Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পথবাতি থেকে হুকিং, বিল মেটাচ্ছে পুরসভা

বাড়ি-দোকান-ক্লাবঘরে ছিলই। এ বার বিয়েবাড়ি, পুজো মণ্ডপ, জলসার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান মঞ্চেও হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। হুকিং করা হচ্ছে পুরসভার পথবাতির বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকেই। আর সেই বিল মেটাতে গিয়ে বেগতিক অবস্থায় পড়েছে পুরসভা। এমনটাই অভিযোগ করছেন খোদ দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে। তৃণমূল পুরপ্রধানের দাবি, “ওই হুকিংয়ের জেরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থাকা পথবাতির বিদ্যুতের বিল বাবদ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমকে মাসে মাসে প্রায় লাখ খানেক টাকার বিল মেটাতে হচ্ছে।”

প্রকাশ্যে এ ভাবেই হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি চলছে দুবরাজপুরে।  —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ্যে এ ভাবেই হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি চলছে দুবরাজপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

বাড়ি-দোকান-ক্লাবঘরে ছিলই। এ বার বিয়েবাড়ি, পুজো মণ্ডপ, জলসার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান মঞ্চেও হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। হুকিং করা হচ্ছে পুরসভার পথবাতির বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকেই। আর সেই বিল মেটাতে গিয়ে বেগতিক অবস্থায় পড়েছে পুরসভা। এমনটাই অভিযোগ করছেন খোদ দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে। তৃণমূল পুরপ্রধানের দাবি, “ওই হুকিংয়ের জেরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থাকা পথবাতির বিদ্যুতের বিল বাবদ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমকে মাসে মাসে প্রায় লাখ খানেক টাকার বিল মেটাতে হচ্ছে।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পথবাতি হিসেবে শহরের বুকে বিদ্যুৎ খুঁটিগুলিতে প্রায় হাজার তিনেক বাতি (সোডিয়াম ভেপার, মারকারি ভেপার, টিউব, সিএফএল) ঝোলানো রয়েছে। ওই আলো জ্বালাতে কত বিদ্যুৎ খরচা হচ্ছে, তা পরিমাপ করতে নিগম ট্রান্সফর্মারগুলিতে পৃথক ভাবে বিশেষ মিটার লাগিয়েছে। অভিযোগ, বিদ্যুৎবাহী তারের যে ‘ফেজে’ পথবাতিগুলিকে সংযোগ করা হয়েছে, সেই তার থেকেই যথেচ্ছ ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বসতবাড়ি, দোকান বা ক্লাবঘরে যেমন হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে, তেমনই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উৎসব অনুষ্ঠান, পুজো, বিয়েবাড়িতেও বিদ্যুৎ চুরির পুরসভার নজরে এসেছে। বিদ্যুৎ চুরির বাড়তি সেই বোঝা আবার বহন করতে হচ্ছে পুরসভাকেই। পীযূষবাবুর দাবি, এ বিষয়ে বহুবার নিগমকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বললেও কোনও লাভ হয়নি।

বিদ্যুৎ চুরির এমন অভিযোগ আবার শুধু মাত্র দুবরাজপুর পুরসভাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত যেমন বলছেন, “শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। পথবাতির ফেজ থেকেই বিদ্যুৎ চুরি করার জন্য সেই বিলের দায়ভার আবার পুরসভাকেই নিতে হচ্ছে।” সিউড়ি পুরসভার পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, “শহরে বিদ্যুৎবাহী চারটি তারের মধ্যে একটি ফেজ পুরসভার পথবাতির জন্য নির্দিষ্ট। বিদ্যুৎ চুরি হলে পুরসভাকেই বিল চোকাতে হয়। তাই হুকিং আটকাতে আমরা নিগমকে পথবাতির জন্য নির্দিষ্ট ফেজ বা তারটিকে ঢেকে দিতে বলেছি।” একই দাবি বিপ্লববাবুরাও।

দুবরাজপুর পরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা নিগমকে জমা করতে হয়েছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র পথবাতি জ্বালানোর খরচ বাবদই ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। সব থেকে বড় কথা হল ওই বিপুল পরিমাণ টাকার পুরোটাই পুরসভা মিটিয়ে ‘উন্নয়ন খাত’ থেকে। এলাকার একাংশের মানুষের বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ চুরির জেরে ব্যহত হল এলাকারই উন্নয়নের বেশ কিছু কাজ। অভিযোগ, নিগম যেমন হুকিং ঠেকাতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তেমনই রাজনৈতিক স্বার্থেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটা অংশও তা রুখতে কোনও পদক্ষেপ করেননি। ভোট-ব্যাঙ্ক অটুট রাখতে অনেকেই হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির প্রতিবাদ না করে এখন নিগমের ঘাড়েই সব দায় চাপাচ্ছেন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ পুর এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন একটি অংশ। নিগমের এক জেলা আধিকারিক আবার বলছেন, “বিদ্যুৎ চুরি সর্বত্রই হচ্ছে। বিশেষ করে শ্যালো-বমার্সিবলগুলিতে। একই ভাবে পুরসভার পথবাতির সঙ্গে যুক্ত তার থেকেও বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। এ সব রুখতে গেলে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন।”

এ দিকে, নিগমের দুবরাজপুর শাখার স্টেশন ম্যানেজার অমরনাথ দত্ত বলছেন, “আমি সবে দায়িত্বে এসেছি। ভাল করে না জেনে এবং তদন্ত না করে এ নিয়ে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না।” অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের রিজিওনাল ম্যানেজার (বীরভূম) তপন দে অবশ্য জানিয়েছেন, এই জেলার কোনও পুরসভা থেকেই এমন কোনও অভিযোগ আসার কথা তাঁরা জানা নেই। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এলে এমনিতেই অভিযান চালানো হয়। তবে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমাদের এই সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেও ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব” দুবরাজপুরের পুরপ্রধান অবশ্য তপনবাবুর দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “একাধিক বার অভিযোগ করেছি। তবে সেটা রিজিওনাল ম্যানেজারের পর্যায়ে না হলেও অন্য স্তরে করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dayal sengupta street light hooking municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE