Advertisement
E-Paper

বাদামের বিকল্প চাষে দিশা দেখাচ্ছে খয়রাশোল

নদী ঘেঁষা বেলে-দোঁয়াশ মাটির জমিগুলিকে সমান করে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাদামী রঙের ওই জমিতেই বেড়ে উঠছে সারি সারি গাছগুলো। সবুজ ডিম্বাকৃতি পাতা, উচ্চতা মেরে কেটে ৬ ইঞ্চি। ইতিমধ্যেই উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুলও ফুটেছে। এক ঝলক দেখে মনে হতেই পারে, যেন কোনও নার্সারিতে ফুলের চাষ চলছে। কিন্তু, কোনও বাহারী ফুলের চারা নয় ওগুলি আসলে বাদামগাছ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০১:৪৯
সারি দিয়ে বসেছে বাদাম চারা।  নিজস্ব চিত্র।

সারি দিয়ে বসেছে বাদাম চারা। নিজস্ব চিত্র।

নদী ঘেঁষা বেলে-দোঁয়াশ মাটির জমিগুলিকে সমান করে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাদামী রঙের ওই জমিতেই বেড়ে উঠছে সারি সারি গাছগুলো। সবুজ ডিম্বাকৃতি পাতা, উচ্চতা মেরে কেটে ৬ ইঞ্চি। ইতিমধ্যেই উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুলও ফুটেছে। এক ঝলক দেখে মনে হতেই পারে, যেন কোনও নার্সারিতে ফুলের চাষ চলছে। কিন্তু, কোনও বাহারী ফুলের চারা নয় ওগুলি আসলে বাদামগাছ। বীরভূমের অজয় নদ এবং হিংলো নদীর ধারে থাকা খয়রাশোলের চূড়োর, মুক্তিনগর, পারুলবোনা, চাপলা কিংবা চন্দননগরের মতো গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই এখন ব্যস্ত ওই বাদাম গাছের পরিচর্যায়। খরার মরসুমে বিকল্প চাষ হিসেবে অর্থকরী এই বাদাম চাষের জুড়ি মেলা ভার। জেলা কৃষি দফতরের দাবি, ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ওই বাদাম চাষেই বাকি চাষিদের পথ দেখাচ্ছে খয়রাশোলের এই বিস্তীর্ণ এলাকা।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের তুলনায় জেলায় বাদাম চাষের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। শুধু খয়রাশোলেই ওই চাষ হয় প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপকুমার মণ্ডল বলছেন, “অজয় লাগোয়া দুবরাজপুরের দেবীপুর চর, পলাশডাঙা চর এবং বোলপুর মহকুমার ইলামবাজারের কিছু গ্রামে বাদাম চাষ হয়ে থাকে। তবে জেলায় এই মুহূর্তে খয়রাশোলে বাদাম চাষের পরিমাণই বেশি।” বাদাম চাষে চাষিদের উৎসাহী করে তুলতে এ বারই সরকারি প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড স্কিম অফ ওয়েল সিডস, পালসেস, ওয়েল পাম অ্যান্ড মেইজ’-এর (আইএসওপিএম) আওতায় খয়রাশোলের চন্দননগরে একটি প্রদর্শন ক্ষেত্র তৈরি করছে কৃষি দফতর। দফতরের আশা, জেলায় বাদাম চাষে উৎসাহ আরও বাড়বে।

কৃষি দফতর ও বাদাম চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু উঠে যাওয়া এবং আমন ধান চাষের আগে যে সময়টুকু থাকে, সেই সময়েই বাদাম চাষ হয়ে থাকে। এই চাষে এক দিকে খরচ ও পরিশ্রম যেমন কম, তেমনই লাভও বেশি। এমনকী, বাদাম বিক্রি করার জন্য চাষিদের দূরে কোথাও যেতেও হয় না। বাদাম তেল তৈরির মিল বা চানাচুর প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো সরাসরি চাষিদের ঘর থেকেই বাদাম কিনে নিয়ে যায়। প্রয়োজনে বাদাম বেশ কয়েক মাস ঘরে মজুত করে রাখার ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা নেই।

খয়রাশোলের চন্দননগরের বাদাম চাষি দীপক মিস্ত্রি, দুলাল সরকার, চূড়োরের বীরেশ্বর মণ্ডল, পারুলবোনার আশুতোষ বিশ্বাস বা চাপলার বাপি প্রামানিকরা জানাচ্ছেন, বাদামের বীজ পোঁতা থেকে ফসল ঘরে তুলতে মোট ১০০-১২০ দিন সময় লাগে। বাদাম বীজ লাগানোর সবচেয়ে আদর্শ সময় ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ। লাল ও সাদা মূলত দু’ধরনের বাদাম চাষ করা হয়। সাদা বাদামের ফলন বেশি, তবে দাম কম। লাল বাদামের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা। খয়রাশোলে অবশ্য দু’ধরনের বাদামই চাষ হয়। বিঘা প্রতি জমিতে ২০-২৫ কেজি বাদাম বীজ প্রয়োজন। বীজ ও সার নিয়ে বিঘা প্রতি মোট খরচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। মাঠ থেকে আলু উঠে যাওয়ার পরে বাদাম চাষ করলে খরচ আরও কিছুটা কম হয়। জমি তৈরি করে বীজ পোঁতার ১০ দিন পরে গাছগুলি মাটির উপরে উঠে আসে। দিন কুড়ি পর থেকেই ওই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। মে মাসের প্রথম দিকে ফসল ঘরে ওঠে। চাষের খরচ বাদ দিয়ে বার পাঁচেক সেচ ও দিনে ঘণ্টা খানেকের পরিচর্যা অবশ্য করতে হয়ে প্রত্যেক চাষিকে। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে তিন কুইন্ট্যাল পর্যন্ত বাদাম পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৭,৫০০-৮,০০০ টাকা।

খয়রাশোল ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত আচার্য জানান, বীজ সঠিক ভাবে শোধন করে এবং প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করলে বাদাম চাষে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। তবে, ফুল আসার সময় বাদাম গাছের গোড়ার মাটি যাতে আলগা এবং আর্দ্র থাকে সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ওই কৃষি আধিকারিক বলেন, “অনেকের ধারনা বাদাম হয় গাছের শিকড়ে। বাদাম মাটির নীচে ফললেও পরাগ মিলনের পর ভ্রূণ তৈরি হয়ে সেখান থেকেই একটি নরম শিকড়ের মতো অংশ মাটির নীচে যায়। সেখানেই ধীরে ধীরে বাদাম বৃদ্ধি পায়। যাকে ‘পেগ’ বলে। মাটি সেই সময় নরম না থাকলে, তা কিন্তু গাছেই নষ্ট হয়ে যায়।”

আর বাদাম চাষিরা বলছেন, “নির্ঝঞ্ঝাটের চাষ। আমাদের বিশেষ কিছুই করতে হয় না। কালবৈশাখীর ঝড়-ঝাপ্টাও বাদাম গাছ সামলে দিতে পারে। বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে এই সময় এই চাষই সব দিক থেকে লাভ জনক। ওই চাষ করেই আমাদের সংসারের হাল অনেকটাই ফিরেছে।”

• বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। লাভও বেশি।

• ঘরে বসেই কোম্পানিকে বাদাম বিক্রি করা যায়।

• ১১০-১২০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়।

• উৎপাদিত বাদাম সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।

dayal sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy