Advertisement
E-Paper

শান্তিরামের গ্রামে ফুল পেলেন নেপাল

একসময়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা দলের জন্য লড়াই করতেন। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের কিছু আগে একজন শিবির বদল করেন। তিনি এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তো বটেই রাজ্যের মন্ত্রীও। তিনি শান্তিরাম মাহাতো।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৩
মন্ত্রীর বাড়িতে ভোট চাইতে গেলেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো।

মন্ত্রীর বাড়িতে ভোট চাইতে গেলেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো।

একসময়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা দলের জন্য লড়াই করতেন। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের কিছু আগে একজন শিবির বদল করেন। তিনি এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তো বটেই রাজ্যের মন্ত্রীও। তিনি শান্তিরাম মাহাতো। অন্যজন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো। কংগ্রেসের পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থীও। সেই নেপালবাবুই রবিবার শান্তিরামবাবুর গ্রামে নিজের জন্য ভোট চাইলেন। শান্তিরামবাবুর বাড়িতে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে জলপানও করলেন। ভোটের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল তরজার মধ্যে নেপালবাবুর এ দিন পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড় গ্রামের (শান্তিরামবাবুর বাড়ি) অভিযানই এ দিন জেলার মানুষের কাছে মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল।

এ দিন সকালে কংগ্রেস প্রার্থী নেপালবাবু কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পুরুলিয়া-রাঁচি-বোকারো সড়কের চাষমোড় থেকে মিছিল শুরু করেন। কখনও হেঁটে, কখনও গাড়িতে চলে মিছিল। তাঁর মিছিল গাড়াফুসড় গ্রামে পৌঁছয় বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ। শান্তিদার গ্রামে নেপালদা আসছেন এই খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল সাত সকালেই। তাই গ্রামের লোকজন বিশেষত মহিলারাও অপেক্ষায় ছিলেন নেপালবাবু কখন তাঁদের গ্রামে আসেন। মিছিল গ্রামে ঢুকতেই তাই কেউ তাঁর হাতে লাল সুতো বেঁধে দিলেন, কেউ ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা করলেন। বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এর আগে এই গ্রামে নেপালবাবুকে নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ভোট চাইতে আসতে দেখেননি। তাই কৌতূহল ছিল সারা এলাকাজুড়ে।

গাড়াফুসড় গ্রামে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।

গ্রাম ঘুরে তিনি মাঝপাড়ায় সোজা ওঠেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর বাড়িতে। তখন বাড়িতে মন্ত্রী ছিলেন না। তিনি গিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। বাড়িতে ছিলেন তাঁর ভাইপো মেঘদূত মাহাতো। তিনি নেপালবাবুকে বাড়ির ভিতরে ডেকে এনে বসান। তাঁর কাছে শান্তিরামবাবুর খোঁজ নেন নেপালবাবু। বাড়ির সকলের কুশল সংবাদও নেন। মেঘদূত নেপালবাবুকে প্রণাম করেন। প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত নেপালবাবুকে জল দেন বাড়ির লোকজন। শান্তিরামবাবুর স্ত্রী ছায়ারানিদেবী স্নানে ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গেও নেপালবাবুর দেখা হয়নি। জল খেয়ে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। পরে ছায়ারানিদেবী বলেন, “আমার সঙ্গে দেখা হল না। দেখা হলে অবশ্যই চা-বিস্কুট খাওয়াতাম।”

শান্তিরামবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁর পাড়ায় একটি ছোট পথসভাও করেন নেপালবাবু। কয়েকদিন আগে মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়ার পথে চাষমোড়ে দাঁড়িয়ে শান্তিরামবাবুর বাবা প্রয়াত রামকৃষ্ণ মাহাতোর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়েছিলেন তিনি। এ দিনও সেই প্রয়াত নেতার গ্রামে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আপনারা যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত থাকুন, আমি শুধু এই জেলার উন্নয়নের জন্য শুধু আপনাদের সমর্থন চাইছি। এ বার আমাকে সমর্থন করুন। কেন না এতদিন পুরুলিয়ার কথা সে ভাবে কেউ দিল্লিতে বলেনি।” নেপালবাবুর এই কথার পরে হাততালি দিয়ে উপস্থিত জনতা তাঁকে স্বাগত জানান। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ কুমার মাহাতো, মন্টুচরণ মাহাতোরা বলেন, “নেপালবাবুর কথা শুনেছিলাম। গ্রামে কখনও দেখিনি। তাঁকে দেখতে তাই সবার এত উত্‌সাহ।”

নেপালবাবু গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয় শান্তিরামবাবুর ভাই বিমলকান্ত মাহাতোর সঙ্গে। বিমলবাবু তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের জেলা কমিটির সদস্য। বিমলবাবুর কথায়, “উনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হল।” ধানবাদ থেকে শান্তিরামবাবু ফোনে বলেন, “উনি নিজে তো প্রার্থী। ভোট চাইতে যেতেই পারেন। রাজনৈতিক ভাবে আমরা দুই শিবিরে থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়নি।” গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের পক্ষে পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন শান্তিরাম মাহাতো। সেই যুদ্ধে নেপালবাবুই ছিলেন তাঁর প্রধান সারথী। শান্তিরামবাবু বললেন, “বাড়িতে থাকলে দেখা তো হতই। কথাও হত।”

ছবি: সুজিত মাহাতো।

shantiram mahato nepal mahato congress candidate election campaign purulia prasanta pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy