Advertisement
E-Paper

ভেঙে পড়ল পাখা, রক্ষা বাবা-ছেলের

এক মোষে রক্ষা নেই, দোসর এ বার সিলিং ফ্যান! আসলে সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে বরাবাজার থানার সরিষাবহাল গ্রামের বাসিন্দা অম্বুজাক্ষ সিংহ ও তাঁর ছেলে তাপস সিংহের। কাঁড়ার (পুরুষ মোষ) গুঁতোয় আহত বাবা-ছেলে ভর্তি রয়েছেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে। একই বিছানায় ঠাঁই হয়েছে দু’জনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৪২
অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

এক মোষে রক্ষা নেই, দোসর এ বার সিলিং ফ্যান!

আসলে সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে বরাবাজার থানার সরিষাবহাল গ্রামের বাসিন্দা অম্বুজাক্ষ সিংহ ও তাঁর ছেলে তাপস সিংহের। কাঁড়ার (পুরুষ মোষ) গুঁতোয় আহত বাবা-ছেলে ভর্তি রয়েছেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে। একই বিছানায় ঠাঁই হয়েছে দু’জনের। সেই বিছানাতেই মঙ্গলবার এসে পড়ল সিলিং ফ্যান! বরাতজোরে চোট পাননি কেউই। কিন্তু, ভয় পেয়েছেন বিস্তর।

এই হাসপাতালে এমন ঘটনা নতুন নয়। বছর দুয়েক আগে হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সুপারের ঘরে বৈঠক করার সময় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার ঘাড়ে আচমকা খুলে পড়েছিল পাখা। ঘটনায় ওই স্বাস্থ্যকর্তা আহত হন। এর পর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং অফিসঘরে পাখা ঠিকঠাক ভাবে লাগানো রয়েছে কি না, তা বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু, অবস্থার যে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, তা মঙ্গলবারের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। এ দিনই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এক প্রসূতির বিছানার উপরে ছাদের চাঙড় খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। দু’টি ঘটনাতেই কার তরফে গাফিলতি, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে পূর্ত দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

মেল সার্জিক্যাল-২ বিভাগে ২৭ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছেন অম্বুজাক্ষবাবু ও ছেলে তাপস। তখন সকাল সাড়ে ন’টা। অম্বুজাক্ষবাবু বিছানায় বসেছিলেন। আর ছেলে শুয়েছিল। অম্বুজাক্ষবাবুর কথায়, “ওর শরীরে ব্যথা করছিল বলে সবে পাশ ফিরেছে। সে সময় আচমকা পাখাটা খুলে বেডের উপরে পড়ল। ভাগ্যিস ও উল্টো দিকে মাথা করে শুয়েছিল। না হলে মাথাটাই থেঁতলে যেত!” পাখার আঘাতে পায়ে সামান্য লেগেছে তাপসের। তার মা লক্ষ্মীবালা সিংহ বলেন, “ভাগ্যক্রমেই বেঁচে গেছে ছেলে।” এই ঘটনায় ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়ায়। রোগীদের অনেকেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন। এ দিনই দপুরে দোতলায় প্রসূতি বিভাগে নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্রের মাদার হাউসে আচমকা ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে রোগীর শয্যায় পড়ে। এই কেন্দ্রে শিশুদের সঙ্গে মায়েরাও থাকেন। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মাঝারি মাপের একটি চাঙড় কল্যাণী পরামানিক নামে এক মহিলার শয্যায় খসে পড়লে তাঁর কোমরে আঘাত লাগে। খবর পেয়ে হাসপাতালের সুপার ও পূর্ত দফতরের প্রতিনিধি ওই বিভাগে যান। তাঁরা দেখেন, ছাদের বেশ কিছু জায়গা স্যাঁতস্যাঁতে। হাসপাতালে এসে পুরুলিয়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিভাস দাস বলেন, “এই হাসপাতালকে মুখ্যমন্ত্রী পরিষেবার প্রশ্নে উন্নত করতে চাইছেন। আর কোনও বিভাগে পাখা খুলে পড়ছে তো কোনও বিভাগে চাঙড় খসে পড়ছে।”

হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “পূর্ত দফতর ও তাদের বিদ্যুৎ বিভাগকে দু’টি ঘটনাই জানানো হয়েছে।” যে ঘরে চাঙড় খসে পড়েছে, সেই ঘর থেকে মায়েদের পাশের ঘরে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। সুপার বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি যেহেতু পূর্ত দফতর দেখভাল করে, তাই তারাই এ ব্যাপারে বলতে পারবে।” তবে, প্রসূতিদের ঘরের যে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন, তা পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছিল কি না, তার সদুত্তর অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মেলেনি। জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় খোদ সুপারের আবাসনের বাথরুম থেকেও ছাদের চাঙড় খসে পড়েছিল।

পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণকুমার চক্রবর্তী জানান, দ্রুত ওই ঘরটির সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। এতদিন কেন করা হয়নি, জানতে চাওয়া হলে তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালে ঘরে রোগী থাকলে কী ভাবে কাজ করা সম্ভব? ঘর তো খালি করে দিতে হবে।” সুপার বলেন, “আমরা এ দিনই ঘর খালি করে দিচ্ছি।” অন্য দিকে, পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, “আমি কাজে শহরের বাইরে রয়েছি। পাখা খুলে পড়ার ঘটনাটি সুপার আমাকে জানিয়েছেন। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা গিয়ে খতিয়ে দেখব।”

district hospital tapas sinha ambujakhsha sinha purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy