Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইঁদপুরে অভিযুক্ত টিএমসিপি

ভর্তি নিয়ে ফের বিক্ষোভের মুখে কলেজ টিচার-ইন-চার্জ

শিক্ষাঙ্গনে ঘেরাও-বিক্ষোভের রাজনীতি থেকে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দূরে থাকার নিদান দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রীর সেই পরামর্শ আদৌ মানা হচ্ছে না বাঁকুড়ার ইঁদপুরের শালডিহা কলেজে। এবং তা মানছে না শাসক দলেরই ছাত্র সংগঠন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইঁদপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৩১
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গনে ঘেরাও-বিক্ষোভের রাজনীতি থেকে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দূরে থাকার নিদান দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রীর সেই পরামর্শ আদৌ মানা হচ্ছে না বাঁকুড়ার ইঁদপুরের শালডিহা কলেজে। এবং তা মানছে না শাসক দলেরই ছাত্র সংগঠন।

দিন কয়েক আগেই এই কলেজের টিচার-ইন-চার্জ মানিক দাসকে হুমকি, শাসানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) এক ব্লক স্তরের নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার ফের মানিকবাবু ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন। কিছু পড়ুয়াকে কলেজে ভর্তি করানো এবং কয়েক জনকে ভর্তি ফি-তে ছাড় দেওয়ার দাবি এ দিন টিচার-ইন-চার্জের কাছে জানায় শালডিহা কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। এর পর টিচার-ইন-চার্জের সঙ্গে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ পন্ডার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসে। মানিকবাবুকে এ ব্যাপারে লিখিত আশ্বাস দেওয়ার দাবি জানান ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা।

কিন্তু, মানিকবাবু জানান, বিষয়টি তাঁর একার এক্তিয়ারভুক্ত নয়। বিষয়টি তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কলেজের পরিচালন কমিটিকে জানাবেন। এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে টিএমসিপি নেতা বিশ্বনাথের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অফিস রুমের মধ্যেই টিচার-ইন-চার্জকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর দু’টো নাগাদ বিক্ষোভ ওঠে।

এখনও ভর্তি হতে না পারা এলাকার কিছু ছাত্রছাত্রীকে অবিলম্বে শালডিহা কলেজে ভর্তি করানোর দাবিতে ইঁদপুর ব্লক টিএমসিপি-র তরফে টিচার-ইন-চার্জের কাছে গত এক সপ্তাহ ধরে দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দুঃস্থ কিছু পড়ুয়াকে ভর্তি ফি-এ ছাড় দেওয়ার দাবিতেও সরব হয়েছেন স্থানীয় টিএমসিপি নেতারা। সেই দাবি জানাতে এসেই গত বুধবার দুপুরে টিএমসিপি-র ইঁদপুর ব্লক সভাপতি আনন্দ পন্ডা-সহ কয়েক জন তাঁকে মারধরের হুমকি ও শাসানি দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মানিকবাবু। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনও অবধি কাউকে ধরেনি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কলেজে এ দিন ফের টিচার-ইন-চার্জকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল। বারবার এ রকম চলতে থাকলে শালডিহা কলেজে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাঁকুড়া জেলার শিক্ষামহল।

বিশ্বনাথ বলেন, “এলাকার বহু ছাত্রছাত্রী এখনও কলেজে ভর্তি হয়নি। কিছু দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারেনি। তাই সকলকে ভর্তি করানোর পাশাপাশি ভর্তি ফি-এ কিছুটা ছাড় দিয়ে তাঁদের শালডিহা কলেজে ভর্তির জন্য গত কয়েক দিন ধরেই আমরা টিচার-ইন-চার্জের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি এখনও কোনও ব্যবস্থা নেননি। সোমবার ফের ওই দাবি তাঁর কাছে জানিয়েছি।” ওই টিএমসিপি নেতার অভিযোগ, টিচার-ইন-চার্জ পাশকোর্সে ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করেননি। ৪৫ শতাংশের কম নম্বর পাওয়া এক ছাত্রকে সংস্কৃত অনার্সে ভর্তি নিয়েছেন। এ দিন অফিসরুমে কথা বলার সময় মানিকবাবু তাঁকে চড় মারার হুমকি দিয়েছেন বলেও বিশ্বনাথের অভিযোগ।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানিকবাবু। তবে, ৪৫ শতাংশের কম নম্বর পাওয়া এক ছাত্রকে সংস্কৃত অনার্সে ভর্তির বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। মানিকবাবুর বক্তব্য, “মেধা তালিকায় কাউন্সেলিংয়ের সময় নজর এড়িয়ে ওই ছাত্রটিকে ভর্তি নিয়ে ফেলেছিল অ্যাডমিশন কমিটি। বিষয়টি পরে নজরে আসতেই ওই ছাত্রের অনার্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছাত্রটিকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।” এলাকার কিছু ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করানোর যে দাবি টিএমসিপি করছে, সে প্রসঙ্গে টিচার-ইন-চার্জ বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ছাত্র সংসদের তরফে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমরা আবেদন করব। আর ভর্তি ফি-এ ছাড়ের বিষয়টি আমার একার এক্তিয়ারে নেই। এ ব্যাপারে কলেজের পরিচালন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এ কথা ছাত্র সংসদকে জানানো হয়েছে।” দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত ভাবে আবেদন জানানোর জন্য বলা হলেও কেউই তা করেননি বলেও দাবি মানিকবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

indpur tmcp agitation teacher-in-charge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE