Advertisement
E-Paper

মুখ গোমড়া আকাশের, তাল কাটল পিকনিকের

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘলা আকাশ, কুয়াশায় মোড়া রাস্তাঘাট। বেলা বাড়লেও রোদের দেখা নেই বললেই চলে। তার উপর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু সকলেই। দুপুরের দিকে অবশ্য বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় রোদের ঝিলিক দেখা যায়। বছরের শেষদিন বুধবারের ছবি ছিল এমনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৭
বছরের শেষ দিনে পর্যটকদের প্রায় দেখাই গেল না বিষ্ণুপুরে। জোড়বাংলা চত্বরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

বছরের শেষ দিনে পর্যটকদের প্রায় দেখাই গেল না বিষ্ণুপুরে। জোড়বাংলা চত্বরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘলা আকাশ, কুয়াশায় মোড়া রাস্তাঘাট। বেলা বাড়লেও রোদের দেখা নেই বললেই চলে। তার উপর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু সকলেই। দুপুরের দিকে অবশ্য বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় রোদের ঝিলিক দেখা যায়। বছরের শেষদিন বুধবারের ছবি ছিল এমনই।

একদিকে খারাপ আবহাওয়া, অন্য দিকে, রাস্তায় অবরোধ। এই দুইয়ের জেরে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রেই বছরের শেষদিনে ভাটার টান। আর তাতেই চিন্তায় পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। আজ বৃহস্পতিবারও এমনই আবহাওয়া থাকলে নতুন বছরের প্রথম দিনে পিকনিকের আমেজ নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। আবহওয়া দফতরের জেলা পরিমাণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রোদ না থাকায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়। কুয়াশাও ছিল। তার উপরে অসমে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসী সংগঠনগুলির ডাকে বন্‌ধ, অবরোধ হয়। বছরের শেষ দিনেও অনেকে পিকনিক করতে যান। কিন্তু এ দিন প্রতিকূল আবহওয়া ও বন্‌ধের জেরে কেউ কেউ শেষ মুর্হূতে পিকনিক বাতিল করে দেন। আর যাঁরা এ সব সত্ত্বেও বেড়িয়েছেন, তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আবার বৃহস্পতিবার যাঁরা পিকনিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, দিনভর আবহওয়ার হাল দেখে তাঁরাও বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

দিনভর ঘরে-বাইরে মানুষজনকে গরম পোশাকে দেখা যায়। গা থেকে সোয়েটার, চাদর অনেকে খোলেননি। তাই বেড়াীতে যেতে অনেকে গড়িমসি করছেন। যেমন নতুন বছরের প্রথম দিনেই সপরিবারে দিঘা বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল বাঁকুড়ার পাটপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সমীর দাসের। তিনি বলেন, “এমন আবহাওয়ায় বাড়ির লোকেরা আর দিঘা যেতে চাইছে না। ঠান্ডা লেগে উল্টে শরীর খারাপের ভয় রয়েছে। তাই বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছি। পরে বরং যাব।” বিষ্ণুপুরের তিলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী মিলন সরখেলও সপরিবারে বুধবার রাতে দিঘা বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই আবহাওয়ায় সেই পরিকল্পনা তাঁরাও বাতিল করেছেন। তবে বড়দিনটা তাঁরা ঘরে কাটাবেন না। তিনি বলেন, “দিঘার বদলে ঘরের কাছে জয়পুরের সমুদ্রবাঁধে বৃহস্পতিবার পিকনিক করতে যাচ্ছি।”

কুয়াশার জেরে পর্যটনকেন্দ্রে লোকজনকে নিয়ে যেতে বেকায়দায় পড়েছেন গাড়ি চালকেরাও। বাঁকুড়ার আঁচুড়ির বাসিন্দা গাড়ি চালক সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কুয়াশার জন্য গাড়ি চালাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। ১০০ মিটার দূরের কোনও জিনিসই দেখা যাচ্ছে না। একটু অসতর্ক হলেই বিপদ। তাই খুব বুঝে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।”

পুরুলিয়ায় সকালে অবশ্য রোদের দেখা মিলেছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই আকাশে মেঘ জমে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও এ দিন তুলনায় বেশি ছিল, ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন এই জেলার পিকনিট স্পটগুলোতে ভিড়ও ছিল। কিন্তু হাড়হিম করা ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার পাশাপাশি আদিবাসীদের বনধ, রাস্তায় অবরোধে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, বড়দি পাহাড়-সহ অধিকাংশ পর্যটনকেন্দ্রেই এ দিন পর্যটকদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বছরের শেষদিনে পর্যটক না আসায় কার্যত হতাশ দোকানদার থেকে নৌকাচালক সকলেই। বিষ্ণুপুর জোড়বাংলো মন্দিরের সামনে বসে টেরাকোটার সামগ্রী বিক্রেতা গীতা দাস, সুনীল হাজারি আক্ষেপ করে বলেন, “বছরের শেষদিনে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। বিক্রিবাটা ভালো হয়। এ দিন সে ভাবে পর্যটক না আসায় আমরা মাঝি তাড়িয়েছি।’’

মুকুটমণিপুরের নৌকাচালক জীবন মুদি, অবনী সিং সর্দার জানালেন, প্রতি বছর শেষ দিনে পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়ে। মোটা টাকা রোজগার হয়। আর এ দিন বাইরে থেকে পর্যটক না থাকায় বাজার মন্দা গিয়েছে। চলতি মরশুমের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল বুধবার। দিনভর জলাধারের পাড়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে তাঁদের।

পর্যটক থেকে ব্যবসায়ী সবারই প্রার্থনা একটাই— বছরের প্রথম দিনটা আকাশ যেন ঝকঝকে থাকে, ঠিক বড়দিনের মতো।

katra purulia picnic weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy