Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোট-যুদ্ধে রোগীরাই ভরসা ‘সুভাষ ডাক্তারের’

এক দিকে টানা ন’বারের জয়ী সিপিএম সাংসদ পোড়খাওয়া বাসুদেব আচারিয়া। উল্টো দিকে, তৃণমূলের ‘গ্ল্যামারাস’ প্রার্থী মুনমুন সেন। ওই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মাঝে দাঁড়িয়েও বাজিমাত করার স্বপ্ন দেখছেন ‘সুভাষ ডাক্তার’। ৩৩ বছরের কর্মজীবনে তাঁর হাত দিয়েই জেলার প্রায় ৩০ হাজার দম্পতির সন্তান জন্ম নিয়েছে। জঙ্গলমহলের সেই জনপ্রিয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুভাষ সরকারই এ বার বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।

প্রচারে নামার আগে বাঁকুড়ার ভৈরবস্থান মন্দিরে বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

প্রচারে নামার আগে বাঁকুড়ার ভৈরবস্থান মন্দিরে বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৩
Share: Save:

এক দিকে টানা ন’বারের জয়ী সিপিএম সাংসদ পোড়খাওয়া বাসুদেব আচারিয়া। উল্টো দিকে, তৃণমূলের ‘গ্ল্যামারাস’ প্রার্থী মুনমুন সেন। ওই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মাঝে দাঁড়িয়েও বাজিমাত করার স্বপ্ন দেখছেন ‘সুভাষ ডাক্তার’। ৩৩ বছরের কর্মজীবনে তাঁর হাত দিয়েই জেলার প্রায় ৩০ হাজার দম্পতির সন্তান জন্ম নিয়েছে। জঙ্গলমহলের সেই জনপ্রিয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুভাষ সরকারই এ বার বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।

মঙ্গলবারই মন্দির, মসজিদ ও গির্জায় গিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে বাঁকুড়া শহরে মিছিল করে প্রচার শুরু করেছেন। সুভাষবাবু গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত হলেও ভোটের ময়দানে এ বারই প্রথম। জীবনের প্রথম ভোটযুদ্ধে নেমে জয় নিয়ে চরম আত্মবিশ্বাসী সুভাষবাবু। তাঁর কথায়, “পূর্ব অভিজ্ঞতার জেরে এখানকার মানুষ এখন বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা এমন সাংসদ চাইছেন, যিনি সব সময় তাঁদের মানুষের পাশে থাকবেন। হাত বাড়ালেই যাঁকে ছোঁয়া যাবে।” আর ভোট-অঙ্কের বাইরে মানুষের এই উপলব্ধিই তাঁকে বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি, “বাসুদেববাবু বরাবরই বাঁকুড়ার মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর নায়িকা মুনমুনকে রোদ-গরমের বাঁকুড়ার খেটেখাওয়া মানুষের কাছে সব সময় কোনও দিনই পাওয়া যাবে না। মানুষ তা জানেন। আজকের দিনে চমক দিয়ে আর মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।”

ডাক্তারি পাশ করার পরেই সুভাষবাবু নিজের জেলা শহরের বুকে নিজস্ব একটি নার্সিংহোম খোলেন। তাঁর নিজের কথায়, “ডাক্তার হলাম, অথচ নিজের এলাকার মানুষের জন্য কিছু করব না? ওই চিন্তা থেকেই এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিই।” ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসা করার সুবাদেই বাঁকুড়া শহর তো বটেই জেলা ও জেলার বাইরেও বহু মানুষ তাঁকে আলাদা ভাবে চেনেন। বস্তুত, বাঁকুড়াবাসীর কাছে তিনি ‘ঘরের ছেলে’। পাশাপাশি জঙ্গলমহলের চারটি ব্লক সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা ও রানিবাঁধেও তাঁর রোগীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক এক, আর রাজনৈতিক লড়াই আর এক। তা ছাড়া গত লোকসভা ভোটেও ওই আসনে বিজেপি-র ভরাডুবি হয়েছিল। জুটেছিল মাত্র ৪২ হাজার ভোট। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী সেই অঙ্ককে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর দাবি, “শুধু মাত্র বাঁকুড়াতেই আমার কয়েক লক্ষ রোগী ছড়িছে ছিটিয়ে রয়েছে। আমার হাত দিয়েই ৩০ হাজার দম্পতি ছেলেমেয়ের মুখ দেখেছে।” তাঁদের একটা বড় অংশেরই সমর্থন পাবেন বলে মনে করছেন ডাক্তারবাবু।

এ দিন শহরের বুকে ‘সুভাষ ডাক্তারে’র মিছিল দেখতে বহু মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরিচিতেরা কেউ প্রার্থীর কাছে গিয়ে আবার কেউ কেউ দূর থেকেই হাত নেড়ে তাঁকে অভিনন্দন জানালেন। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম দাস যেমন বললেন, “ভোটে জিতলে আমরা ওঁকে যে কোনও সময়ই পাব।” অন্য দিকে, সুভাষবাবুরই রোগী গৃহবধূ শুভ্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডাক্তার হিসেবে সুভাষবাবুকে অনেক দিন ধরে চিনি। তাই ওঁকেই ভোট দেব।” এ দিকে, এমন এক জনপ্রিয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোনও কুৎসাও করতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস সব দলের নেতাদের কেউ না কেউ আবার চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছেই দ্বারস্থ হয়েছেন। এই পরিস্থিতি বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী? তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস, সব দলের নেতারাই এক কথায় মেনে নিচ্ছেন, “সুভাষবাবু ভাল ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি এক জন ভাল মানুষও।” কিন্তু তবুও বাঁকুড়া কেন্দ্রের মানুষ প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন বলে তাঁদের দাবি। বিরোধীদের ওই কথাকেই প্রায় লুফে নিয়ে বিজেপি প্রার্থী আবার বলছেন, “মানুষ এ বার সত্যিকারের পরিবর্তন চান। তাঁরা জানেন, ভোটের পরে নরেন্দ্র মোদীই এ দেশে সেই পরিবর্তন আনবেন।” তাঁর আশা, সেই পরিবর্তনের অন্যতম সেনানী হতে বাঁকুড়ার মানুষ বিজেপি প্রার্থীকেই ভোটে জেতাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subhas sarkar rajdeep bandyopadhyay bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE