Advertisement
E-Paper

রামচন্দ্রেই ভরসা রাখল সিপিএম

জল্পনা ছিলই। শেষমেশ বীরভূমে দলের জেলা সম্পাদক হিসেবে এক ‘তরুণ’ মুখকেই বেছে নিল সিপিএম। রবিবার দুবরাজপুরে দলের ২১তম জেলা সম্মেলন শেষে নতুন জেলা সম্পাদক করা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমকে। নতুন জেলা সম্পাদককে পেয়ে অনেকটাই উজ্জ্বীবিত কোণঠাসা হয়ে থাকা দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে, জেলা কমিটিতে মাত্র আট জন নতুন মুখ ঠাঁই পেয়েছেন।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৯
প্রাক্তন ও বর্তমান। রবিবার দুবরাজপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

প্রাক্তন ও বর্তমান। রবিবার দুবরাজপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জল্পনা ছিলই। শেষমেশ বীরভূমে দলের জেলা সম্পাদক হিসেবে এক ‘তরুণ’ মুখকেই বেছে নিল সিপিএম।

রবিবার দুবরাজপুরে দলের ২১তম জেলা সম্মেলন শেষে নতুন জেলা সম্পাদক করা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমকে। নতুন জেলা সম্পাদককে পেয়ে অনেকটাই উজ্জ্বীবিত কোণঠাসা হয়ে থাকা দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে, জেলা কমিটিতে মাত্র আট জন নতুন মুখ ঠাঁই পেয়েছেন। পরপর এতগুলি নির্বাচনে ভরাডুবির পরেও কেন সংগঠনে আরও নতুন মুখ তুলে আনা হচ্ছে না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একাংশের কর্মীদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপি এই জেলায় দলের হাত থেকে কার্যত ‘বিরোধী’র স্থান ছিনিয়ে নিয়েছে। বিজেপি-র এই উত্থান ঠেকাতে দলে আরও বেশি করে নতুন ও তরুণ মুখ দরকার ছিল বলে অনেকেরই মত।

এই ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে নারাজ দলের নতুন সম্পাদক। রামচন্দ্রবাবুর যুক্তি, “দলে নতুন মুখ তুলে আনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছেই। তার প্রতিফলন হিসেবে জেলার ১৬টি জোনাল কমিটির ৭টিতেই নতুন মুখ বেছে নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে ঠিকই। তবে, বিপর্যয়ের দায় কোনও একক ব্যক্তির নয়, গোটা দলের। আমরা সম্মিলিত ভাবেই সেই খামতি দূর করার চেষ্টা করছি।”

গত শুক্রবার থেকে দুবরাজপুরে সিপিএমের ওই জেলা সম্মেলন চলছিল। রবিবার বিকেলে সেখানেই রামচন্দ্রবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। অবশ্য সম্মেলনের আগে থেকেই নতুন সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। গত তিন বারের জেলা সম্পাদক ছিলেন দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিন সম্মেলন শেষে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পার্টির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বারের বেশি কেউ জেলা সম্পাদক থাকবেন না। সেই অনুযায়ী বিদায়ী সম্পাদক রামচন্দ্র ডোমের নাম নতুন সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করেন। সর্বসম্মতি ক্রমে তা গৃহীত হয়েছে।” দিলীপবাবুকে অবশ্য নতুন জেলা কমিটিতে রাখা হয়েছে।

দলীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে যা-ই দাবি করুন, আলোচনায় প্রথম সারিতে নাম থাকলেও রামচন্দ্রবাবুই যে সম্পাদক হবেন, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছিল না বলে জানাচ্ছেন দলের একাংশ। তাঁদের দাবি, দলের বহু দিনের কর্মী হলেও রামচন্দ্রবাবু দিলীপবাবুর তেমন কাছের মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন না। তাই নতুন সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন জেলা কমিটির আরও কয়েক জন নেতা। যাঁরা দলের অন্দরে দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। শেষ অবধি যদিও তাঁদের কেউ জেলা সম্পাদক হন, তা চাননি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই।

আগাগোড়া স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বীরভূম ও বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন এই সাংসদ জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে আসায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। সিউড়ির এক জোনাল নেতা বলছেন, “প্রথমত দলের অন্দরে-বাইরে রামচন্দ্রবাবুর স্বচ্ছভাবমূর্তি রয়েছে। ওঁর গ্রহণযোগ্য নিয়েও কোনও প্রশ্ন নেই। তুলনায় অনেক কমবয়সী হওয়ায় অনেক বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারবেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীরা জেলা সম্পাদককে হাতের নাগালে পেলে অনেক বেশ ভরসা পাবেন।” তাতে জেলায় প্রায় নেতিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করা সম্ভব হবে বলে ওই সিপিএম নেতার মত। রামচন্দ্রবাবু অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি বরং সবাইকে নিয়ে চলার উপরেই জোর দিতে চান। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি একা এই করব, ওই করব এমন কোনও কথা বলছি না। দলীয় রীতি মেনে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা সবাই মিলেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করব।”

দলের একাংশের অবশ্য জানাচ্ছেন, ৫২ জনের জেলা কমিটিতে ৪৪ জনই দীর্ঘ দিন জেলা সিপিএমের স্তম্ভ। কিন্তু, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রথম একটি আসন হারানোর ধাক্কা খাওয়ার পরে তাঁদের নেতৃত্বেই বিধানসভা, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে ভরাডুবি হয়েছে দলের। এ বারের ভোটে তৃণমূল বোলপুর লোকসভা আসনটিও ছিনিয়ে নিয়েছে। দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের তাই প্রশ্ন, “এটা তো সাফ হয়ে গিয়েছে যে ওই নেতারা এলাকায় জনসমর্থন হরিয়েছেন। তা হলে কেন জেলা কমিটিতে আরও নতুন মুখের জায়গা হল না?” এ নিয়ে জেলা নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, নতুন নেতা তুলে আনার ক্ষেত্রেই তো মূল ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। তাঁদের স্বীকারোক্তি, দলে ‘ক্যাডার-পলিসি’ (যে দলীয় কর্মী ভাল কাজ করছেন, যোগ্যতা ও দক্ষতার নিরিখে তাঁকে সামনের সারিতে নিয়ে আসা) সঠিক ভাবে পালিত হয়নি বলেই বহু এলাকায় দলীয় নেতৃত্বে বড় ‘জেনারেশন গ্যাপ’ তৈরি হয়েছে। নেতাদের দাবি, সেই খামতি মেটাতেই দল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে।

দলীয় সূত্রের দাবি, এ বারের জেলা সম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। যেমন, ছাত্র ও মহিলা সংগঠন থাকলেও এত দিন সংগঠনগুলি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারত না। সংগঠন বাড়াতে এবং নতুন নেতা তুলে আনতে এ বার সেই সংগঠনগুলিকে অনেক বেশি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রতিনিধিরা। এত দিনের ভুল শুধরে নিয়ে নতুন মুখের সন্ধানও করতে বলা হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে কমবয়সী, এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন, যাঁরা মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলতে পারেন এবং সংগঠন বাড়ানোর দক্ষতা রয়েছে, এমন সব মুখ। কীভাবে হবে সন্ধান, সেই পথও বাতলে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে দলের নিচুতলা মেরামত করে আগামী দিনে রাজনৈতিক লড়াইয়ে ঝাঁপাতে চায়ছে জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।

dayal sengupta young face for election ramchandra dom
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy