Advertisement
E-Paper

বঞ্চনার নালিশ, কংগ্রেসে নেই অসিতও

বহু দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল। শেষমেশ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলেই যোগ দিলেন জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল। সোমবার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানিক ভাবে হাঁসনের পাঁচ বারের বিধায়কের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিলেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বহু দিন থেকেই অসিতবাবুকে দলে যোগ দিতে অনুরোধ করে আসছিলেন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০০:৫২

বহু দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল। শেষমেশ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলেই যোগ দিলেন জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল। সোমবার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানিক ভাবে হাঁসনের পাঁচ বারের বিধায়কের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিলেন।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বহু দিন থেকেই অসিতবাবুকে দলে যোগ দিতে অনুরোধ করে আসছিলেন। কিন্তু একাধিক বার তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ দিন পুরনো দল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অসিতবাবু। শাসক দলে নাম লিখিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “দীর্ঘ দিন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়ে আসছি। এখন মানুষ উন্নয়ন চান। দিদির উন্নয়নের যজ্ঞে নিজেকে সামিল করলাম।”

প্রসঙ্গত, জোট ভেঙে যাওয়ার পরেও বহু দিন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ খাদি গ্রাম শিল্প পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েননি অসিতবাবু। এমনকী, ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্প মেলা উদ্বোধনের আসরে উপস্থিত হয়ে অসিতবাবু প্রদেশ কংগ্রেসকে বিড়ম্বনাতেও ফেলেছিলেন। কংগ্রেসের অন্দরেই তখন প্রশ্ন উঠেছিল, এর পরেও অসিতবাবু কেন ওই পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেননি? কেনই বা বিতর্ক উস্কে বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতকের পদে থাকা অসিতবাবু মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে চলে গেলেন? ওই সময় প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়কের কাছ থেকে ঘটনার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। তখনই অবশ্য এমন ঘটনার অন্য তাপর্য দেখেছিল কংগ্রেসের একাংশ। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তা হলে কি অসিতবাবুও কংগ্রেসের দুই সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং হুমায়ুন কবীরের পথেই দল ছেড়ে তৃণমূলে ভিড়তে চলেছেন? তখন অবশ্য হাঁসনের বিধায়ক সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সব জল্পনার অবসান ঘটান। এরই মাঝে গত রাজ্যসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও বামেদের থেকে আরও কয়েক জন বিধায়ককে শাসক দল নিজেদের দিকে আনতে পেরেছে। এ দিন সেই তালিকায় বীরভূমের এই বিধায়ক নতুন নাম।

অসিতবাবুর হাত ধরেই দীর্ঘ বাম জমানায় জেলায় একমাত্র হাঁসন বিধানসভা এলাকাতেই কংগ্রেস নিজের গড় রক্ষা করতে পেরেছিল। ১৯৮৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাঁসন থেকে দলের টিকিটে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হন। তার পরে একমাত্র ১৯৯১ সালের নির্বাচন ছাড়া পাঁচ বারই বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে অসিতবাবু ক্রমশ জেলার পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেন। যুব কংগ্রেস করার সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার পরেও তৃণমূল তৈরি হওয়ার সময় অসিতবাবু দল ছাড়েননি। তাঁর অনুগামীদের দাবি, দলের সঙ্গে সমস্যার সূত্রপাত দেড় বছর আগে কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে নিয়ে আসার পর থেকেই। ওই সিদ্ধান্তে অপমানিত অসিতবাবু দলের অন্দরে নিজের ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন। তখনই একবার হাঁসনের বিধায়কের তৃণমূলে চলে আসা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পুরনো দলেই আস্থা দেখিয়েছিলেন অসিতবাবু।

এখন দলত্যাগের কারণ?

অনেকগুলি কারণই তুলছেন অসিত ঘনিষ্ঠেরা। এক, মানসবাবুদের রাজ্যের জোট সরকারের মন্ত্রী করা হলেও দল অসিত মালের নাম বিবেচনা করেনি। দুই, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে ভাল টক্কর দিলেও গত ভোটে দল অসিতবাবুকে প্রার্থী করেনি। পরিবর্তে দল প্রার্থী করে তুলনায় কমজোর প্রার্থী তপন সাহাকে। সূত্রের খবর, অসিতবাবু নিজে দলের কাছে বীরভূম কেন্দ্র থেকে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দল তাঁর সেই অনুরোধ বাতিল করে প্রার্থী করে জেলা সভাপতি জিম্মিকে। তিন, কংগ্রেসের কিছু নেতা গত বিধানসভায় অসিতবাবুকে হারাতে উঠেপড়ে লাগেন। তাঁদের দাঁড় করানো এক ডামি প্রার্থী প্রায় ২৫ হাজার ভোট কাটেন। চার, বছরখানেক ধরেই জেলায় অসিতবাবুর রাশ আলগা হচ্ছিল। জিম্মি-গোষ্ঠীর হাতে হাঁসনের বিধায়ক অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। প্রথমে জেলা সভাপদির পদ যাওয়া, তার পরে লোকসভায় টিকিট না মেলা এই দুই ঘটনাই দলীয় নেতৃত্ব সম্বন্ধে অসিতবাবুর মোহভঙ্গ করে বলে তাঁর অনুগামীদের দাবি। ক্ষুব্ধ হন তাঁর অনুগামীরাও। জেলায় বিধায়কের অনুগামী মাড়গ্রামের কংগ্রেস নেতা খন্দেকর মহম্মদ শফি বলেন, “কংগ্রেসই অসিতদাকে দল ছাড়তে বাধ্য করেছে। দলে এখন একনিষ্ঠ কর্মীদের সম্মান নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্যদের মর্যাদা দেন। অসিতদার সঙ্গেই আছি।”

এ হেন অসিতবাবু যে রঙ পাল্টাতে চলেছেন, তা রবিবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শফি জানান, বিধায়কের পথেই হাঁসনের অন্তর্গত রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সমস্ত কংগ্রেস সদস্যই তৃণমূলে যোগ দেন। অসিত ঘনিষ্ঠ এক নেতার ক্ষোভ, “অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বিধায়ক হওয়ার পরেই কলকাঠি নেড়ে অসিতদাকে হঠিয়ে জিম্মিকে সভাপতি করা হয়। এই নিয়ে জেলায় যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে কংগ্রেস করছেন, তাঁদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। দলের বর্তমান নেতৃত্ব জঘন্য রাজনীতি শুরু করেছে। তাঁদের নিয়ে চলা মুশকিল। অসিতদার দেখানো পথেই তাই এলাকার বহু জনপ্রতিনিধি এবং নেতা-কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” দলের নতুন সদস্যকে স্বাগত জানিয়েছেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “অসিত মালের যোগদানে ওই এলাকায় দলের সংগঠন মজবুত হবে। সবাইকেই এ বার জেলা সভাপতির নির্দেশে চলতে হবে।”

এ দিকে, অসিত অনুগামীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে জেলা কংগ্রেস। দলীয় বিধায়েকর তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে জিম্মির প্রতিক্রিয়া, “ব্যক্তিস্বার্থেই তিনি শাসক দলে নাম লেখালেন।” এই ভাঙনে জেলায় কংগ্রেসের অস্তিত্বই সঙ্কটে পড়ে গেল না? জিম্মির জবাব, “এগুলো ভাঙন নয়। সুবিধাবাদীদের রঙ বদল। কর্মীরা এখনও উজ্জীবিত আছেন। তাঁরাই কংগ্রেসের প্রকৃত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ব্যক্তিস্বার্থেই এই দল বদল। তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই কানাঘুঁষো শুনছিলাম, অসিতবাবু দল ছাড়তে পারেন। মাঝে একবার তাঁকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম। তিনি তখন কখনও কংগ্রেস ছাড়ব না বলেই জানিয়েছিলেন। আসলে কংগ্রেসে তো এখন পাওনাদেনা কম। তাই উনি দল ছাড়ছেন।” অধীরের চ্যালেঞ্জ, “ওঁর যদি রাজনৈতিক সততা থাকে, তা হলে কংগ্রেসের বিধায়কের স্ট্যাম্প ছেড়ে তৃণমূলের বিধায়ক হয়ে জিতে আসুন। তখনই দেখা যাবে কার রাজনৈতিক দৌড় কতদূর।”

apurba chattopadhyay rampurhat asit mal saiyad siraj jimmi congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy