Advertisement
E-Paper

রেলের জমিতে উচ্ছেদ নিয়ে মাঠে তৃণমূল

উচ্ছেদ করতে পারে রেল। তাই বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রায় রেলের বস্তি ভাঙার সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া সফরে এসে কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া মারফত আদ্রায় বস্তিবাসীদের উচ্ছেদের খবর পেয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীকে দেখায় নির্দেশ দিয়েছেন।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৬
চলছে পরিত্যক্ত আবাসন ভাঙার কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে পরিত্যক্ত আবাসন ভাঙার কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

উচ্ছেদ করতে পারে রেল। তাই বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রায় রেলের বস্তি ভাঙার সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া সফরে এসে কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া মারফত আদ্রায় বস্তিবাসীদের উচ্ছেদের খবর পেয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীকে দেখায় নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে থেকেই অবশ্য আদ্রায় রেলের জমিতে থাকা বস্তিবাসীদের থাকার বন্দোবস্ত করতে পাশের দুই পঞ্চায়েত এলাকায় পাট্টা দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন বিধায়ক এবং কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি। স্বপনবাবুর অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রেলের জমিতে বসবাস করা বস্তিবাসীদের মানবিক কারণেই পুনর্বাসন দেওয়া উচিত ছিল রেল কর্তৃপক্ষের। রেল কর্তৃপক্ষর পাল্টা দাবি, রেলের জমিতে অবৈধ ভাবে ঝুপড়ি বানিয়ে যারাঁ থাকছেন, তাঁদেরকে রেলের জমিতে বৈধভাবে পুনর্বাসন দেওয়া আইনগত ভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি রাজ্য সরকারে এক্তিয়ারভুক্ত।

সম্প্রতি আদ্রায় রেলের পরিত্যক্ত আবাসনগুলি ভাঙার কাজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা বস্তির ঝুপড়িগুলিতে এখনও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। কিন্তু অচিরেই তা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন বস্তিবাসীরা। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা রেল সূত্রেও জানা যাচ্ছে। রেলের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, বহু পুরনো আবাসনগুলির মধ্যে প্রায় পাঁচশো আবাসন ভগ্ন হয়ে পড়েছে। যেগুলিকে ইতিমধ্যেই পরিত্যক্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু, সেখানে অবৈধ ভাবে ‘বহিরাগতরা’ ঢুকে বাস করছে। ফলে সেই আবাসনগুলি ভেঙে সেখানে নতুন আবাসন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই রেলকর্তা বলেন, “জীর্ণ আবাসনগুলি দখল হয়ে রয়েছে। কিন্তু, সেখানে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার নৈতিক দায় রেলের পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয়। রেলের জমিতে গড়ে ওঠা বস্তির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। তাই পরিত্যক্ত আবাসনগুলি ভেঙে ফেলার পরের ধাপে ঝুপড়ি ভাঙার নির্দেশ মিলেছে উপর মহল থেকে।”

বস্তি উচ্ছেদের আশঙ্কা ঘনীভূত হতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তৎপরতা। রেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করেছে তৃণমূল। বস্তুত, আদ্রার দক্ষিণ ও উত্তর সেটেলমেন্ট এলাকায় মালাকার বস্তি, জ্যোতি মোড়, চিলড্রেন পার্ক, পাঁচ নম্বর ইলেকট্রিক সাবস্টেশন এলাকা, বারোকুলি, গোয়ালাপট্টি, ছাইগাদা, সেবানগর, পুরনো ছাইগাদার মতো এলাকার বস্তিগুলিতে ঝুপড়ির সংখ্যা প্রায় ১১০০। জনসংখ্যা চার থেকে সাড়ে চার হাজার। ফলে বিজেপি-র হাতে থাকা রেল মন্ত্রক এই বস্তি উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করা মাত্রই আসরে নেমে পড়েছে এ রাজ্যের শাসকদল। সম্প্রতি সেবানগর এলাকায় পরিত্যক্ত আবাসন ভাঙতে গিয়ে সেখানকার বস্তিবাসীদের সক্রিয় বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল রেলকর্মীদের। সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ, পুরোটাই হয়েছিল তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতার ইন্ধনে। তৃণমূলের আদ্রা শহরের নেতা ধনঞ্জয় চৌবে, গোপীনাথ মুখীদের অভিযোগ, “ইতিমধ্যেই রেলের কর্মীরা ঝুপড়ি থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে ন যাওয়ার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। রেল এই সিদ্ধান্তে গৃহহারা হবেন অন্তত চার-সাড়ে চার হাজার মানুষ।” এই অবস্থায় সোমবার হুড়ার প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে ধনঞ্জয়বাবুরা কাশীপুরের বিধায়কের মারফত রেলের জমিতে থাকা বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছেন। ধনঞ্জয়বাবু বলেন, “ওই বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন দেওয়ার উদ্যোগ পঞ্চায়েত সমিতি ও বিধায়ক শুরু করেছেন। সেই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেল বস্তি উচ্ছেদ করতে গেলে আমরা বাধা দেব।”

ঘটনা হল, এই সব বস্তিতে তিন-চার দশক ধরে বাস করে আসছেন এই বাসিন্দারা। তাঁদের ভোটার কার্ডও রয়েছে। এঁরা আবার রেল শহরের বাসিন্দাদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার কাজেই যুক্ত। অনেকেই আদ্রার বাজারের সব্জি বিক্রেতা, কেউ বা রিকশা, ঠেলা চালান। অনেকে স্টেশনে হকারি করেন। বহু মহিলা রেলের কর্মীদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। বস্তি উচ্ছেদ হলে তাঁদের অন্যত্র সরে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে আখেরে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন রেলের কর্মীরাই। বস্তি উচ্ছেদে বাধা দেওয়া তৃণমূল নেতারা তাঁদের দাবির সমর্থনে সামনে আনছে এই বিষয়টিকেও।

বিধায়ক স্বপনবাবুর দাবি, রেল উচ্ছেদ শুরু করার আগে থেকেই আদ্রার রেলের জমিতে ঝুপড়ি করে থাকা বাসিন্দাদের পাকা ঠিকানা দেওয়ায় উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। এই ধরনের সাড়ে নশো পরিবারের তালিকা তৈরি করে তাদের আদ্রার পাশে বেকো ও গগনাবাইদ পঞ্চায়েত এলাকায় পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের দিনই আদ্রায় রেলের জমিতে বাস করা ২৬০ বস্তিবাসীকে বেকো পঞ্চায়েত এলাকায় পাট্টা দেওয়া হয়েছে।” পর্যায়ক্রমে সাড়ে নশো পরিবারকেই ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিধায়ক।

tmc adra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy