Advertisement
E-Paper

পরীক্ষার গেরোয় সভা ছোট বামের, বন্ধ তৃণমূলের

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝের ফাঁকা সময়েই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ঝালদায় জনসমাবেশ করে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করার কথা ভেবেছিল শাসক-বিরোধী দুই দল। পর পর দু’দিনে তৃণমূল ও বামফ্রন্টের হেভিওয়েট নেতাদের সেখানে আসার কথা। কিন্তু শেষে আইসিএসই পরীক্ষা চলায় মাইক বাজানোর অনুমতি পেল না কেউ-ই। তৃণমূল সভা স্থগিত করে দিল।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৬:১৩
স্থগিত হয়ে গিয়েছে সভা। হোর্ডিং রয়ে গিয়েছে এখনও। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

স্থগিত হয়ে গিয়েছে সভা। হোর্ডিং রয়ে গিয়েছে এখনও। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝের ফাঁকা সময়েই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ঝালদায় জনসমাবেশ করে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করার কথা ভেবেছিল শাসক-বিরোধী দুই দল। পর পর দু’দিনে তৃণমূল ও বামফ্রন্টের হেভিওয়েট নেতাদের সেখানে আসার কথা। কিন্তু শেষে আইসিএসই পরীক্ষা চলায় মাইক বাজানোর অনুমতি পেল না কেউ-ই। তৃণমূল সভা স্থগিত করে দিল। আর বামফ্রন্ট জন সমাবেশের ডাক দিয়েও শেষে তা কাটছাঁট করে বর্ধিত কর্মিসভা করছে।

আজ শুক্রবার, ঝালদার হাটতলা মাঠে জন সমাবেশের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। বক্তব্য রাখবেন বামফ্রন্টের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। কিন্তু দল সূত্রে খবর, জন সমাবেশ আর হচ্ছে না। তার বদলে কেটেছেঁটে বর্ধিত কর্মিসভা করা হচ্ছে। পরের দিন শনিবার ওই মাঠেই জনসমাবেশের আয়োজন করেছিল শাসকদল তৃণমূল। সেখানে আসার কথা ছিল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। কিন্তু তৃণমূলকেও একই যুক্তিতে মাইক বাজিয়ে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে তারা অবশ্য বামফ্রন্টের মতো ছোট সভা করছে না। শুভেন্দুর সভাই শেষে বাতিল করে দিল তৃণমূল।

ঝালদা এলাকা যে বাঘমুণ্ডি বিধানসভার অন্তর্গত, সেখানকার বিধায়ক হলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো। রাজ্যজুড়ে কংগ্রেসের অগোছাল অবস্থার মধ্যেও নেপালবাবু এই এলাকা তো বটেই জেলার কিছু এলাকায় এখনও সংগঠনের শক্তি অনেকটা ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে দলের এক সমাবেশে প্রদেশ নেতাদের ডেকে হাজার হাজার সমর্থকের ভিড় দেখিয়েছেন তিনি। ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগ গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাই নেপালবাবুর খাস তালুক ঝালদায় যে পাল্টা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা তৃণমূল করবে তা রাজনৈতিক মহলের কাছে প্রত্যাশিত ছিলই। বামফ্রন্টও পিছিয়ে নেই।

দুই দল সূত্রে খবর, মাইক বাজানো নিয়ে বিধি নিষেধ চলতে থাকায় রাজ্যের দু’টি বড় পরীক্ষার মাঝেই ঝালদায় বড় সমাবেশ করে কংগ্রেসকে পাল্টা চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ওই দুই দল। কিন্তু ফের অন্য এক পরীক্ষা যে তাদের সেই ছক ভেস্তে দিতে পারে তা কি দুই দলের নেতারা ভেবেছিলেন?

ঘনিষ্ঠ মহলে দু’দলের নেতারা জানিয়েছেন, আইসিএসই পরীক্ষার কথা অনেকের খেয়ালেই ছিল না। প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাইতে গিয়ে বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। পুরুলিয়া পশ্চিমের মহকুমাশাসক নিমাইচাঁদ হালদার বলেন, “মাধ্যমিক শেষে হলেও আইসিএসই পরীক্ষা চলছে। তাই কাউকেই প্রকাশ্যে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।” পুরুলিয়ায় প্রার্থী হয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক নরহরি মাহাতো। দলের জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহতা বলেন, “আমরা জনসভাই ডেকেছিলাম। কিন্তু আইসিএসই পরীক্ষার জন্য প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না। তাই ঘেরা জায়গায় সাউন্ডবক্স বাজিয়ে বর্ধিত কর্মিসভা করা হচ্ছে।”

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, “প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি না পাওয়ায় আপাতত আমরা শেষ মুহূর্তে শুভেন্দু অধিকারীর জনসমাবেশ স্থগিত করে দিয়েছি। পরে ওখানে সমাবেশ করা হবে।” তিনি জানান, তৃণমূল ওই এলাকায় সমর্থন দেখানোর জন্য যে বড় মাপের সমাবেশ করবে ভেবেছিল, ঘেরা জায়গায় তা দেখানো সম্ভব নয়। কাজেই ওই সিদ্ধান্ত।

রাজনৈতিক দিক দিয়ে এই এলাকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদে বহাল রয়েছে নেপালবাবু। তাঁর বাবা দেবেন মাহাতো, ১৯৪৬ সালে এই এলাকা থেকে প্রথম জনপ্রতিনিধি হন। তখন অবশ্য ভোট চালু হয়নি। পরে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবারই তিনি বিধায়ক হিসেবে জয়ী হয়েছেন। ১৯৭১ সালে তিনি পুরুলিয়া থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। সংসদে তিনি আওয়াজ তোলেন, “ফাইট ফর পুরুলিয়া।” তা আজও আপামর কংগ্রেস কর্মীদের কাছে স্লোগান। পেশায় স্কুল শিক্ষক নেপালবাবুও এলাকা তো বটেই জেলায় কংগ্রেসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তুমুল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট হয়। সে বার ঝালদা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়ান নির্দলপ্রার্থী নেপালবাবু। গণনার শেষে দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে তত্‌কালীন মন্ত্রী ফরওয়ার্ড ব্লকের সত্যরঞ্জন মাহাতোকে হারিয়ে জয়ী হন নেপালবাবু। সেই প্রথম তাঁর বিধানসভায় প্রবেশ। ২০০৬ সালে ঝালদা, ২০১১ সালে বাঘমুণ্ডি কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হন। ২০০০ সাল থেকে তিনি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। মাঝে নির্দল হয়ে লড়ার সময় জেলা কংগ্রেসের ও প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্যপদ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।

তাই ঝালদা থেকেই কার্যত লোকসভার ভোট প্রচারের লক্ষ নিয়েছিল তৃণমূল ও বামফ্রন্ট। আবার শুভেন্দুর ওই সমাবেশের ডাক ঘিরে তৃণমূলের অন্দরেও জল ঘোলা হচ্ছিল। দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর সভা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে সরব হয়েছেন জেলা যুব সভাপতি গৌতম রায়। গত রবিবারের জেলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তিনি সরবও হন। তাঁর অভিযোগ, “আমি ওই সভার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। পোষ্টার দেখেই সব জেনেছি।” দল সূত্রে খবর, জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো নির্বাচনের আগে এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে সবাইকে জানান। তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর (দল সূত্রের খবর, তিনিই ওই সভার উদ্যোক্তা) কথায়, “বিধানসভায় তো আমাদের জোট ছিল। তারপরেও পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকায় আমাদের ফল মোটেই আশানুরূপ হয়নি। সামনে নিবার্চন। তাই ঝালদায় সংগঠনকে মজবুত করতেই আমরা এই সভা করছি। অন্য কিছু নয়, ঝালদায় কংগ্রেসকে ভাঙাই আমাদের লক্ষ।” সিপিএমের ঝালদা লোকাল কমিটির সম্পাদক সুমন দে-র কটাক্ষ, “প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে তৃণমূল সভা স্থগিত করেছে বলে দাবি করছে বটে। তবে আসলে দলের দোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জন্যই ওরা সভা বাতিল করেছে।”

election campaign purulia jhalda left tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy