Advertisement
E-Paper

বাড়ছে বসতি সংখ্যা, পরিষেবা সেই তিমিরে

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। জমিদারতন্ত্রও টেকেনি বেশিদিন। দেশ স্বাধীন হলেও রাজ্যের যে সব এলাকা এখনও ‘পিছিয়ে পড়া’ তকমা সাঁটা তার মধ্যে বাঁকুড়ার রাইপুর অন্যতম। জঙ্গলমহলের এই জনপদে এক সময় মাওবাদীদের উপদ্রব শুরু হয়েছিল। প্রায় চার বছর আগে থেকে অবশ্য সেই মাওবাদী জুজু কেটেছে। সময়ের চাকা গড়িয়ে চলেছে।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৭
এমনই অবস্থা রাইপুরের বিভিন্ন রাস্তার। — নিজস্ব চিত্র

এমনই অবস্থা রাইপুরের বিভিন্ন রাস্তার। — নিজস্ব চিত্র

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। জমিদারতন্ত্রও টেকেনি বেশিদিন। দেশ স্বাধীন হলেও রাজ্যের যে সব এলাকা এখনও ‘পিছিয়ে পড়া’ তকমা সাঁটা তার মধ্যে বাঁকুড়ার রাইপুর অন্যতম।

জঙ্গলমহলের এই জনপদে এক সময় মাওবাদীদের উপদ্রব শুরু হয়েছিল। প্রায় চার বছর আগে থেকে অবশ্য সেই মাওবাদী জুজু কেটেছে। সময়ের চাকা গড়িয়ে চলেছে। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল রেখে বদলাচ্ছে জঙ্গলমহলের এই জনপদ। রাজা বা জমিদারদের অধীনস্থ গড় রাইপুরের সঙ্গে বর্তমান রাইপুরের পার্থক্য বেশ চোখেই পড়বে। বসতি বাড়ছে, জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নাগরিক সমস্যা। রাইপুর ব্লকের গড়রাইপুর বাজার, নতুনগড়, মহুলবুনি, ধোবাশোল, মনিপুর, রাওতোড়া, উপরবাঁধা এই সাতটি মৌজা নিয়ে গঠিত রাইপুর এলাকা। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী রাইপুরের জনসংখ্যা ছিল ৬২৮০। পরিবার সংখ্যা ছিল প্রায় ১২০০। ছোট বড় মিলিয়ে এলাকায় ৪০০টির বেশি দোকান রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে তিনটি কলেজ, তিনটি হাইস্কুল, ৫টি প্রাথমিক স্কুল, ৪টি আবাসিক হস্টেল আছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট বড় হোটেল। প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে এই শহরের জনসংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা ঘেঁষা দক্ষিণ বাঁকুড়ার এই ব্লক সদর যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।

বছর দশেক আগেও ছবিটা ছিল অন্যরকম। বসতি বলতে ছিল নতুনগড়, সবুজবাজার থেকে থানাগোড়া মোড়, নামোপাড়া এই এলাকাটুকু। তার বাইরে গড়ে উঠেছিল দু-চারটে বাড়ি। বর্তমানে রাইপুর থেকে ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক, রাইপুর থেকে খাতড়া রাস্তার দু’দিকেই নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। আড়ে বহরে শহর বাড়ছে। তার সঙ্গে বেড়ে চলেছে জনসংখ্যাও। বাড়ছে বাইরে থেকে আসা মানুষের সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই মাথা গোঁজার আস্তানা পাওয়া নিয়েও বাড়ছে সমস্যা। বক্সি এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষক অকপটে বললেন, “ভাড়া বাড়ির সমস্যার জন্য ঝাড়গ্রাম থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছি।”

নাগরিক পরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। এলাকার ভিতরের বেশ কয়েকটি রাস্তার হাল অত্যন্ত খারাপ। সাব স্টেশন মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড, এলআইসি মোড় থেকে ব্লক অফিস মোড়, সবুজবাজার থেকে থানাগোড়া হয়ে সিমলি ঘাট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বর্ষায় এই রাস্তার মাঝে জল জমে থাকে। তখন হেঁটে যাওয়া কষ্টকর। রাইপুর শহরের আর একটি সমস্যা হল নিকাশি ও জল। গোটা শহরে হাইড্রেন নেই বললেই চলে। যেসব এলাকায় নিকাশি নালা রয়েছে সেগুলি আবর্জনা ফেলে প্রায় বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা তথা গড়রাইপুর হাইস্কুলের শিক্ষক প্রবীর মুখোপাধ্যায়, অমিত জানা বলেন, “বর্ষায় আমাদের কলোনির কিছু এলাকায় এক হাঁটু করে জল জমে থাকে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধনচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বেশ কয়েকটি পাড়ার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের একটু নজর দেওয়া উচিত।”

এলাকাবাসীর পানীয় জলের চাহিদা পূরণ হয় মূলত জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্প থেকে। ওই প্রকল্পে সারাদিনে দু’বার জল আসে। নামোপাড়ার বাসিন্দা সুদেষ্ণা দুলে, আরতি দুলেদের ক্ষোভ, “গ্রীষ্মকালে ট্যাপকল থেকে সরু সুতোর মত জল পড়ে। লোডশেডিং হলে তো রক্ষে নেই। জলই মেলে না সারাদিন।” রাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বুদ্ধদেব টুডু বলেন, “এলাকা বেশ বড়। পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে নিকাশি নালা, নলকূপ বসানোর কাজ করছি।” তাঁর দাবি, “আগের থেকে আমাদের আমলে পরিষেবার মান অনেক উন্নত। এলাকায় আরও বেশি পানীয় জল সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরকে বলা হয়েছে। এলাকার স্বার্থে উন্নয়নের একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাধ্যমতো নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “সবুজ বাজার থেকে সিমলিঘাট পর্যন্ত হাইড্রেনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ও সব্জি ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যাধুনিক মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। যে সব রাস্তা খারাপ হয়েছে সেগুলি মেরামতির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রাস্তা ঢালাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। পথবাতি বসানো-সহ পরিষেবার উন্নতির জন্য আরও বেশকিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

কেমন লাগছে আমার শহর? আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

debabrata das raipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy