সিপিএম কর্মী খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ৩৫ জনকেই যাবজ্জীবনের সাজা শোনাল সিউড়ি আদালত। মঙ্গলবার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শুভ্রদীপ মিত্র ওই সাজা শুনিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে শেখ সাজমান সাগর ঘোষ হত্যা মামলাতেও অভিযুক্ত।
১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বীরভূমের পাড়ুই থানার খিরুলি গ্রামে এই খুনের ঘটনা ঘটে। ফসল পাহারার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে এই নিয়ে বিবাদের জেরে ওই দিন সকালে নিজের বাড়ির অদূরে গ্রামেরই ৩৭ জনের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছর চল্লিশের জয়নাল আবেদিন। ওই ৩৭ জনের বিরুদ্ধেই রড, টাঙি ও বোমা নিয়ে হামলা করার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ইতিমধ্যে দু’জন মারা গিয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন সিপিএমের কৃষক সভার নেতা ছিলেন।
মঙ্গলবার সাড়ে ৯টার মধ্যে এজলাসে পৌঁছে যান নিহতের ভাই শেখ তহিরুদ্দিন, বোন দিলেরা বেগম ও মেয়ে আজমিরা বেগম। প্রায় সাড়ে ১১টা নাগাদ বিচারক আদালতে পৌঁছন। তার পরেই কোর্ট লকআপে নিয়ে আসা হয় দোষী সাব্যস্ত ৩৫ জনকে। বিচারক শুভ্রদীপ মিত্র জানতে চান, খুনের মামলায় সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন, সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড। তিনি যাবজ্জীবনের সাজা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কারও কিছু বলার আছে? বছর ৩০-এর নুর জামান বলেন, “এটা যখন ঘটেছে আমার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর।” বিচারক জানান, এখন এটা আর বিবেচ্য নয়। উচ্চ আদালতে আবেদন করুন। বাকি সকলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। তার পরেই বিচারক রায় শুনিয়ে নিজের চেয়ার ছেড়ে চলে যান। ২৯ নম্বরে নাম থাকা শেখ সাজমান বলেন, “আমি কোনও দল করি না। জয়নাল আবেদিন খুন ও সাগর ঘোষ হত্যা মামলার কোনওটাতেই আমি জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
দীর্ঘ ১৮ বছর পরে এই রায়ে খুশি নিহতের পরিবার। টিভিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ শোনার পর চশমা তুলে চোখের জল মুছলেন নিহতের স্ত্রী জাহানারা বেগম। তিনি বললেন, “চোখ বন্ধ করলেই ওই দিনের ছবি ভেসে ওঠে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর।” বলতে বলতে ফের চোখের জল মুছলেন তিনি। নিহতের বোন দিলেরা বলেন, “এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। এই নৃশংস খুনের ঘটনায় দোষীদের এমন সাজাই প্রাপ্য ছিল।”