Advertisement
E-Paper

স্বামী মারলেও পাশে দাঁড়াচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী

সংসারে দু’টো বাড়তি টাকার সংস্থান করতেই শিবানী, পানমণি, রাতমণিরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে নেমেছিলেন। কিন্তু মহিলারা একজোট হলে দীর্ঘদিনের কঠিন সমস্যাগুলো টপকানো যে কত সহজ হয়ে যায়, তা এখন তাঁরা বুঝছেন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০০:২৬

সংসারে দু’টো বাড়তি টাকার সংস্থান করতেই শিবানী, পানমণি, রাতমণিরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে নেমেছিলেন। কিন্তু মহিলারা একজোট হলে দীর্ঘদিনের কঠিন সমস্যাগুলো টপকানো যে কত সহজ হয়ে যায়, তা এখন তাঁরা বুঝছেন।

রোজগার করে তাঁরা যেমন স্বনির্ভরতার স্বাদ পেয়েছেন, তেমনই এলাকার কোনও মহিলার সংসারে অশান্তি হলে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে সমাধান করছেন। নিজের হেঁসেল সামলেও পরের উপকার করার তৃপ্তিতে এখন খুশি মানবাজার ২ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার ওই মহিলারা।

স্থানীয় বড়রাঙা গ্রামের শিবানী সিংহ একজন আটপৌরে গৃহবধূ। সংসারে দারিদ্র লেগেই রয়েছে। সামান্য জমিতে যা চাষ হয় তাতে কয়েক মাসের খাবার জোটে। বাকি বছরের ভরসা স্বামীর দিনমজুরির আয়। তাঁর কথায়, একদিন বাড়ির একটা সমস্যা নিয়ে মুখ খোলায় স্বামী গায়ে হাত দিয়েছিল।” তিনি স্থানীয় বিধুচাঁদ মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্য। স্বামীর মার খেয়ে দমে যাননি শিবানী। ঘটনাটি তিনি দলের বাকি সদস্যদের জানান। তাঁরা সবাই শিবানীর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটান। এখন শিবানী বলছেন, “ওই ঘটনার পর থেকে স্বামী আর গায়ে হাত দেয়নি। আমার মতের দাম দেন।”

কুটনি গ্রামের পানমণি বাস্কের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু স্বামী মদ খেয়ে রোজগারের টাকা উড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে উলিটে অশান্তি আর বাড়ে। আর চুপ করে সহ্য না করে তিনি এ বার স্বনির্ভর দলের দ্বারস্থ হয়েছেন। দলবল গিয়ে তাঁর স্বামীকে সংসারে শান্তি আনতে মদ ছাড়তে বলে এসেছে। পানমণিদেবীর আশা, “এ বার হয়তো স্বামী স্বভাব বদলাবে।” ফুলবেড়িয়ার সজনী হেমব্রমের পরিবারেও একই সমস্যা। তিনিও গোষ্ঠীর দ্বারস্থ।

স্বনির্ভর দল গড়ে রোজগারের দিশা পাওয়ার পাশাপাশি এখন নিজেদের অধিকার বা সমস্যা নিয়েও মুখ খুলছেন মহিলা সদস্যেরা। আর এ কাজে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সতীর্থরাই। যেমন এই ব্লকেরই চন্দনপুর গ্রামের এক আদিবাসী মহিলা রাতমণি হাঁসদার স্বামী মারা গিয়েছেন বছর তিনেক আগে। দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই তিনি থাকেন। নাম লিখিয়েছেন স্বনির্ভর দলে। কিন্তু এরপরেই সমস্যা। রাতমণির কথায়, “কিছু করে তো সংসার চালাতে হবে। ছেলে-মেয়েগুলোকে মানুষ করতে হবে। কিন্তু দলের কাজে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানা প্রশ্ন তোলেন। কথাগুলো আমার সম্মানে লাগে।” সঙ্কটে পড়ে তিনি দলের সদস্যদের ঘটনাটি জানান। ওই দলের নেত্রী মৌসুমী হাঁসদার কথায়, “আমরা ওঁর বাড়ির লোকেদের বোঝাই। তারপর থেকে আর বিশেষ সমস্যা হয়নি।’’ রাতমণিদেবী বলেন, “আগে ভেড়া কিনেছিলাম। এখন দল থেকে ঋণ নিয়ে এক জোড়া গরু কিনেছি। অ্যাসবেস্টস কিনেছি, বাড়ি করব।”

স্বনির্ভর দলগুলির সদস্যদের স্বনির্ভরতার দিশা দেখানোর পাশাপাশি তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে যে সংস্থা কাজ করছে তার মুখপাত্র অশোক মাহাতো বলেন, “আমরা লক্ষ করছি বিভিন্ন পরিবারে কিছু সমস্যা রয়েছে। কাউকে পরিবারের লোকজন সন্দেহ করে, কাউকে স্বামী মারধর করে। এ সব না কাটিয়ে উঠতে পারলে তাঁদের পক্ষে মন দিয়ে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে কাজ করা বেশ অসুবিধাজনক। তাই এই সমস্যা থেকে তাঁদের বের করে আনার নিরন্তর চেষ্টা চলছে।” স্থানীয় কুমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কস্তুরী সোরেনের কথায়, “আমরাও দেখছি স্বনির্ভর দলের মহিলারা তাঁদের নিজস্ব সমস্যা নিয়ে দলে আলোচনা করছেন। নিজেরাই তাঁরা কিছুক্ষেত্রে সমাধান করেছেন।” পুরুলিয়া জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব রোহন সিংহ বলছেন, “প্রত্যন্ত গ্রামের স্বনির্ভর দলের মহিলারা অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা পারিবারিক পীড়নের শিকার। কিন্তু তাঁরা যে বৈঠকে নিজেদের সমস্যা নিয়ে মুখ খুলছেন বা দলের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিচ্ছেন এটা সদর্থক দিক।”

prashanta pal purulia selp help group international women's day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy