে ধরা হবে। সেটাও করা হবে এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে, তবে আপাতত এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে রাজ্যের ৯টি জেলার যে এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে আইএসজিপি (গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বশক্তিকরণ প্রকল্প) প্রকল্প চলছে সেগুলিতেই।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৭
কে রুখবে ফাঁকি? ১০০ দিন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ। —ফাইল চিত্র

কে রুখবে ফাঁকি? ১০০ দিন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ। —ফাইল চিত্র

পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা আনতে এ বারে স্মার্টফোন দেওয়া হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের।

শুধু তাই নয়, একটি বিশেষ সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামের নানা উন্নয়নমূলক কাজের সামগ্রিক চিত্রও তুলে ধরা হবে। সেটাও করা হবে এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে, তবে আপাতত এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে রাজ্যের ৯টি জেলার যে এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে আইএসজিপি (গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বশক্তিকরণ প্রকল্প) প্রকল্প চলছে সেগুলিতেই। ইতিমধ্যেই এই এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের হাতে একটি করে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু স্মার্টফোন তুলে দেওয়াই নয়, এই ব্যবস্থায় কাজ শুরু হলে যে কোনও মানুষ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ক্লিক করেই সব কিছু জানতে পারবেন।

স্মার্টফোনের খরচ বিশ্বব্যাঙ্ক বহন করলেও এই ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক এবং রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের যৌথ আলোচনায়। আইএসজিপি প্রকল্পে ২০১০ সাল থেকে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে অর্থ সাহায্য করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। এই প্রকল্পটি চলবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এক হাজারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক খরচ করছে মোট এক হাজার কোটি টাকা। আইএসজিপি প্রকল্পের মূল কথা হল, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কীভাবে টাকা খরচ করবে এবং হিসাব রাখবে সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, রাস্তা-সহ বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কাজে অর্থ সাহায্য করা। ।

বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা তো বটেই রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের পক্ষ থেকেও নিয়মিত প্রকল্পের কাজে নজরদারি চালানো হয়। কিন্তু জনগণের নজরদারির ঘাটতি ছিল। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেই ঘাটতি দূর করার চেষ্টা হচ্ছে বলে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। স্মার্টফোনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি প্রধানকে একটি করে তাঁর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানচিত্রও দেওয়া হয়েছে। সেই মানচিত্রে কোন রাস্তা জেলা পরিষদের, কোন রাস্তা গ্রাম পঞ্চায়েতের এবং কোন রাস্তা পূর্ত দফতরের সেইসব বিবরণ দেওয়া আছে। সেইসব রাস্তার কাজে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার না বিশ্বব্যাঙ্ক কার টাকা ব্যবহার করা হবে তা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেই চিহ্নিত করতে হবে। কোন কাজ একশো দিনের প্রকল্পে করা হবে সে বিষয়টিও মানচিত্রে চিহ্নিত করতে হবে। পুরো পরিকল্পনাটি স্মার্টফোনে আপলোড করে তা পাঠিয়ে দিতে হবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে। পরবর্তীকালে পরিকল্পনা মোতাবেক কতটা কাজ হল সে বিষয়টিও ছবি-সহ তুলে পাঠাতে হবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের ওয়েবসাইটে। এই কাজটি করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে হবে স্মার্টফোন। ওয়েবসাইট ক্লিক করে গ্রামবাসীরা তো বটেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের কর্তারাও জানতে পারবেন কাজের অগ্রগতি। এতে অনেক ফাঁকিও ধরা পড়বে বলে দাবি করেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের কর্তারা। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা জানান, গ্রাম সংসদের বৈঠক বাধ্যতামূলক হলেও অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রামবাসী সংসদের বৈঠকে হাজির না হলেও তাঁদের নাম লিখে তা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহার করা হলে হিসাবের এই ফাঁকি ধরা পড়ে যাবে। কারণ, ঠিক কতজন গ্রামবাসী সংসদের বৈঠকে হাজির হলেন তার ছবি স্মার্টফোনের মাধ্যমে তুলে তা ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতে হবে। স্মার্টফোনে থাকছে জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সিস্টেম) সংক্রান্ত বিশেষ সফটওয়্যার। পঞ্চায়েতগুলি কাজের ভিত্তিতে জিআইএস ব্যবস্থায় এলাকার ভৌগলিক মানচিত্র তৈরি করবে। তার ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি চালানোর কাজ সহজ হবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের কর্তাদের পক্ষে। ওয়েবসাইট ক্লিক করে সব সব তথ্য জানতে পারবেন গ্রামবাসীরাও। আইএসজিপি প্রকল্পের বীরভূমের জেলা সঞ্চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “নতুন ব্যবস্থায় নজরদারি আরও পোক্ত হওয়ায় দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার দিকেও এগোনো যাবে। কোনও সংসদকে কাজের ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হচ্ছে কিনা, কিংবা কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের দখলে থাকা সংসদেই বেশি কাজ হচ্ছে কিনা সে সবই এই ব্যবস্থায় যে কেউ জানতে পারবেন।” এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও সম্ভব বলে রফিকুল জানিয়েছেন।

তবে স্মার্টফোন একটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ব্যবস্থা। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা তা কতটা ব্যবহার করতে পারবেন সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে তাঁদের নিজেদের মধ্যেই। হাওড়া জেলার আমতা ১ ব্লকের কানপুর গ্রাম পঞ্চায়ের প্রধান নাসিম তরফদার বলেন, “স্মার্টফোন তো হাতে পেয়েছি। কিন্তু কীভাবে ব্যবহার করব তা বুঝে উঠতে পারছি না।” একই সংশয়ের কথা জানান একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের এক কর্তা জানান, যে সব পঞ্চায়েতের প্রধান ওই স্মার্টফোন ব্যবহার করতে মুশকিলে পড়বেন, সেখানে নির্মাণ সহায়ক বা পঞ্চায়েতের অন্য কোনও কর্মী তা দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় তথ্য আপলোড করবেন। কারণ, নিয়মিত বাধ্যতামূলক ভাবে ওই তথ্য পাঠানো টাকা মেলার অন্যতম শর্ত। ফলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি কোনও ভাবেই স্মার্টফোন ব্যবহার এড়িয়ে যেতে পারবে না।

অন্য চিত্রও আছে, বীরভূমের কয়েকজন প্রধানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পরে খয়রাশোলের পারশুণ্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান মায়া দাস, মহম্মদবাজারের গণপুর পঞ্চায়েতের নীলমণি হেমব্রম বা দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিনয় বাগদিরা বলেন, “নতুন ব্যবস্থাটি ভালোই।”

(সহ প্রতিবেদন: নুরুল আবসার)

to stop corruption at panchayat wok smartphone is the solution dayal sengupta suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy