বালিভর্তি ডাম্পারের ধাক্কায় এক বালকের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে তেতে উঠল নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া। আগুন লাগানো হল ডাম্পারে। টায়ার জ্বালিয়ে দীর্ঘসময় ধরে রাজ্য সড়ক অবরোধ করলেন উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল পুলিশ কর্তাদের। এমনকী আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল কর্মীরাও বাধার মুখে পড়েন। ঘটনার ঘণ্টাতিনেক পরে অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) পিনাকী দত্ত বলেন, “বাসিন্দারা এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ পারবেলিয়ার তিন নম্বর কলোনির রাস্তায় বালিভর্তি ডাম্পারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন ওই এলাকারই বাসিন্দা বছর দশেকের রাহুল পাসি। ছবিআঁকা শিখে সাইকেলে সে বাড়ি ফিরছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালিভর্তি একটি ডাম্পার তাকে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত হয় সে। প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোলের একটি নার্সিংহোমে। পরে পাঠানো হয়েছে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অন্য দিকে, ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ডাম্পারটি আটক করে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাঁদের অভিযোগ, কলোনির মধ্যে সঙ্কীর্ন রাস্তা দিয়ে বালি নিয়ে যাতায়াতের সময় চালকরা ডাম্পারগুলি লাগামহীন গতিতে ছুটিয়ে নিয়ে যায়। এ জন্য প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। তার উপরে দূরত্ব বাঁচাতে দামোদর নদ থেকে বালি তুলে ডাম্পারগুলি অন্য রাস্তা না ধরে কলোনির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতে কলোনির রাস্তা ভাঙছে। তাই বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অথচ পুলিশ, প্রশাসন এই বিষয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ। তাই এ নিয়ে ক্ষোভ জমছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। এ দিনের দুর্ঘটনা তাঁদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ফেলে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন গরাই, মহম্মদ ইসরাফিলদের অভিযোগ, “প্রতিদিনই এই ডাম্পারগুলি জনবহুল এলাকার মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। কখন কাকে ডাম্পার চাপা দেয় এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। কিন্তু পুলিশ গাড়িগুলিকে অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করাতে ওদের চাপ দিচ্ছে না। তাই এই দুর্ঘটনা ঘটল।”
ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে নিতুড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে সামলানোর পক্ষে পুলিশ কর্মী কম ছিল। ফলে জনতাকে তারা ঠেকাতে পাচ্ছিল না। আগুন নেভাতে রঘুনাথপুর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন পারবেলিয়ায় গেলে তারাও বাধার মুখে পড়েন। ফলে দীর্ঘ সময় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেননি দমকল কর্মীরা। ডাম্পারটির প্রায় পুরোটাই পুড়ে যায়। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পাশের পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কেও। গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে সেখানে অবরোধ শুরু করে জনতা।
এসডিপিও (রঘুনাথপুর) রঘুনাথপুর থানা-সহ আশপাশের কয়েকটি থানার পুলিশকে নিয়ে অবরোধ তুলতে যান। কিন্তু ওই রাস্তায় ডাম্পার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তাদেরও ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে তাঁরা বাসিন্দাদের ডাম্পার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ ওঠে।