স্বামীর ‘বিবাহ বহির্ভূত’ সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণে একমাত্র সন্তানকে কীটনাশক খাইয়ে নিজে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলেন বধূ। রবিবার সকালে মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম মণ্ডলপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। বধূ ও তাঁর ছেলেকে অসুস্থ অবস্থায় রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সক ৭ বছরের শিশু ফেরদৌস মণ্ডল ওরফে সাজিদ হোসেনকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। বধূটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। পুলিশ জানায়, রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট থানার ভাঁড়শালা পাড়ার বাসিন্দা সাহিদা বিবির সঙ্গে ৯ বছর আগে দুনিগ্রাম মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা হুমায়ূন কবিরের বিয়ে হয়। বধূটির বড়দা আসরাফুল শেখের অভিযোগ, “জামাইয়ের দাবি মতো পণ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও ব্যবসার জন্য জামাইকে মাঝে মধ্যে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করা হত। কিন্তু বছর তিনেক থেকে মাড়গ্রামের ছোটচৌকির বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে জামাইয়ের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। এই নিয়ে বোনের সঙ্গে জামাইয়ের অশান্তি বাড়তে থাকে। মাঝে মধ্যে বোনকে জামাই মারধরও করত। বোন ছাড়াও তার শ্বশুর, শাশুড়ি জামাইয়ের এই কাজের প্রতিবাদ করছিলেন। দিন পনেরো আগেও আমি জামাইয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি।” কিন্তু জামাইয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বোন এই পথ বেছে নিয়েছে বলে দাবি আশরাফুল শেখের। তিনি বলেন, “আইনের মাধ্যমে যা করার আমরা করব।”
এ দিন রামপুরহাট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, যন্ত্রণায় ছটপট করছেন বছর ৩০-এর বধূ সাহিদা বিবি। পাশে বসে দুই জা। সাহিদা বিবি বললেন, “স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য অশান্তি চলছিল। তাই প্রথমে আমার ছেলেকে আমি কীটনাশক খাইয়ে নিজেও কীটনাশক খাই।” বড় জা জুবেদা বিবি বলে ওঠেন, “তুই যা করলি করলি তাই বলে ছেলেটাকে মেরে ঠিক করলি?” তিনি দাবি করেন, “দেওর এক দিকে, বাড়ির সবাই আর এক দিকে। দেওরের এই কাণ্ডের জন্য শ্বশুর, শাশুড়ি, আমার স্বামী-সহ তাঁর অন্য ভাইরা এবং আমরাও প্রতিবাদ করেছি। আমরা দেওরকে অনেক বুঝিয়েছি। কিছুতেই কাজ হয়নি।” সাহিদার আর এক জা সেমিনা বিবি বলেন, “এ দিন সকালে আমি নিজের ঘরে মুড়ি ভাজছিলাম। সকাল ৬টা নাগাদ দেওরকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখি। সাড়ে ৭টা নাগাদ খবর পাই সাহিদা ও তার ছেলে ঘরে বিছানায় ছটপট করছে। গিয়ে দেখি ছেলেটির মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। পরিবারের অন্য সদস্যরা ধরাধরি করে ঘরের বাইরে এনে দুজনের চোখেমুখে জল দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি।” এক মহিলার সঙ্গে ভাইয়ের যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হুমায়ূনের মেজদা কাবিল শেখ। তিনি বলেন, “অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য ভাইকে বহুবার সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সে কারও কথা শোনেনি বলে এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেল।” ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বাড়িতে নেই। বহুবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy