Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংগঠন বাড়লেও নলহাটি ভাবাচ্ছে শতাব্দীকে

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জেলাপরিষদের ২৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৩, ৫টি পুরসভাও তাদের দখলে। তিনজন দলীয় বিধায়ক রয়েছেন। অথচ নলহাটি এলাকায় ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামতে হল প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। তাঁর কথায়, “এখন যদি মেরামত না করে যাই, তা হলে আর সুযোগ হবে না।” সেই জন্য রবিবার রামপুরহাট থেকে সকাল ৯টায় বেরিয়ে নলহাটি বিধানসভার মধ্যে নলহাটি ১ ব্লকের বানিওড়, পাইকপাড়া, কলিঠা, বড়লা, কুরুমগ্রাম অঞ্চলের গ্রাম ঘুরে ছোট ছোট কর্মিসভা করলেন তিনি।

নলহাটি থানার খয়েরবুনিতে রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নলহাটি থানার খয়েরবুনিতে রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৬
Share: Save:

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জেলাপরিষদের ২৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৩, ৫টি পুরসভাও তাদের দখলে। তিনজন দলীয় বিধায়ক রয়েছেন। অথচ নলহাটি এলাকায় ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামতে হল প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। তাঁর কথায়, “এখন যদি মেরামত না করে যাই, তা হলে আর সুযোগ হবে না।” সেই জন্য রবিবার রামপুরহাট থেকে সকাল ৯টায় বেরিয়ে নলহাটি বিধানসভার মধ্যে নলহাটি ১ ব্লকের বানিওড়, পাইকপাড়া, কলিঠা, বড়লা, কুরুমগ্রাম অঞ্চলের গ্রাম ঘুরে ছোট ছোট কর্মিসভা করলেন তিনি। সভার ফাঁকে শতাব্দী বললেন, “এলাকাগুলিতে সিপিএমের প্রভাব আছে। আমাদের যেখানে ১৬-১৭ টা ভোটার আছে, সেখানে ছোট ছোট কর্মিসভার উপর জোর দিয়ে মানুষের কাছে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। আশা করি আগের থেকে ভাল ফল হবে।”

কিন্তু ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামতে হল কেন?

২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট প্রার্থী শতাব্দী রায় ১১ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ১৫ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব ওঝা তৃতীয় স্থান পায়। সেখানে বামফ্রন্ট প্রার্থী ফব-র দীপক চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের চেয়ে সাড়ে ৭ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কংগ্রেস ৫০০ ভোট তৃণমূলের থেকে বেশি পেয়েছিল। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে কলিঠা পঞ্চায়েতে তণমূল ৪ হাজার ভোটে বামফ্রন্টের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। পাইকপাড়া পঞ্চায়েতে ৭০০, বানিওড় পঞ্চায়েতে ১৯০০, হরিদাসপুর পঞ্চায়েতে ১৭০০ ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল বামফ্রন্টের চেয়ে। বাউটিয়া, কুরুমগ্রাম পঞ্চায়েতেও পিছিয়ে ছিল। শুধুমাত্র বড়লা পঞ্চায়েতে তৃণমূল মাত্র ৫০ ভোটে এগিয়ে ছিল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূল নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির জেলাপরিষদের আসনগুলিতেও জিততে পারেনি। পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসনের মধ্যে ১টি মাত্র আসন পায় তৃণমূল। কংগ্রেস ৬ ও ১৯টি বামেরা পেয়েছে।

তবে মেরামতির কাজ কতটা ঠিকঠাক হল, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, বানিওড় পঞ্চায়েতের বারশর, ভোলা এই গ্রামগুলিতে শতাব্দী রায়কে দেখার জন্য যতটা না মানুষের আগ্রহ ছিল, তার চেয়ে ক্ষোভ বেশি ধরা পড়ল। ভোলা গ্রামের বাসিন্দা মহুবুল শেখ, আতাউল শেখদের ক্ষোভ, “শতাব্দী রায় পাশের গ্রাম গোবিন্দপুরে এলেও আমাদের গ্রামে আগে কোনও দিন আসেননি। আর পঞ্চায়েতে আগে ক্ষমতা থাকলেও কোনও উন্নতি হয়নি।” উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম ছিলিমপুর, ডহরনাঙ্গি গ্রামগুলিতেও। পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক নেতা দেবীলাল সোরেনের নেতৃত্বে এ দিন কয়েকজন আদিবাসী তৃণমূলে যোগ দেন। দেবীলালবাবু প্রার্থীকে বলেন, “আমরা ৩৪ বছর অন্য রাজনৈতিক দলের ভোট করে এসেছি। বুঝেছি গণতন্ত্রের চেয়ে পেটের যন্ত্র আগে। এখানে দীর্ঘদিন পাথর খাদান বন্ধ ছিল। এখন চালু হয়েছে। দেখবেন পাথরশিল্প যেন বন্ধ না হয়। গ্রামের রাস্তাও খুব খারাপ।” প্রর্থী বলেন, “আমি পেট যন্ত্রের চেয়ে হৃদয় যন্ত্র দিয়ে মানুষকে বেশি দেখি। আপনার দাবি নিয়ে ভোটের পর যাবেন। যদি কাজ না হয়, তা হলে আমাকে বলবেন।”

এই সব অভাব-অভিযোগ শোনার পরে শতাব্দী যান বানিওড় পঞ্চায়েতের পুষড়, গোবিন্দপুরে যান। পুষড়ের পরে যান পাইকপাড়া পঞ্চায়েত এলাকায়। সব গ্রামে যে কর্মিসভা করছেন তা নয়। তবে তাঁকে দেখার আবদার মেটাতে গিয়ে প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেল শতাব্দীকে। তিনি বললেন, “২৮ জায়গায় সভা আছে। তার ফাঁকে এই সমস্ত আবদার। আমিও তো মানুষ। তার উপর যা না ঘটছে তার থেকে বেশি লেখা হচ্ছে।” বিরক্তি, অভাব-অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ কতটা হল তা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE